ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনার জোড়া মাথার রাবেয়া ও রোকাইয়া ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে

ওরা যমজ বোন, কিন্তু এখনও কেউ কাউকে চোখে দেখেনি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২২ নভেম্বর ২০১৭

ওরা যমজ বোন, কিন্তু এখনও কেউ কাউকে চোখে দেখেনি

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ যমজ দুই বোন। দেখতে একই রকম। দুজনের হাত, পা ও মুখম-ল আলাদা হলেও জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে তারা। দুর্ভাগ্যবশত যমজ দুই বোন কেউ কাউকে এখনও চোখে দেখেনি। কারণ তাদের মাথা যুক্ত। দুজন দুদিকে তাকিয়ে থাকতে সক্ষম। কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখার ক্ষমতা তাদের নেই। বলছি ১৬ মাস বয়সী পাবনার জোড়া লাগানো মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ইসলাম ও রোকাইয়া ইসলামের কথা। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ৬১৩ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢামেকের কেবিনে গিয়ে দেখা গেল, লাল রঙের জামা পরা রাবেয়া ও রোকাইয়া খেলা করছে। দুরন্ত এ দুটি শিশু হাঁটতে শিখলেও মাথা যুক্ত হওয়ায় তারা হাঁটতে পারে না। তবে হাঁটবে বলে বায়না ধরেছে মায়ের কাছে! তাদের মা তাসলিমা শিশু দুটিকে ধরে ধরে হাঁটতে সাহায্য করল। হাঁটি হাঁটি পা পা করে তারা দুজনই চার পায়ে হাঁটল কিছুক্ষণ। এরপর তাদের মা মেঝে থেকে তুলে বিছানায় বসানোর চেষ্টা করলে তারা কান্না শুরু করল। বাড়ন্ত এ শিশু দুটি শুধু হাঁটতে চায় বলে জানালেন মা তাসলিমা। এবার খাবার খাওয়ানোর পালা। দুজনকেই পালাক্রমে খাওয়ানো শুরু করলেন মা। তবে রাবেয়া খেলেও রোকাইয়া খেতে নারাজ। তাদের মা জানালেন, ‘ওদের মাথা জোড়া হলেও দুজনের চাহিদা ভিন্ন। এজন্য মাঝে মাঝে মনে হয় ওদের ব্রেন হয়ত আলাদা। কারণ দুজনের একসঙ্গে খাবারের চাহিদা নেই, সেই সঙ্গে দুজনের বিভিন্ন কর্মকা- এমনকি কথা বলার ভঙ্গিও আলাদা।’ পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাথা জোড়া লাগানো এ দুটি যমজ কন্যাশিশুকে সোমবার সকালে বাবা রফিকুল ইসলাম ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর আগে জোড়া লাগানো দুটি মেয়েশিশুকে গত ২২ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর তাদের ঢামেকে আনা হয়। জোড়া বোনের সুস্থতায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক বোর্ড গঠন করা হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের অবস্থা বোঝা যাবে। রাবেয়া ও রোকাইয়ার বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকরা আগেই তাদের সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাদের মতো করে চেষ্টা করেছেন এতদিন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশানুযায়ী মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে সোমবার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন কেবিনে আছে। আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের জন্য চিকিৎসা বোর্ড গঠন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারপর কী অবস্থা বোঝা যাবে। খুবই জটিল অবস্থায় আছে এ মাথা জোড়া শিশু।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওদের ব্রেন এ জোড়া মাথার সঙ্গে কতটুকু জড়িয়ে আছে সেটি বোঝা যাবে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করার পর। তাদের সুস্থ করে তুলতে নিউরোসার্জনদের দায়িত্ব অপরিসীম। তবে আমরা এখনই বলতে পারছি না, কী করতে পারব বা আদৌ কিছু করা যাবে কি-না। তবে ওদের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক যতজন দরকার মনে হবে, সবাইকে সম্পৃক্ত করা হবে চিকিৎসার জন্য। অস্ত্রোপচারের কথা আমরা এখনও ভাবছি না। কারণ তাদের মস্তিস্ক আলাদা হলেই এটি সম্ভব।’ চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম যমজ এ শিশু দুটির বাবা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রাবেয়া ও রোকাইয়াসহ আমার তিন সন্তান। বড় মেয়ের বয়স ছয় বছর। প্রথম কন্যাসন্তানের পর গত বছর পাবনা শহরের একটি ক্লিনিকে মাথা জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম হয় রাবেয়া-রোকাইয়ার। জন্মের পাঁচ দিন পরই আমরা শিশু দুটিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু চিকিৎসকরা সব সময় অপেক্ষা করতে বলেছেন। পাশাপাশি চিকিৎসা চলেছে। এরপর থেকে এক-দুই মাস পরপরই আমরা ঢাকায় এসে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন শিশুদের অপারেশনের বিষয়ে। এবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলাম ওদের । আশা করি ভাল হয়ে উঠবে আমার মেয়েরা। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়েদের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।’
×