ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

কাশ্মীরী জঙ্গী মাজেদ ভাট ২১ আগস্টের গ্রেনেড জোগান দেয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২১ নভেম্বর ২০১৭

কাশ্মীরী জঙ্গী মাজেদ ভাট ২১ আগস্টের গ্রেনেড জোগান দেয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ১২তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সোমবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, কাশ্মীরী জঙ্গী মাজেদ ভাট ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড জঙ্গী মাওলানা তাইজউদ্দিন ও মুফতি আব্দুল হান্নানকে সরবরাহ করে। ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্যই ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্য সফল হলে আওয়ামী লীগ টুকরো টুকরো হয়ে যেত এবং এদেশে নির্বিঘ্নে জঙ্গী কার্যক্রম চালানো যেত। দেশে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। মাজেদ ভাট জঙ্গী সংগঠন হিযবুল মুজাহিদের এদেশের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার অর্থ আসত পাকিস্তান থেকে। তাদের সেল্টার প্রশিক্ষণ দিত আইএসআই। পাকিস্তান থেকে চট্টড়গ্রাম বন্দর হয়ে গোলাবারুদ, গ্রেনেড আসত। যা বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতের কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে পাঠানোর চেষ্টা করা হতো এবং এদেশে বিভিন্ন জঙ্গী হামলায় ব্যবহার করা হতো। রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দ্বাদশতম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানিতে মামলার অন্যতম আসামি মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, গোলাম মোহাম্মদ ও মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভির (জঙ্গী হান্নানের ভাই) দেয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীর ভিত্তিতে যুক্তিতর্কে তিনি এ সব বিষয় উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, জঙ্গী মাজেদ ভাট কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদী হিযবুল মুজাহিদীনের সংগঠক। তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকতেন এ জঙ্গী। তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতো জঙ্গী তাইজউদ্দিন (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই)। তাইজউদ্দিনের মাধ্যমে মাজেদ ভাট মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গীদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। মাজেদ ভাট জঙ্গী সংগঠন হিযবুল মুজাহিদের এদেশের সংগঠক হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। তার অর্থ আসত পাকিস্তান থেকে। তাদের শেল্টার প্রশিক্ষণ দিত আইএসআই। পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে গোলাবারূদ, গ্রেনেড আসত। যা বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করা হতো এবং এদেশে বিভিন্ন জঙ্গী হামলায় ব্যবহার করা হতো। মাজেদ ভাট এদেশে জঙ্গী কার্যক্রমকে জোরদার করতে পরিচয় গোপন করে সিরাজগঞ্জের মেয়ে নাহিদ লায়লা কাকনকে (এ মামলার সাক্ষী) বিয়ে করে। মাজেদ ভাটের জঙ্গী কার্যক্রমে রাজনৈতিক শেল্টারের নিশ্চয়তা দেন পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন। তাজ বলেন, তার ভাই মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাইজউদ্দিন তার ভাই পিন্টুর সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে মাজেদ ভাটকে আশ্বস্ত করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে ক্ষতগ্রস্ত হয়। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাবৃন্দও এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এ ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগপত্রে ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে ৮৩ জন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরও ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এ সাক্ষ্য শুরু হয়ে শেষ হয় গত ৩০ মে। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। এরপর সকল আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়। আসাসিপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।
×