ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২১ নভেম্বর ২০১৭

বেনাপোল বন্দরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি শ্রমিকদের

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ স্থলপথে দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসের কাজে শ্রমিকরা ঘাম ঝরালেও আজ পর্যন্ত তারা তাদের প্রাপ্য নায্য অধিকার থেকে রয়েছে বঞ্চিত। বলতে গেলে সামান্যতম মানবিক অধিকারটুকুও তাদের নেই। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও তাদের নেই কোন বিশ্রামস্থল। কখনও ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর, কখনও ফুটপাথে আবার কখনও গাছতলায় শুয়ে-বসে সময় পার করতে হয়। কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় আহত হলেও সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে তাদের জীবনহানিও ঘটে। সংশ্লিষ্টরা আশ্বাসই কেবল দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোন দাবি পূরণ করছেন না। এজন্য এসব হতাশ ও ক্ষুব্ধ এসব খেটে খাওয়া শ্রমিক। শ্রমিকরা বলছেন, সবাই কথা দেয়, কিন্তু কথা রাখে না কেউ। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে বন্দরে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকদের বৈধ দাবিগুলোর বাস্তবায়ন যাতে হয়, সেজন্য তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন। জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ এই বেনাপোল বন্দরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে অপরিসীম। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩ থেকে ৪শ’ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের রফতানি ২শ’ থেকে ২৫০ ট্রাক। এখানে পণ্যের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৪৯ আনসার সদস্য ও পিমা বেসরকারী সংস্থার ৭১ সদস্য। রাজস্ব আদায় ও পণ্য ছাড় করানোর কাজে বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ৫ শতাধিক। এছাড়া বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ছাড় করানোর কাজ করছে ৭৫০টি সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধিরা। রয়েছে সমানসংখ্যক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিও। আরও রয়েছে ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এপথে আমদানি হওয়া পণ্য খালাস করার কাজে প্রায় দুই হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক কাজ করছে। সবকিছু মিলিয়ে এই বন্দরে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। আর লাখো মানুষের জীবন-জীবিকাও এ বন্দরের ওপরই নির্ভরশীল। প্রতিবছর সরকার এ বন্দরের আমদানি পণ্য থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্য সবারই ভাগ্য পরিবর্তন হলেও যারা জীবন বাজি রেখে সরকারের এই রাজস্ব আদায়ে দিন-রাত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটছে, সেই শ্রমিকদের ভাগ্যের সামান্যতম উন্নয়নও হয়নি। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার জন্য যেসব সরঞ্জাম দরকার হয়, তাও তাদের সরবরাহ করা হয় না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক শ্রমিক। অনেকে আবার আহত ও পঙ্গু হয়ে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হয়ে পড়ছে। ৮৯১ শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি জানে আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্দরে এ্যাসিডসহ ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য খালাসে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও তাদের সরবরাহ করা হয় না। কিছুদিন আগে তাদের এক শ্রমিক বন্দরে এ্যাসিডের ড্রাম নামাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় শরীর ঝলসে মারা যায়। এছাড়া অনেক শ্রমিক আছে যারা কাজ করতে গিয়ে আহত ও পঙ্গু হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরাই কেবল তাদের খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু যাদের জন্য এসব শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে সেই বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা ঠিকাদারের লোকজন তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। দাবি পূরণে মন্ত্রী-এমপিরা বারবার অনেক গালভরা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সবই ছিল ফাঁকা বুলি। আজ পর্যন্ত কোন আশ্বাসই বাস্তবায়ন করা হয়নি। বন্দরের ৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলী বলেন, শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য বন্দর অভ্যন্তরে রেস্ট হাউজ, খাওয়ার পানির ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনায় আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু কোনটাই পূরণ হয়নি। বেনাপোল স্থলবন্দর এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সিনিয়ার সহসভাপতি মনির মজুমদার বলেন, আজ শ্রমিকরা পরিশ্রম করছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নে সবাইকে আন্তরিক হয়ে কাজ করতে হবে। বেনাপোল বন্দরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিস লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, শ্রমিকদের এসব দাবির বিষয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানাবেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, আহত শ্রমিকদের অনুদান দেয়ার কোন নিয়ম বন্দরে নাই। তারপরও তারা কিছু কিছু খোঁজখবর নেন। তাদের দাবিগুলো যেহেতু মানবিক তাই এগুলো যাতে বাস্তবায়ন করা হয় সে বিষয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।
×