ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২২ নভেম্বর ২০১৭

রিপোর্টারের ডায়েরি

অজপাড়াগাঁয়েও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ৭ নবেম্বর, মঙ্গলবার। একটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য সাংবাদিক সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি কাজীপুরে। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ৩০ কিমি দূরে এই কাজীপুর উপজেলা সদরে সিএনজিতে যেতে সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। কালো পিচঢালা ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কে ৫টি পাকা সেতু পেরিয়ে কাজীপুরের যাবার সময় দেখলাম, সড়ক পথের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ছোনগাছা ও ভেওয়ামারা নামক স্থানে গড়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের দৈনন্দিন বাজার। পিপুলবাড়িয়া এবং সীমান্ত বাজার নামক স্থান যেন মিনি শহর। পাড়াগাঁয়ের এই বাজারে রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষের সমাগম থাকে। সরকারের উন্নয়ন অবকাঠামো তো অগুনতি। স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুতসহ সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজকর্মের জন্য নির্মিত নানা অবকাঠামো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ঠিক ২টায় পৌঁছলাম সীমান্ত বাজার সংলগ্ন আইএইচটি ভবন উদ্বোধনস্থলে। কিন্তু ভবন উদ্বোধন হবে বিকেল ৪টায়। সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর সড়কের সীমান্ত বাজার এলাকায় গান্ধাইল ইউনিয়নের গান্ধাইল মৌজায় প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ এম মনসুর আলী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)। বর্ণিল সাজে সাজানো আইএইচটির ভেতরে ঢুকেই মনে হলো অজপাড়াগাঁয়েও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর উঁচু দালানকোঠা। একাডেমিক ভবন ছাত্র এবং ছাত্রী হোস্টেলসহ একাধিক ভবন ছাড়াও আইএইচটিতে আছে খেলার মাঠ, অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক, নাকাচুয়া, কৃষ্ণচুড়া, রাধাচুড়া, কামিনী, করমচা, চীনা বাঁশ, চীনা পাম, এরোভেড়া, বোতল বিলাস, কাঠ গোলাপ, গভীর রাতের সুগন্ধি ফুল, কাঠ বাদামসহ প্রায় পঞ্চাশ রকমের নানা প্রজাতির বনজ, ফল ও ফুলের গাছ। এই গাছগুলো আরও বড় হলে আইএইচটি অনেকটা মিনি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। শহীদ এম মনসুর আলী গান্ধাইল-রতনকান্দি ইউনিয়ন আলী আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। সে সময় এই বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাই স্কুল ছিল। জাতীয় এই নেতার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অজপাড়াগাঁয়ে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইএইচটি স্থাপন করেছেন। শুধু আইএইচটি নয় আরও অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে কাজীপুরে। একদা কাজীপুরের মানুষ সিরাজগঞ্জ শহরে আসতেন এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় হেঁটে গামছায় রুটি বেঁধে। নৌকায় যমুনা নদী দিয়ে। সূর্য উদয়ে রওনা দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছতেন সূর্যাস্তের সময় অথবা তারও পরে। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। যোগ্য নেতৃত্ব ও উন্নয়ন কাজীপুরের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। এমন কথাই বললেন আইএইচটি উদ্বোধনের আগে কিছুটা অবসর সময়ে একটি চায়ের দোকানে গান্ধাইলের কফিল উদ্দিন। স্বশিক্ষিত এই মানুষটি আরও অনেক গল্প শোনালেন। শোনালেন নানা মাত্রিক উন্নয়নের কথা। শহীদ এম মনসুর আলী কেমন মানুষ ছিলেন, মানুষের প্রতি তাঁর কেমন ভালবাসা ছিল, এলাকার মানুষকে ঢাকার বাসায় ভাত খাইয়ে চাকরির নিয়োগপত্র হাতে দিয়ে এক মাসের খরচের টাকাও দিয়েছেন শহীদ এম মনসুর আলী এমন নজিরের কথাও শোনালেন তিনি। সেই জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর কাজীপুর এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর, সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের সন্তান, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী ও তাঁর পরিবারের নেতৃত্বে এখনও কাজীপুরের মানুষ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলকে চিন্তা করে না। অন্তরেও স্থান দেয়নি। শহীদ এম মনসুর আলী উন্নয়নের যে বীজ কাজীপুরে বপন করেছিলেন তা আজও লালন করছেন তাঁর পরিবারের যোগ্য সন্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। একই ধারায় কাজ করছেন মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। তিনি একবার এমপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন এই আসন থেকে। একই পরিবারের তিন প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাজীপুরে। