ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসেম সম্মেলনে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন দাবি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বৈঠক আজ, রোহিঙ্গা ফেরাতে চুক্তি হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বৈঠক আজ, রোহিঙ্গা ফেরাতে চুক্তি হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে নেপিডোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ঢাকা-নেপিডোর মধ্যে একটি চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে নেপিডোয় এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ১৩তম সম্মেলন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অবিলম্বে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। নেপিডোয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ২২-২৩ নবেম্বর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ফেরত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে চায়। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হতে পারে। আর সেই চুক্তি অনুসারেই দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হবে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচিও এই বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। এই বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি সমঝোতা হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেছেন। সূত্র জানায়, আসেম সম্মেলন শুরুর দুইদিন আগে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে চেয়েছিল মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, আসেম সম্মেলনের পরেই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। কেননা আসেম সম্মেলনের আগে ওই বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পশ্চিমা চাপ এড়াতে চেয়েছিল মিয়ানমার। মিয়ানমারকে বাংলাদেশ সেই সুযোগ দেয়নি। এখন সম্মেলন শেষে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় দুই দিনব্যাপী আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এই সম্মেলনে ৫৩টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। এশিয়া ও ইউরোপে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সাইড লাইনে একাধিক সেশনে এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তারা আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জোর দাবি তোলেন। সম্মেলনে তারা রাখাইনে সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানান। আসেম সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অংশ নিয়েছেন। তিনি সম্মেলনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে এই সঙ্কট সমাধানে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। নেপিডোয় অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কটকেই প্রাধান্য দিয়েছে। মিয়ানমারের আসেম সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগেই বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোগেরিনি ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আই। এবারের আসেম সম্মেলনে মূল আলোচনার বিষয়ই ছিল রোহিঙ্গা সঙ্কট। কেননা মিয়ানমারের এই সম্মেলন হওয়ায় এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য দেন। তবে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কোন কথা বলেননি। সে কারণে সম্মেলনে অংশ নেয়া অতিথিদের মধ্যে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তবে সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা এই সমস্যার দ্রুত সমাধানও দাবি করেন। আসেম সম্মেলনে অংশ নেয়ার মধ্যে দিয়ে ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রফতানির একক বৃহত্তম বাজার এবং অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। আসেম প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে এশিয়ার দেশসমূহের সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ইউরোপীয় দেশসমূহের সঙ্গে তার স্বার্থ সমুন্নত রাখার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আসেম অন্যান্য দেশসমূহের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করার পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করে যা বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মিয়ানমারে আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও এশিয়া ও ইউরোপের উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান, অভিবাসন সঙ্কট মোকাবেলা, কানেকটিভিটিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আসেমের ভবিষ্যত কাজের পদ্ধতি নির্ধারণসহ জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও বহু পাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়।
×