ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে মাহেলার অবদানের কথা জানালেন

বড় স্বপ্ন দেখছেন তরুণ আরিফুল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ নভেম্বর ২০১৭

বড় স্বপ্ন দেখছেন তরুণ আরিফুল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুর্দান্ত ব্যাট চালালেন। দলকে জেতানো একটি ইনিংস খেললেন। শেষদিকে যখন জয় বেরিয়ে যাচ্ছিল হাতের মুঠো থেকে তখনই বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন ২৫ বছর বয়সী এ তরুণ ব্যাটসম্যান। ৮ নম্বরে নেমে ১৯ বলে ৪৩ রানের হার না মানা টর্নেডো ইনিংসটি খেলার পর সতীর্থরা মাঠে ঢুকে অনেকক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরে, বৃত্তাকারে জড়িয়ে ধরে উল্লাস করেছেন। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যানের এমনটাই করে দেখানোর চিন্তা-ভাবনা করেছেন সবসময়। সেটা হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়েছে তেমনি স্বপ্নটা আরও প্রসারিত হচ্ছে। এমনটাই জানালেন তিনি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে খুব কম উদীয়মান ক্রিকেটারই আলো ছড়াতে পারছেন। তার মধ্যে ব্যাট হাতে অন্যতম আরিফুল মূলত নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছেন কোচ মাহেলা জয়বর্ধনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে। এখন তার স্বপ্ন সুদূরপ্রসারী। শেষ ৩ ওভারে খুলনা টাইটান্সের প্রয়োজন ছিল ৩৬ রানের। হাতে উইকেট মাত্র দুটি। রাজশাহীর কিংসের বিরুদ্ধে প্রায় পরাজয়ের দোরগোড়ায় তখন তার দল। ওই সময়ই ব্যাট হাতে তা-ব শুরু করেন আরিফুল, ছিনিয়ে আনেন জয় ৪ বল বাকি থাকতেই। অথচ ইনিংসের ১৫তম ওভারে এবং ব্যাটিং অর্ডারে ৮ নম্বরে নামতে হয়েছিল তাকে। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা ফিরে গেছেন ততোক্ষণে। একমাত্র আশাই আরিফুলকে নিয়ে। ইনিংসের ১৮তম ওভারে হোসেন আলীর ওপরই সবচেয়ে বড় ঝড় বইয়ে দেন তিনি। ওই ওভারে ২ চার ও ১ ছক্কায় তুলে নেন ১৮ রান। আর এতে করেই ম্যাচ হাতের মুঠোয় চলে আসে খুলনার। শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল। ডোয়াইন স্মিথের করা সেই ওভারের প্রথম বলে ছক্কা এবং দ্বিতীয় বলে চার হাঁকিয়ে দলকে বিজয়ী করেন আরিফুল। তার তা-বে ম্যাচটি ৪ বল আগেই জিতে যায় খুলনা। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ১৯ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন আরিফুল। টি২০ ফরমেটই তার সবচেয়ে প্রিয়। আর কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়বর্ধনে অনেক সহায়ক হয়েছেন তার জন্য। এ বিষয়ে আরিফুল বলেন, ‘আগে আমার ব্যালান্সে সমস্যা ছিল। এবার মাহেলা আমার ব্যালান্স নিয়ে কাজ করেছেন। আমার শরীরের ওজনটা হয়তো পেছনে যেত মারার সময়। এবার সেই জিনিসটি নিয়ে কাজ করেছে মাহেলা। সেটায় হয়তো উপকার হয়েছে।’ এমন জয়ে অবদান রাখার পর যে কোন ব্যাটসম্যানেরই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তবে নিজের ওপর সেই বিশ্বাসটা আগেও ছিল আরিফুলের। প্রায় ১১ বছর হয়ে গেছে প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেট খেলছেন তিনি। ৫০ ওভারে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটও খেলছেন ১০ বছর! মাত্র ২৫ বছর বয়সেই অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এ ব্যাটসম্যান। দলের প্রয়োজনে ওপেনিং থেকে শুরু করে অনেকগুলো পজিশনেই খেলেছেন। ৬৭টি প্রথমশ্রেণীর ম্যাচ খেলে ২৯.৫০ গড়ে ৪ সেঞ্চুরি ও ১৬ হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ২৬৫৫ রান। আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭৬ ম্যাচ খেলে ২৪.৮২ গড়ে ২ সেঞ্চুরি, ৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১৪৪০ রান। টি২০ ক্যারিয়ারেও গত ৭ বছরে ৩৮ ম্যাচ খেলে ২৩.৬৫ গড় ও ১২৫.৭৯ গড়ে করেছেন ৪৭৩ রান। গত ম্যাচেও তিনি ৩৪ এবং আরেক ম্যাচে ৪০ রান করেছিলেন। চলতি আসরে নিশ্চিতভাবেই টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটছে আরিফুলের। ব্যাটিং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও পরের দিকে নামার কারণে তিনি মিডিয়াম পেসারও। প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে ৭৯, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪৭ এবং টি২০ ক্রিকেটে ৩ উইকেট আছে তার ঝুলিতে। তবে এবার ব্যাটিং ভাল হওয়াতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে তার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে ম্যাচ জিতলে আসলে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আবার এ রকম পরিস্থিতিতে পড়লে মনে পড়ে যে এভাবে ম্যাচ জিতিয়েছিলাম। এসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। রান টানা করতে থাকলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।’ এখন স্বপ্নটা আরও বড় হচ্ছে আরিফুলের। সেজন্য খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর অনুপ্রেরণাও কাজে এসেছে তার। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন পেসে অলরাউন্ডারের ঘাটতি। সেটা কি পূরণ করতে পারবেন তিনি? রাস্তাটা আরও দীর্ঘ, পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। সবেমাত্র নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন আরিফুল। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। এ বিষয়ে এ তরুণ বলেন, ‘আসলে আমার যেটা হয়েছে, গত প্রিমিয়ার লীগে আমার ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ছিল না। হয়তো আমি অনেক নিচে ব্যাটিং করেছি। আট-নয়ে করেছি। ওই সময় আসলে বড় রান করা যায় না। আমার চিন্তা-ভাবনা আগেও বড় ছিল। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারিনি। এখন আবার বড় হচ্ছে। রিয়াদ ভাই অনেক সমর্থন দিচ্ছেন। বলেছেন যে শেষ মৌসুমে অনেক খেলা শেষ করে এসেছিস। অপরাজিত ছিলি বেশি, এবারও চিন্তা করবি অপরাজিত থাকার। এটা আমাকে সাহায্য করছে।’
×