ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা নির্যাতন বর্ণবাদী যুগের সঙ্গে তুলনীয় ॥ এ্যামনেস্টি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নির্যাতন বর্ণবাদী যুগের সঙ্গে তুলনীয় ॥ এ্যামনেস্টি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গলবার এই মর্মে অভিযোগ করেছে যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের শ্বাসরুদ্ধকর নিয়ন্ত্রণ ‘বর্ণবাদী’ আচরণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। খবর এএফপির। সম্প্রতি বাংলাদেশে ৬ লাখ ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয় নেয়ার মূল কারণ তদন্ত করতে গিয়ে এ্যামনেস্টির কাছে এ তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক শ’ পাতার এক তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কিভাবে বহু বছরের সুপরিকল্পিত নির্যাতন বর্তমান সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে। দুই বছরের গবেষণালব্ধ এ তদন্ত প্রতিবেদন বর্ণবাদী আচরণের ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ্যামনেস্টির এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মদদে নিবর্তন ও নির্যাতনমূলক ব্যবস্থায় প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই দেশে রোহিঙ্গাদের কার্যত একঘরে করে রাখা হয়। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদীদের যেমন ‘ঘেটোর’ মতো ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হতো রোহিঙ্গাদের অবস্থা ছিল তেমনি শোচনীয়। এ্যামনেস্টি গবেষণা দফতরের সিনিয়র ডিরেক্টর এ্যানা, নিস্টেট বলেছেন, রাখাইন রাজ্যটি অপরাধ কর্মকা-ের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র এবং গত তিন মাসের নির্মম সামরিক সহিংসতার ২৫ বছর আগেই এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের অন্য জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের মাধ্যমে ভীতিকর ও অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়েছিল। সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘৃণা বিস্তারের সূচনা হয় ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। এই নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মিয়ানমারের তৎকালীন সামরিক জান্তা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণ করে এবং তারা রাষ্ট্রহীন এক উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এ্যামনেস্টি জানায়, এই বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইনের পর মিয়ানমার সরকার তাদের পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদের জন্য প্রচার করতে থাকে যে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী। গায়ের রং কালো বলে তারা রোহিঙ্গাদের ‘কালার’ বলে ডাকত। সরকার তাদের বক্তব্য সমর্থন ও ঘৃণা ব্যাপকভাবে উস্কে দেয়ার জন্য উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু ও মগ যুবসমাজকে কাজে লাগায়। তারা রোহিঙ্গাদের ‘সাপের চেয়ে হিংস্র’ এবং কুকুরের মতো মেরে ফেলা উচিত বলে বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা বিতাড়নের অনেক আগে থেকেই তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কোথাও যেতে হলে তাদের টাকার বিনিময়ে বিশেষ পারমিট সংগ্রহ করতে হতো, যা বিভিন্ন স্থানে চেক পয়েন্ট বা তল্লাশি চৌকিতে প্রদর্শনের পর যেতে দেয়া হতো। এসব পারমিট বা অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ ভ্রমণ করতে চাইলে তাদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও আরও নানা ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হতে হতো। এক রোহিঙ্গা যুবক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালে মধ্য রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর একতরফা হামলা চালানো হয়। ওই সহিংসতায় অনেকে নিহত এবং বহু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর রোহিঙ্গাদের শহর এলাকা থেকে বিতাড়িত করে কাঁটাতারে ঘেরা এক উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে জড়ো করা হয়; যার চারদিকে দিবারাত্র কড়া পাহারায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। এ্যামনেস্টি এটিকে খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত কারাগার বলে বর্ণনা করেছে। এছাড়াও রাখাইন রাজ্যের সর্বত্র মুসলমানদের চিকিৎসাসেবা দেয়া নিষিদ্ধ, সন্তানদের স্কুলে গমন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ওই রাজ্যের অনেক মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
×