ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি জৌলুস ম্লান হয়ে পড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ নভেম্বর ২০১৭

মোদি জৌলুস ম্লান হয়ে পড়ছে

পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো। এ বছরের প্রথম দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে এমন এক আবহ ছিল যেন তিনি অজেয়, অপরাজেয়। ইতোমধ্যে ৫ বছর মেয়াদের অর্ধেকেরও বেশি সময় পার করে আসা তাঁর সরকার আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক জনপ্রিয় তাতেও কোন সন্দেহ নেই। গত মার্চ মাসে তাঁর দল বিজেপি দেশের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে যে বিশাল নির্বাচনী বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭০ এর দশকের পর থেকে সেখানে এত ভারসাম্যহীন নির্বাচনী বিজয় আর হয়নি। গত জুলাই মাসে তিনি এমন এক সংস্কার চালু করেছেন যা তাঁর পূর্বসূরিরা গত কয়েক দশক ধরে পারেনি। আর সেটা হলো পণ্য ও সার্ভিস কর বা জিএসটি। ঐ মাসের শেষ দিকে মোদি প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসে এক মিত্র সংগঠনকে বিজেপি শিবিরে ভাগিয়ে নিয়ে এসে আরেক রাজ্য সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বসেন। ২০১৯ সালে ভারতের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির আরেক বিপুল বিজয় অবধারিত এমন একটা ধারণা এই সেদিন পর্যন্ত ছিল। বিজেপি যে জয়লাভ করবে সে ব্যাপারে এখনও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মোদি তাঁর আগের জৌলুস আর ধরে রাখতে পারছেন না, তা হারিয়ে ফেলছেন এবং সেজন্য শুধু তাকেই দায়ী করতে হয়। প্রত্যেক সরকারেরই উত্থান পতন থাকে। তবে মোদির জৌলুস কমে আসার জন্য দায়ী তাঁর সম্প্রতি কিছু অসফলতা বা ব্যর্থতা এবং সেই ব্যর্থতার উৎস আসন বিষয়ের ওপর মূল দৃষ্টি নিবন্ধ না করে তাঁর লোক দেখানো ব্যাপার স্যাপারের ওপর জোর দেয়া। অর্থনীতি দিয়েই শুরু করা যাক্। প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৯.১ শতাংশ এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা অংশত হয়েছে বড় নোট বাতিলের কারণে। এর ফলে বাজারে চালু ৮৬ শতাংশ ব্যাংক নোট রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়। মোদি এটাকে দুর্বৃত্ত চক্র ও কর ফাঁকিবাজদের ওপর প্রচ- আঘাত হিসেবে হাজির করলেও বাস্তবে এতে জনগণের দারুণ দুর্ভোগ হয়। ব্যবসা বাণিজ্যে দারুণ ব্যাঘাত ঘটে। অথচ সুস্পষ্ট কোন সুফল পাওয়া যায়নি। পণ্য ও সার্ভিস কর বা জিএসটি বাস্তবায়িত করা হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোদি বেশ বিজয়ীর ভাব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে জিএসটি একটা উত্তম ও সহজ কর। কিন্তু কিভাবে সেই করকে উত্তম ও সহজ করা যাবে সে ব্যাপারে তিনি তার উপদেষ্টাদের পরামর্শ শোনেননি। এই করের জটিলতা নিয়ে গোটা ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। মোদি এখন তার পরণতি ভোগ করছেন। সরকার সমালোচনার লাগাম টেনে ধরার এবং সমালোচকদের পীড়ন করার মতো যত চেষ্টাই করুক না কেন তাতে কাজ দেবে না। মিডিয়া কোম্পানিগুলো সরকারকে বিব্রত করতে চায় না। সাংবাদিকরা সে ধরনের কিছু করতে গিয়ে অনেক সময় চাকরি হারিয়ে বসেন। সাংবাদিকরা বিজেপির ২ নম্বর ব্যক্তি অমিত শাহর ছেলের মালিকানাধীন কোম্পানির অর্থের উৎস নিয়ে বেয়াড়া প্রশ্ন তুলে মন্ত্রীদের গালি গালাজ ও ভর্ৎসনা শুনেছেন। মামলারও শিকার হয়েছেন। এমনকি মোদির অনুকরণকারী কৌতুকাভিয়েনতারা এয়ারওয়েভ থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। এসবই হলো অশুভ সব দৃষ্টান্ত। দেখা যাচ্ছে নীতি নিয়ে মোদির বিজেপির কোন মাথাব্যথা নেই। দলটি মূল সমস্যাবলী থেকে ভোটারদের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই বরং ব্যস্ত। যেমন ধরুন উত্তর প্রদেশের নয়া সরকার ভবন ও বাসগুলো গেরুয়া রঙে রঞ্জিত করেছে যে রঙটি কিনা হিন্দুধর্মের সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই নয়, দলটি মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই বাধাচ্ছে। মুসলমান সম্রাটের নির্মিত তাজ মহলকে রাজ্যের প্রধান আকর্ষণীয় স্থানগুলোর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। বিজেপির এখন মূল লক্ষ্য হলো নিজস্ব কর্তৃত্বের পরিধি প্রসারিত করা। এ বছরের গোড়ার দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর স্বপদে ইস্তফা দিয়ে ক্ষুদ্র রাজ্য গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হন। দলের প্রয়োজনেই তাকে এটা করতে হয়। অর্থমন্ত্রীকে পরবর্তী ৬ মাস অর্থাৎ যে সময়টা চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা চলছিল সে সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়তি দায়িত্বও পালন করতে হয়। তার মানে গোটা ভারতের মোট লোকসংখ্যার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ যেখানে বাস করে তেমনি একটি রাজ্যে স্রেফ ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে বিজেপি সরকারের প্রতিরক্ষা নীতিকে কান্ডারীবিহীন করে ফেলা হয়েছিল। মোদির জন্য বড় স্বস্তির কারণ ভারতের ২৯টি রাজ্যের ১৮টি তার দল ও জোটের নিয়ন্ত্রণে। শুধু একটি বড় রাজ্য কংগ্রেসের হাতে। তবে অদক্ষতা এবং নীতি নির্ধারণে সামঞ্জস্যহীনতার জন্য সরকারের মাশুল দেয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চলমান ডেস্ক
×