ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম চাঁই পুলিশের জালে?

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২২ নভেম্বর ২০১৭

হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম চাঁই পুলিশের জালে?

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্র সরবরাহকারী হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমান কি পুলিশের জালের মধ্যে আছে? সাগরের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে যশোর থেকে গ্রেফতারের পর তার সম্ভাব্য স্থান জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারি জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারী সাগরের স্ত্রী খাদিজা আক্তারের ভাই নূরুল ইসলাম মারজান পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। মারজান ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর তার বোন খাদিজা আক্তারের সন্ধান পেয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এর পরই পুলিশ দাবি করে আসছে সাগর তাদের জালের মধ্যেই আছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট খাদিজা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকেই সাগরের সম্ভাব্য অবস্থান জানতে পেরেছে বলে জানা গেছে। তাকে আটক করতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে। সাগর ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় আত্মগোপন করে থাকতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আগে বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সাগরের অবস্থান- এমন তথ্য থেকে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে ব্যর্থ হয়। পরে যশোর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। যশোরের পাগলাদহ মালোপাড়ার একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে সাগরের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। খাদিজার কাছ থেকেই সাগরের সম্ভাব্য অবস্থান পুলিশ জানতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছরের ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ন কবীর। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরা হলেনÑ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফ্যাকাল্টির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম, বগুড়ার দুর্ধর্ষ জঙ্গী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, কল্যাণপুরের অভিযান থেকে আটক রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান, নাটোরের সিংড়া থেকে আটক আসলাম হোসাইন মোহন ওরফে আবু জাররা ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আটক সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ এবং অস্ত্র সরবরাহকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। জঙ্গী হামলার পর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সারাদেশে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে জড়িত ৮ জন নিহত হয়। গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর রায়েরবাজারে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নুরুল ইসলাম মারজান। গত বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় তামিম চৌধুরী। তামিম ছিল কানাডীয়-বাংলাদেশী নাগরিক। গত বছরের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে পাঁচ তলা থেকে পড়ে প্রাণ হারায় জঙ্গী সারোয়ার জাহান। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপনগরে এক অভিযানে নিহত হয় মেজর (অব) জাহিদ। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুর অভিযানে নিহত হয় ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তানভীর কাদেরী। গত বছরের ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে নিহত হয় আবু রায়হান তারেক ও আব্দুল্লাহ। গত বছরের ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেকে অভিযানে নিহত হয় ফরিদুল ইসলাম আকাশ। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে সাগর অন্যতম। সাগরই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অস্ত্র ও গ্রেনেড ঢাকায় এনে বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ই-ব্লকের টেনামেন্ট-৩-এর ফ্ল্যাট এ/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয়। নব্য জেএমবির পলাতক সাগরের সম্ভাব্য অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালানোর তথ্য দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এক কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার সঙ্গে এটিএম তাজ উদ্দিন, জোনায়েদ খান, খালিদ, আজাদুল ওরফে কবিরাজ, বাশারুল্লাহ ওরফে বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও রিপনসহ অন্তত ১০/১৫ জন এখনও পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করে থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, আস্থাহীনতার কারণেই সংগঠিত হতে পারছে না নব্য জেএমবি সদস্যরা। নব্য জেএমবিতে প্রচ- অবিশ্বাস থেকেই তাদের মধ্যে অন্তঃকলহ শুরু হয়েছে। এই কলহের কারণে গুলশান হলি আর্টিজান হামলার মামলার অন্যতম পলাতক আসামি হাদিসুর রহমান ওরফে সাগরকে খুঁজে পেলে জেএমবিই তাকে হত্যা করতে পারে। এর আগে পুরনো জেএমবি সদস্যরা তাদের ৫/৭ জনকে মেরে ফেলেছে। এদের মধ্যে নজরুল ছাড়া আর বড় মাপের তেমন কেউ ছিল না। বাকিরা সবাই সাধারণ কর্মী। নব্য জেএমবি বা অন্যরা এখন দল গোছানোর কাজে মনোযোগী। তাদের অপারেশন বা হামলার প্রস্তুতি নেই। এখন তারা মূলত সদস্য রিক্রুট করার কাজে বেশি মনোযোগী। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনার পর থেকে আর জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। একের পর এক পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জঙ্গীরা হয় তো নিহত হয়েছে নয় তো গ্রেফতার হয়েছে কিংবা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পলিয়ে বেড়ানো দুর্ধর্ষ ভয়ঙ্কর জঙ্গী নেতাদের অন্যতম হাদিসুর রহমান সাগর।
×