ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির চূড়ান্ত খসড়া সুপ্রীমকোর্টে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ নভেম্বর ২০১৭

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির চূড়ান্ত খসড়া সুপ্রীমকোর্টে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির খসড়া চূড়ান্ত করে সুপ্রীমকোর্টকে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, সুপ্রীমকোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেলেই ওই খসড়া অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার রাতে আপীল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের অবসান ঘটেছে। বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে একবার বিধিমালার খসড়া সুপ্রীমকোর্টে জমা দিলেও সম্প্রতি পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সিনহা গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, এ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডেকেছিলেন তিনি। কিন্তু আইনমন্ত্রী সে সময় সুপ্রীমকোর্টে না যাওয়ায় গত ২০ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সিনহা। এরই মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ১০ নবেম্বর ছুটি শেষে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা। এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি গত ৮ অক্টোবর আপীল বিভাগে উঠলে সে সময় ৫ নবেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ৫ নবেম্বর বিষয়টি আদালতে এলে এ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে। এর আগে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলার জট কমিয়ে আনা বিচার বিভাগ ও সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধি এবং অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির বিধান অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির সহায়ক আইন করা হয়েছে। বিচার বিভাগের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এবং শত বছরের পুরনো আইন ও বিধিগুলো সংস্কার করে বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, মামলা জট কমিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারকদেরও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কারণ দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম শত্রু। সেজন্য দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার বিচারকালে বিচারকদের অত্যন্ত সজাগ এবং এ সংক্রান্ত মামলার প্রতিটি পর্যায়ে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়া বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পান এবং আইনী প্রক্রিয়া বা আইনী ব্যবস্থার জটিলতা কিংবা মামলার অযথা দীর্ঘসূত্রতার শিকার না হন তাও নিশ্চিত করতে বলেন আইনমন্ত্রী। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক দুলালও বক্তব্য রাখেন।
×