ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রাবণী আক্তার সান

শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ নভেম্বর ২০১৭

শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ লড়াই

বৃহস্পতিবার ব্রিসবেন টেস্ট দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ। প্রায় ক্রিকেটের সমান দীর্ঘ এ দ্বৈরথে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কুলীন দুই দেশ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও অতিথি ইংল্যান্ড। বরবারের মতো এবারও এ্যাশেজ ঘিরে রয়েছে বাড়তি উন্মাদনা। একদিকে স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া, অন্যদিকে জো রুটের ইংল্যান্ড। দু’জনই আবার দু’দলের সেরা ব্যাটসম্যান। বিতর্কিত ঘটনার জন্য ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের না থাকা, তুখোড় অস্ট্রেলীয় পেসার মিচেল স্টার্ক কেমন করেন, সাত বছর পর টিম পেইনের দলে জায়গা করে নেয়া এসব বিষয়ই এবারের এ্যাশেজে আলোচিত ঘটনা। গতবার ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-২এ হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে তার আগেরবার অস্ট্রেলিয়ায় এসে ৫-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ইংলিশরা। আর যে গ্যাবা টেস্ট দিয়ে ময়দানি লড়াই শুরু হচ্ছে সেখানে তিন দশকে জয় নেই সফরকারীদের। অনেকেই বলছেন গ্যাবার প্রথম টেস্টটাই সিরিজের গতিপথ ঠিক করে দিতে পারে, যেখানে গত তিন দশকে জয় নেই সফরকারীদের। ইংল্যান্ড কোচ বিষয়টাকে সেভাবে দেখছেন না,‘সবচেয়ে বড় কথা প্রস্তুতি। এবার জয়ের বিষয়ে আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সেটা ব্রিসবেন, সিডনি কিংবা মেলবোর্ন হোক। আর মূল লড়াইয়ের আগে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে ছেলেরা বেশ ভাল করেছে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই।’ বলেন বেইলিস। অস্ট্রেলিয়া এসে সিরিজ শুরুর আগে তিনটা প্রস্তুত ম্যাচেই ভাল কেটেছে ইংল্যান্ডের। ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছেন, বোলাররাও একেবারে খারাপ করেননি। আগের সফরে মিচেল জনসন একাই ইংল্যান্ডকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবার আরেক বাঁ-হাতি পেসার মিচেল স্টার্কও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চান। বাউন্সি উইকেটে তাঁকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনাই করতে হবে। ইংলিশ কোচ বলেন, হ্যাঁ স্টার্ক উঁচু মাপের বোলার। বাঁ-হাতিরা সবসময় ডেঞ্জারাস হয়ে থাকে। তবে বিশেষভাবে কাউকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে চাই না। কারণ আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে আপনাকে যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সবচেয়ে বড়, উইকেট যেমনই হোক আপনাকে পরিস্থিতি ও প্রতিপক্ষ বুঝে খেলতে হবে। আমি আশাবাদী।’ স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস এ্যান্ডারসনদের নিয়ে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণও যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তবে একটা বিষয় ব্যাপক আলোচিত। ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মধ্যপথে ব্রিস্টলে পানশালার বাইরে মারমারি বাধিয়ে আপাতত দলের বাইরে বেন স্টোকস। তুখোড় অলরাউন্ডারের অভাব বোধ করবে ইংলিশরা। এবারের এ্যাশেজের আগে এটাই সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। যদিও এ নিয়ে কিছু বলেননি বেইলিস। অধিনায়ক জো রুটের এটা প্রথম এ্যাশেজ। কঠিন পরীক্ষায় উতড়ে যেতে আত্মবিশ্বাসী তিনিও। এজন্য ব্যাটসম্যানদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে বলেও মনে করেন সময়ের অন্যতম সফল এ উইলোবাজ। ব্যাটিংয়ের কথা উঠলে সিরিজে লড়াইটা হবে দুই অধিনায়কের মধ্যেই। কারণ অস্ট্রেলিয়ারও সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ। সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারও হয়ে উঠতে পারেন ভয়ঙ্কর। এই দু-জনকে থামাতে পারলে ভাল কিছু সম্ভব বলেই মনে করেন তারা। বেইলিস বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে ¯িথ-ওয়ার্নার অবশ্যই ফ্যাক্টর। কিন্তু আমি আগেই বলেছি, প্রতিপক্ষের মাঠে আপনি একক কাউকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারবেন না। নিজেদের সামর্থ্যরে সেরটা দিলেই কেবল ভাল কিছু সম্ভব। আমার ছেলেরা সেটাই করতে চায়।’ টেস্ট ক্রিকেটের সমান পুরনো এ্যাশেজের ইতিহাস। র‌্যাঙ্কিং, বাস্তবতা, সামর্থ্য যেমনই হোক, দীর্ঘ সিরিজটা সামনে এলে তাই দু’দেশের ক্রিকেটার থেকে বিশ্লেষক, সবাই নড়েচড়ে বসেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ড সবশেষ এ্যাশেজ জিতে ফিরেছিল সেই ২০১০-২০১১ মৌসুমে। সেই দলের মাত্র চারজন বর্তমান দলে আছেন এ্যালিস্টার কুক, স্টুয়ার্ড ব্রড, জেমস এ্যান্ডারসন আর স্টিভেন ফিন। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারে তাই ডেভিড মালান, জেমস ভিন্সদের মতো নতুনদের দেখা যাবে,‘মালান এবং অন্যরা সবে ক্যারিয়ার শুরু করেছে। ওরা কোন পজিশনে ব্যাট করবে আমি নিশ্চিত নই। তবে মার্ক স্টোনম্যান সম্ভবত ওপেনিং করবে। ইংল্যান্ড একটা অনভিজ্ঞ দল নিয়ে এখানে আসছে। আমার ধারণা ওরা বাউন্সি উইকেটে খুব ভাল করতে পারবে না। আমরা তাদের অনভিজ্ঞতার এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চাই!’ বলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত মাত্র তিন টেস্ট খেলা মার্ক স্টোনম্যানকে কুকের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে দেখা যেতে পারে ওপেনার হিসেবে। মিডল অর্ডার সামলাতে হতে পারে মালান আর ভিন্সের মতো নবীনদের। যাদের দু’জনের ভা-ারে মাত্র ১২টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত বিতর্কে জাড়িয়ে অন্তত প্রথম টেস্টে নেই বেন স্টোকস। সময়ের অন্যতমসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়া অতিথি ইংলিশরা এবার বড় বিপদে পড়বেন বলে মনে করছেন অনেকে। স্বাগতিক তারকা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার তো এ্যাশেজকে ‘যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন। আর অধিনায়ক স্মিথের বাড়তি আত্মবিশ্বাসের কারণ প্রতিপক্ষ শিবিরের এই অনভিজ্ঞতা! তিনি আরও বলেন, ‘ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-সামর্থ্য সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারণা আছে। কুক এবং জো রুট তাদের নির্ভরযোগ্য দুই পারফর্মার, আমাদের মূলত তাদেরকেই আগে নিবৃত্ত করতে হবে।’ ইংল্যান্ড দলের দুই অভিজ্ঞ পেসার জেমস এ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়েও কথা বলেন স্মিথ। তিনি বলেন, ‘যতটা সম্ভব স্বাগতিক দলকে এই বোলিং জুটি থেকে সতর্ক থাকতে হবে’ পুরো ফিটনেস ফিরে পেতে এখনও কাজ করছেন ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস। স্পিনার হিসেবে দলটির প্রথম পছন্দ হবে পার্ট টাইমার মঈন আলী। এ বিষয়ে স্মিথ বলেন, ‘এ্যান্ডারসন এবং ব্রড অভিজ্ঞ। তারা কয়েকবার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। সুতরাং প্রত্যাশাটা তারা জানেন। এ দু’জনের অনেক বেশি ওভার আমাদের সামাল দিতে হবে। সেটা সম্ভব হলেই আমরা সাফল্য পাব।’ গতবার ইংল্যান্ড সফরে এ্যাশেজ ভরাডুবির পর অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটও বেসামাল হয়ে পড়েছিল। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, তারকা পেসার মিচেল জনসনসহ পাঁচ-পাঁচজন খেলোয়াড় একসঙ্গে অবসর নিয়েছিলেন! ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর অবস্থা হয়ে পড়েছিল আরও করুণ। কিন্তু স্মিথের নেতৃত্বে অসিরা এখন বেশ ভালভাবে গুছিয়ে উঠেছে। আর স্টোকস প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের মন্তব্য, ‘স্টোকস শেষ পর্যন্ত খেলবে কিনা, তা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণও নেই। তবে, টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার জন্য, সবসময় সেরা ক্রিকেটারদের খেলানো উচিত। আর আপনার উচিত দলের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়েই আমাদের বিপক্ষে খেলতে আসা।’ টিম পেইনের জায়গা করে নেয়া ভাল চোখে দেখছেন না গ্রেট শেন ওয়ার্ন। তবে ইংল্যান্ডকে পাত্তাই দিচ্ছেন না রিকি পন্টিং। উত্তরসূরিদের ৪-০তে জয় দেখছেন সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক।
×