ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের অভিমত

’৩০ সালের মধ্যে ব্লু-ইকোনমি থেকে আরও পাঁচ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

’৩০ সালের মধ্যে ব্লু-ইকোনমি থেকে আরও পাঁচ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের সমুদ্র সম্পদের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্র অর্থনীতি থেকে আরও ৫ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সমুদ্র অর্থনীতি (ব্লু-ইকোনমি) বিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইন্টারন্যাশনাল সি বেড অথরিটির সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল লজ ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিট প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব) খুরশেদ আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হওয়ায় সমুদ্র অর্থনীতি দেশের অর্থনীতিতে একটি অসাধারণ ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্র অর্থনীতি থেকে আরও ৫ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ সমুদ্র অর্থনীতি কাজে লাগিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধশালী করছে। তারা পারলে আমাদেরও পারতে হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সমুদ্র অর্থনীতি খাতে উন্নয়ন করতে উপকূলীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সমুদ্র সম্পদ আহরণে অন্যদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ তদারকিতে কীভাবে সমুদ্র সম্পদের উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে ও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সি বেড অথরিটির সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল লজ বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সীমানা রয়েছে। বাংলাদেশকে এই সম্পদের মর্ম বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদের মাধ্যমে একটি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। ড. কামাল আব্দুল নাসের বলেন, সরকার যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে তার মধ্যে এই বিষয়কেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খুরশেদ আলম বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে বলেন, সমুদ্র থেকে আমরা মৎস্য আহরণ করে থাকি। তবে ছোট বোটের কারণে গভীর সমুদ্রে গিয়ে আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। সে কারণে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরার উপযোগী বোট প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ সমুদ্রের মাছ থেকে জ্যাকেট, কসমেটিকও তৈরি করছে। আমাদেরও এসব শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, সমুদ্রপথে বাণিজ্য প্রসারের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তিনি সুপারিশ করেন। সম্মেলনের বিভিন্ন পর্বে বক্তারা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হওয়ার পর অর্থনৈতিক এলাকা সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশের মূল ভূখ-ের সমপরিমাণ সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সমুদ্রের পরিবেশ নষ্ট না করে যথাযথভাবে তা কাজে লাগাতে সম্ভব সব কিছু করতে হবে। তারা আরও বলেন, সমুদ্র সৈকতে প্রাপ্ত বিভিন্ন মূল্যবান খনিজসম্পদ আহরণের সুযোগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ থেকে ইতোমধ্যে খনিজ সম্পদ উত্তোলন শুরু হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা সুনির্দিষ্ট হওয়ায় সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী জাহাজের নিরাপদ চলাচলের সুযোগও বেড়েছে। এই সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, নৌ-পরিবহন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন, শিক্ষা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
×