ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

এগুলো দিয়ে হাসিনাকে নাস্তা করাবে, গ্রেনেড দেবার পরে বলে তাইজুদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৭

এগুলো দিয়ে হাসিনাকে নাস্তা করাবে, গ্রেনেড দেবার পরে বলে তাইজুদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১৩তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, আসামিরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার আগে মাওলানা তাইজউদ্দিন আসামি বিপুর কাছে গ্রেনেড দিয়ে বলে এগুলো শেখ হাসিনাকে হাল্কা নাস্তা করাবে। হামলার আগে লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, কায়কোবাদ, হানিফকে অবহিত করা হয়। পাকিস্তানী নাগরিক মাজেদ ভাটের কাছে পাকিস্তান থেকে টাকা আসত। রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ত্রয়োদশ দিনের মতো যুক্ততর্ক শুনানিতে মামলার অন্যতম আসামি শরিফ সাহিদুল আলম বিপু, আরিফ হাসান সুমনের দেয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীর ভিত্তিতে যুক্তিতর্কে তিনি এসব বিষয় উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক আগামী সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, নিলুফার ইয়াসমিন, মোহাম্মদ আমিন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, পাকিস্তান থেকে মাজেদ ভাটের কাছে টাকা আসত। আসামি গোলাম মোহাম্মদের মাধ্যমে এ টাকা মাজেদ ভাটের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো। মাজেদ ভাটের জঙ্গী কার্যক্রমে রাজনৈতিক শেল্টারের নিশ্চায়তা দেন পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন। তাজ বলেন, তার ভাই মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাইজউদ্দিন তার ভাই পিন্টুর সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে মাজেদ ভাটকে আশ্বস্ত করেন। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচ- শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দও ওই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এ ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগপত্রে ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে ৮৩ জন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরও ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দসহ ২২৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এ সাক্ষ্য শুরু হয়ে শেষ হয় গত ৩০ মে। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। এরপর সব আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়। আসামিপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষীকে জেরা করেছে।
×