ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণ দায়মুক্তি চান মুগাবে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২২ নভেম্বর ২০১৭

পূর্ণ দায়মুক্তি চান মুগাবে

জিম্বাবুইয়ের এক বিরোধী নেতা মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। দেশটির পার্লামেন্ট বর্ষীয়ান এই নেতাকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক এলো। এদিকে নিজের ও স্ত্রীর পূর্ণ দায়মুক্তির বিনিময় মুগাবে পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এএফপি ও বিবিসি। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর পূর্ণ দায়মুক্তির বিনিময়ে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যেই দলের নেতৃত্ব থেকে অপসারিত হয়েছেন। জিম্বাাবুইয়ের সাবেক যুদ্ধ ফেরত নেতা ক্রিস মুটসভানগাওয়া বলেছেন, ‘যে যে কাজই করুক না কেন মুগাবের বিদায় দেখার জন্য সবার উচিত এখন হারারেতে (রাজধানী) তাৎক্ষণিকভাবে চলে আসা। এখনই বিক্ষোভ শুরু করা উচিত। আমরা আর এক ঘণ্টাও মুগাবেকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।’ জিম্বাবুইয়ে ওয়ার ভেটেরানস এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মুটসভানগাওয়া ‘ব্লু রুফ’ নামে পরিচিত মুগাবের ব্যক্তিগত প্রাসাদ অভিমুখে পদযাত্রার আহ্বান জানিয়েছেন। জনবিচ্ছিন্ন নেতা যেন দ্রুত ক্ষমতা ছাড়েন সে লক্ষ্যে তিনি জনগণকে দ্রুত রাস্তায় নেমে আসতে বলেছেন। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর মুগাবের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফের সদস্যরা মঙ্গলবার তাকে সরিয়ে দেয়র প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মুটসভানগাওয়া এক সময় মুগাবের জোর সমর্থক থাকলেও তিনি এখন ক্ষমতাচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে সমর্থন করছেন। নানগাগওয়াকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকেই মূলত দেশটিতে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সূত্রপাত হয়েছে। এদিকে নানগাগওয়া মঙ্গলবার মুগাবেকে জনমতের প্রতি সমর্থন দেখিয়ে ক্ষমতা ছাড়ার আহবান জানিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে নানগাগওয়া একথা বলেছেন। তিনি এতে বলেন, ‘জিম্বাবুইয়ের সব মানুষের কথা এখন একটাই এবং আমি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করব জনমতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার জন্য। এতে করে দেশ সামনে এগিয়ে যেতে পারবে এবং তিনিও ইতিহাসে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিয়ে থাকবেন।’ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস পেলেই কেবল দেশে ফিরবেন বলে নানগাগওয়া জানান। চলতি মাসের শুরুর দিকে মুগাবে তাকে বরখাস্ত করার পর নানগাগওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যান। নানগাগওয়াকে এক সময় ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী মনে করা হতো। তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মুগাবে অনুরোধ করেছেন। তবে নানগাগওয়া তার সে অনুরোধ রাখেননি। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছি ততক্ষণ দেশে ফিরছি না। কারণ যেভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আমি যে ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছি তাতে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছি না।’ নানগাগওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে খবরে বলা হলেও তিনি আসলে কোথায় আছেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্ত্রী গ্রেসকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম করে দিতেই মুগাবে নানগাগওয়াকে পদচ্যুত করেন বলে অনেকে মনে করেন। এ ঘটনা দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে। যে কারণে সেনা সদস্যরা সাঁজোয়া বহর নিয়ে রাস্তায় নেমে এসে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং মুগাবেকে গৃহবন্দী করে। নানগাগওয়ার অভিযোগ মুগাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। সোমবার রাতে সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দিতে নানগাগওয়া দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি ও সিনেট পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভোটাভুটি হবে। প্রস্তাবটি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের প্রথম ধাপ হিসেবে উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে এরপর প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করার প্রস্তাব করতে হবে। কমিটির প্রস্তাব পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হলে প্রেসিডেন্ট তার পদ থেকে অপসারিত হবেন। বিরোধীরা অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়েও সফল হয়নি। কিন্তু মুগাবে এখন নিজ দলের কাছে আস্থা হারিয়েছেন। বেশিরভাগ এমপি তার পদত্যাগ চাচ্ছেন। তিনি অপসারিত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
×