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাইরে এটা এক ইতিহাস। এসব গল্প শুনতে শুনতে উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হলো ঠিক ৪টায়। উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে আয়োজিত জনসভায় নিউজ সংগ্রহ করে তা অফিসে পাঠিয়ে দিলাম ঠিক সাড়ে ৬টা। পরে একই পথে সিরাজগঞ্জ শহরে এলাম শান্ত মনে সাবলীলভাবে। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ টিটি ফাইনালের আগে মহাচাপে! ২২ ডিসেম্বর, সোমবার, ২০১৪। সেদিনের ঘোর যেন আজও কাটেনি। মনে হচ্ছে পুরোটাই স্বপ্ন। আসলে তা নয়, ঘটনাটা সত্যিই ঘটেছিল। আর সেটা ঘটিয়েছিলাম আমি। কিভাবে? টেবিল টেনিসের এককে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তাও আবার সেটা আন্ডারডগ হয়ে, ফেভারিট প্রতিযোগীকে পরাভূত করে। তাহলে আমাকে কি বলা উচিত? ‘জায়ান্ট কিলার’? তিন বছর আগের সেই রাত। ঘড়িতে বাজে ৮টা। স্থান বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির কার্যালয়। সেখানের মিডিয়া রুমে বসে সবে মাত্র অফিসের কাজ শেষ করেছি। অফিস স্টাফ জাহাঙ্গীর এসে তাগাদা দিল, ‘আসেন, আপনার না টিটির ফাইনাল ম্যাচ আছে? প্লেয়ার তো সেই কখন থেকেই এসে বসে আছে!’ শৈশব থেকেই আমার এই এক সমস্যা। পরীক্ষা শুরুর আগে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়ি। টেনশনে অস্থির অস্থির লাগে। বার বার যেতে হয় টয়লেটে! সেদিনও ঠিক একই অবস্থা। অনেকক্ষণ ধরে পেটের মধ্যে যেন ‘কেমন কেমন’ করছিল (এর অবশ্য কারণ আছে। সন্ধ্যায় দুটো আচার কিনে খেয়েছিলাম। কাজেই পড়িমড়ি করে ছুটতে হলো শৌচাগারে। পাক্কা আধঘণ্টা হয়ে গেল। যাহোক, একসময় বের হলাম। কিন্তু অস্বস্তিটা রয়েই গেল। কেননা তখনও পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়নি পেট! কি আর করা। এ অবস্থাতেই অবতীর্ণ হতে হবে লড়াইয়ে। বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির আন্তঃকক্ষ বার্ষিক ক্রীড়া উৎসব। টেবিল টেনিসের (টিটি) এককের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে একটু পরেই। তাতে ফাইনালিস্ট হিসেবে খেলব আমি এবং টিভি-বেতারের বিশিষ্ট ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। প্রতিপক্ষ অচেনা হলে ভয় থাকে যথেষ্টই। সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে এর আগে কখনও খেলিনি। তবে শুনেছি দারুণ প্লেয়ার। দুর্দান্ত খেলেন। হাতে অসাধারণ সব স্ট্রোক। সবচেয়ে বড় কথা, মারতে পারেন ভয়ংকর সব ‘চাপ’। আর আমি? তাঁর তুলনায় নবীন ও অনভিজ্ঞ। খেলি ডিফেন্সিভ স্টাইলে। টেবিলের কোণা-কাঞ্চি ও নেটের ওপর দিয়ে ‘লো শট’ খেলাই আমার সম্বল। সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো চাপ মারতে পারি না। তাহলে আপনারাই বলুন, আমার জেতার কোন চান্স কি আছে? তারপরও ভরসা একটিই। প্রতিপক্ষকে কখনই তার স্টাইলে খেলতে দিই না। এমনভাবে খেলি, তারা যেন খেলতে বাধ্য হয় আমার ছক অনুযায়ী। আমার চেষ্টা থাকে প্রতিপক্ষকে এ্যাঙ্গেল সাইড দিয়ে খেলতে বাধ্য করা এবং কখনই তাকে চাপ মারার সুযোগ না দিয়ে সে ধরনের বল রিটার্ন করা। এই পদ্ধতিতে খেলেই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্যন্ত উঠে এসেছি। হারিয়েছি পাঁচ প্রতিপক্ষ তারা হলেন নীলা হাসান, রাকীবুর রহমান, তানজীম আহমেদ, মাহমুদুন্নবী চঞ্চল এবং শাহজাহান কবীরকে। সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে খেলার আগে বুদ্ধি করে সমিতির অফিস স্টাফ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মিনিট পাঁচেক টিটি অনুশীলন করলাম। একটু পরেই সালাউদ্দিন ভাই খেলার রুমে ঢুকে জানতে চাইলেন, আমিই সেই ফাইনালিস্ট কি-না। গলা শুকিয়ে গেল। কোনমতে বললাম, ‘হ্যাঁ’। তিনি আহ্বান জানালেন মূল লড়াইয়ের আগে যেন তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ প্র্যাকটিস করি। রাজি না হয়ে উপায় নেই। প্র্যাকটিসে তিনি এমন সব শট মারলেন, যা দেখে মাথা ঘুরে গেল আমার। সেসব শট ফেরানোর কোন কায়দাই খুঁজে পেলাম না। ভয়াবহ সব চাপ মারছেন। আমার তো আত্মা শুকিয়ে কাঠ। প্রায় ১০ মিনিটের মতো প্র্যাকটিস করলাম আমরা। এবার সালাউদ্দিন ভাই প্রস্তাব দিলেন চূড়ান্ত দ্বৈরথ শুরু করার জন্য। সম্মতি জানালাম ইচ্ছের বিরুদ্ধে। মনে হচ্ছিল না খেলেই তাঁকে ওয়াকওভার দিয়ে পালিয়ে বাঁচি। কিন্তু তাতে তো পাংচার হয়ে যাবে প্রেস্টিজ। সেটা হতে দেয়া নিশ্চয়ই সমীচীন হবে না। তারপরের কাহিনী আরেকদিন বলব। রুমেল খান [email protected]
×