ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ মামুন রশীদ

বিপিএলে প্রতিভা অন্বেষণ!

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২২ নভেম্বর ২০১৭

বিপিএলে প্রতিভা অন্বেষণ!

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক হিসেবে বিশাল অঙ্কের অর্থ প্রদান করেই শুরু শুধু নয়, পাশাপাশি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে মেলে ধরার দারুণ মঞ্চ সেটি। একেবারেই যারা পর্দার অন্তরালে ছিলেন তারাও এই আইপিএল দিয়ে হয়ে উঠেছেন খ্যাতিমান এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও চলে এসেছেন। কারণ আইপিএলের প্রতিযোগিতা এবং আবেদন দুটোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আমেজ দেয়। সেদিক থেকে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) হয়েছে দারুণ সফল। এরপর আইপিএলের আদলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানও এ ধরনের আসর আয়োজন করছে। যদিও লঙ্কানরা তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ আসর চালাতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এবার নিয়ে চলছে পঞ্চমবারের মতো। তবে আগের চারটি আসর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দল সেভাবে কোন তারকাকে পায়নি। তবে বিপিএল চিনিয়ে দিয়েছিল সাব্বির রহমানের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান, আবু হায়দার রনির মতো পেসারকে। সাব্বির টিকে থাকলেও রনি টিকতে পারেননি। এবার বিপিএল নিয়ে কিছুদিন আগেই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছেন তিনি নতুন মেধার অন্বেষণ করছেন। সেটাই স্বাভাবিক। সস্প্রতি জাতীয় দল আছে পাইপলাইন সঙ্কটে। যে কারণে নিয়মিত যারা খেলছেন তারা চরম ব্যর্থ হলেও সেভাবে কাউকে যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে না। তরুণ ও উদীয়মানদের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দিতেই বিপিএলের মতো আসর। কারণ জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায় থাকেন অনেক ক্রিকেটার যুব দলের হয়ে, একাডেমি, হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াড ও ‘এ’ দলের হয়ে খেলে। কিন্তু জায়গার অভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পান না। তাদেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আমেজ দেয়ার লক্ষ্যেই বিপিএ’র। কারণ এটিই একমাত্র আসর যেখানে প্রতিম্যাচে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশী ক্রিকেটার খেলেন। তাদের সঙ্গে ও বিরুদ্ধে খেলে তরুণদের ক্রিকেট মেধার উন্নতি অবশ্যম্ভাবী। তবে এবার বিপিএলের পঞ্চম আসরে সংখ্যাটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। কারণ প্রতিম্যাচে খেলছেন ৫ বিদেশী ক্রিকেটার। আগের চারটি বিপিএল আসরে প্রতিম্যাচে একটি দলের হয়ে খেলতে পারতেন চার বিদেশী ক্রিকেটার। আর প্রতিবারই দেখা গেছে স্থানীয় ক্রিকেটাররা ব্যাটে-বলের নৈপুণ্যে এগিয়ে থাকতেন। কিন্তু এবার চিত্রটা ভিন্ন। ৫ বিদেশী খেলানোর নিয়ম প্রবর্তনের কারণে দেশী ক্রিকেটাররা প্রায় আড়ালে চলে গেছেন। অথচ দেশের একমাত্র এই টি২০ ফরমেটের ক্রিকেট আসর ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিতে করাই হয়েছিল উদীয়মান ক্রিকেটার খুঁজে বের করার লক্ষ্যে। কিন্তু সেই লক্ষ্যটা এবার চাপাই পড়ে গেছে। কারণ প্রতি দলে ৫ বিদেশী খেলছেনÑ গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাটিং-বোলিং করছেন। সেখানে দেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যান-বোলারদেরই সংগ্রাম করতে হচ্ছে পরস্পরের সঙ্গে একাদশে ঠাঁই করে নিতে। তরুণ, উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় তরুণদের জন্য তো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে ম্যাচ খেলা। তাই অনেক ক্রিকেটারই ৫ বিদেশী খেলানোর নীতিটাকে মেনে নিতে পারছেন না। এবার বিপিএল জাতীয় দলের পাইপ লাইনে আসার মতো কোন তারকা খুঁজে পাওয়া যাবে না? