ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক কলেজের অধ্যক্ষ, অন্য কলেজের লাইব্রেরিয়ান

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ নভেম্বর ২০১৭

এক কলেজের অধ্যক্ষ, অন্য কলেজের লাইব্রেরিয়ান

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ আসাদুজ্জামান মোহন। তিনি একাধারে আখড়াখোলা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে সাতক্ষীরা ছফুরন্নেছা কলেজের এমপিওভুক্ত লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেন। এই মোহনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর, জাতীয় পতাকা অবমাননা, বোমা হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ মামলার চার্জশীট রয়েছে। আদালতে মামলা বিচারাধিন হলেও তাকে সাসপেন্ড করেনি কোন কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ। জামায়াত সমর্থক ও জামায়াতের অর্থযোগানদাতার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কলেজে চাকরি দেয়ার নামে একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে তাদের কলেজ থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দফতরে। এই নানা অভিযোগে জড়িত থাকার ঘটনায় অধ্যক্ষের বিচার দাবিতে সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন দফতরে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। তবে অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান মোহন তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাগুলো প্রায় মিটিয়ে ফেলেছি। পারিবারিক বিরোধ থেকে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এমন দাবি করে তিনি এই প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য উপদেশ দেন। আসাদুজ্জামান মোহনের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রথম অভিযোগ জমা হয় ২০১১ সালে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। কলেজের নামে কেনা জমি তিনি নিজ নামে রেকর্ড করে বোর্ডে অন্য দলিল জমা দেন বলে অভিযোগ। ১৩ সালে জামায়াত শিবিরের সহিংসতার তিনি হয়ে উঠেন বেপরোয়া। জালাও পোড়াও, সরকারী সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে নাশকতার মামলার আসামি হন তিনি। কলেজে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর মামলায় কলেজ অধ্যক্ষকে প্রধান আসামি করে জি/আর ৮৫৬ নং মামলা করেন প্রভাষক শাহানারা খাতুন সানি। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়। শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত রিপোর্ট বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ছবি কলেজে অধ্যক্ষের টেবিলের নিচে ভাংচুর অবস্থায় পাওয়া যায়। বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ বোমা হামলা মামলায় তিনি ১ নম্বর আসামি। মামলা নং জি আর ১০১৩/১৩। চাকরি দেয়ার নাম করে ১ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। মামলা নং সি/ আর ২২৭/১১। ইভটিজিং মামলা আছে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা নং ৪৩২। হুমায়ুন কবির বাবলুকে বোমা মেরে হুমকি দেয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় মামলা নং নন জি আর ২৪/১৫। সবকয়টি মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কিভাবে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং এমপিওভুক্ত কলেজের লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করছেন এ বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। এদিকে জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া অভিযোগে সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। দেবনগর গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়ুন কবির বাবলু মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, আখড়াখোলা আইডিয়াল কলেজটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজে প্রথম থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন আছাদুজ্জামান মোহন। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর তিনি নানা রকম অনিয়মনে জড়িয়ে পড়েন। কলেজের টাকায় জমি কিনে তিনি নিজের নামে রেজস্ট্রি করে নেন। কলেজের ১০০ শতক জমি কিনে তিনি সাড়ে ১৬ শতক জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। শুধু তাই না সাব রেজিস্ট্রারের সিল সই নকল করে ভুয়া দলিল তৈরি করে যশোর শিক্ষা বোর্ডে জমা দেন। এসব অনিয়মের কারণে যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান বরাবর এলাকাবাসীর পক্ষে তাকে অপসারণের জন্য দরখাস্ত করা হয়। তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দোষীসাবস্ত প্রমাণ হওয়ায় তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সভাপতি বরাবর চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারে পছন্দের সভাপতি নিয়োগের পর পরই নাশকতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামিকে পুনরায় কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি এলাকাবাসী এই জামায়াত সংশ্লিষ্ট নাশকতার মামলার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েছেন।
×