ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ নেপিডোয় সুচির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সই হওয়ার আশাবাদ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। বুধবার নেপিডোয় উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির মধ্যে বৈঠক হবে। আর তাদের উপস্থিতিতেই উভয় পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা ও নেপিডোর কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য জানায়। নেপিডোয় আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বুধবার থেকে দুই দিনব্যাপী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে সক্ষম হয়। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলে সে অনুসারেই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হবে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বুধবার সকালে নেপিডোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়। প্রথমে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। মিয়ানমার সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিসের মন্ত্রী কিয়াও তিন্ত সোয়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপিডোর গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় চুক্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান। এর আগে বুধবার সকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন মিয়ানমারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এম সফিউর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর (সরকারপ্রধান) আউং সান সুচির কার্যালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বুধবারের বৈঠক শুরুর আগেই নেপিডোয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি এই বৈঠকের ইতিবাচক ফলের বিষয়ে আশাবাদী। সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে। মধ্যাহ্নভোজের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনায় বসেন মিয়ামারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও তিন্ত সোয়ের সঙ্গে। আজ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বসবেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সু চির সঙ্গে। এই বৈঠকটিও হবে মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোয়। আর এই বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার একটি সুনির্দিষ্ট টাইমফ্রেম বা সময়সীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়ে যায়। বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করার জন্য মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর সে অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মধ্যে মঙ্গলবার নেপিডোয় এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের নেত্রী সু চি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হবে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি বুধবারের এই বৈঠকের বিষয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন। আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ এই অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। পশ্চিমা বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন মিয়ানমারের নেত্রী নোবেলবিজয়ী সুচিরও সমালোচনা করে আসছে। তারা বলছে, সুচির সরকার রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে যথেষ্ট কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে গত মাসে আলোচনা শুরু হলেও শর্ত নিয়ে এখনও উভয় পক্ষ কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি । তবে বুধবার দিনভর আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়।
×