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু অবশ্য সন্ধানে আছেন ভাল কয়েকজন পারফর্মার পাওয়ার আশায়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব দলের ফ্রন্টলাইনে বিদেশী খেলোয়াড়রা আধিপত্য করছে। এই জিনিসটা কমতো যদি আরেকটা দল থাকতো। দল কম থাকায় চাপটা চলে আসছে। কিন্তু সুযোগ পেলে ভাল খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু সব দলেরই ফ্রন্টলাইনে বিদেশীরা খেলছে, সেহেতু দেশী খেলোয়াড়দের জন্য পারফর্ম করা কষ্টকর। তাদের খুব পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’ আশাহত হতে নারাজ সাবেক এ ক্রিকেটার। কারণ বিপিএল শেষ হতে এখনও অনেক দেরি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা যদি এই টুর্নামেন্ট থেকে দুই/তিনজন ভাল পারফর্মার পাই, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। একেকটা দল ১২টা করে ম্যাচ পাবে। এখন পর্যন্ত তিনটা করে খেলা হয়ে গেছে। আমার মনে হয় যে, অন্তত ৭০ ভাগ ম্যাচ শেষ না হলে পারফর্ম মূল্যায়ন করতে পারবেন না।’ অবশ্য চলতি বিপিএলে বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার ইতোমধ্যেই নজর কাড়তে পেরেছেন। এর মধ্যে পুনরায় আবু হায়দার রনি, আবু জায়েদ রাহীর মতো দুই পেসার এবং ব্যাটিংয়ে সাবেক অনুর্ধ-১৯ দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন। এছাড়া তরুণ পেসার হোসেন আলী এবং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান নজর কেড়েছেন। গত বিপিএলে ওপেনিং ব্যাটসম্যান মেহেদী মারুফ চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে মারদাঙ্গা মনোভাবের ব্যাটিং করে। শীর্ষ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় তিন নম্বরে থেকে তিনি জাতীয় দলের ক্যাম্পেও সুযোগ করে নিয়েছিলেন, এমনকি নিউজিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলের সঙ্গেও ছিলেন। সেই মারুফ এবার একেবারেই ম্লান। চলতি আসরে যে কয়জনকে জ্বলে উঠতে দেখা যাচ্ছে সেটাও খুব বেশি আহামরি কিছু নয় এবং পরিমাণটা বেশি নয়। বিষয়টি উপলব্ধি করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। বিশেষ করে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল ৫ বিদেশী খেলানোর নীতি গড়ে এখন বিতর্কের মুখে পড়ে ভিন্ন পথে এগোনোর পরিকল্পনা করছে। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এখনও নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এজন্য ভবিষ্যত প্রতিভা তৈরি ও টি২০ স্পেশালিস্ট তৈরির জন্য আরও বেশি এ ফরমেটে খেলা জরুরী। তাই আরেকটি টুর্নামেন্ট অচিরেই চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। যেখানে শুধুই প্রতিনিধিত্ব থাকবে দেশী ক্রিকেটারদের। অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোতেও এমন টি২০ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। ভারতেও অঞ্চলভিত্তিক টি২০ ক্রিকেট আসর হয়ে থাকে যেখানে শুধুই দেশের ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণ করেন। অনেক রাজ্যে আলাদা টি২০ টুর্নামেন্টও আয়োজন হয়। ইংল্যান্ডেও আছে এমন টি২০ আসর। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শুধু বিপিএল ছাড়া আর কোন টি২০ টুর্নামেন্ট খেলেন না। এ কারণেই আন্তর্জাতিক টি২০ আসরে বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। তাই অঞ্চলভিত্তিক টি২০ আসর করার চিন্তা বিসিবির। এ বিষয়ে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘একটা ব্যাপার আমরা চিন্তা করছিলাম, স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স বাড়ানো নিয়ে। আমরা ভেবেছি, বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের অধীনেই আরেকটি টি২০ টুর্নামেন্ট আয়োজন করব শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। হয়তো চার-পাঁচটি দল থাকবে। এই টুর্নামেন্ট ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক হবে না, বিসিএলের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম দিয়ে হবে। আমরা চাই, বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটাররা লড়িয়ে মনোভাবটা যেন গড়তে পারে।’ অবশ্য কবে থেকে এই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হবে সেটা এখনও ঠিক হয়নি। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অংশ নিতে পারবেন এমন একটি সময় নির্ধারণ করেই আয়োজন করা হবে টুর্নামেন্টটি। মল্লিক বলেন, ‘শুধু প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বোর্ড সভাপতি সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। ৫-৭ দিনের টুর্নামেন্ট হবে। টুর্নামেন্টটি করতে হবে বিপিএলের আগে এবং আমাদের জাতীয় দলের সূচী দেখে, যখন ওদের পাওয়া যাবে।’
×