ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নই বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২১ নভেম্বর ২০১৭

বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নই বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নই বাংলাদেশের বিদ্যুত জ্বালানি খাতের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত কয়েক বছরে দেশের বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে ওঠেনি। সঙ্গত কারণে এখনও কারিগরি সহায়তার জন্য বিদেশ নির্ভরতা কাটছে না। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণকেও পর্যাপ্ত মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। সোমবার বাংলাদেশ জ্বালানি এবং বিদ্যুত গবেষণা কাউন্সিল (ইপিআরসি) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানান। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এখন দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র রয়েছে। আগামী ২০২১ সালে এই ক্ষমতা আরও অন্তত ৫ হাজার মেগাওয়াট বৃদ্ধি পাবে। ক্রমান্বয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু বিকাশমান এই খাতের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ মানবসম্পদ উন্নয়ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাত্র ১০ বছর আগে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এখন তা সাড়ে নয় হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ছোট আকারের বিদ্যুত কেন্দ্র বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেরা নির্মাণ করতে সক্ষম হলেও বড় আকারের কোন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ এমনকি সংস্কার করার মতো দক্ষ মানবসম্পদ দেশে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কেবল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণই নয়, বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার প্রায় সব কাজই করে থাকে দেশের বাইরের প্রকৌশলীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ভূগর্ভস্থ সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটি সারাতে বিদেশী প্রকৌশলীদের ওপর নির্ভর করতে দেখা গেছে। একইভাবে বিদ্যুত কেন্দ্রের ছোটখাটো ত্রুটি সারাতেও বিদেশী প্রকৌশলীদের জন্যই এখনও অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি টেকসই উন্নয়নের অন্তরায়। দেশেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হলে অর্থ এবং সময়ের অপচয় কমানো সম্ভব। একই অবস্থা জ্বালানিখাতেও বিরাজ করছে। নানামুখী বিতর্ক থাকলেও গত কয়েক বছরে দেখা গেছে দেশের অভ্যন্তরে স্থলভাগেই গ্যাস কূপ খুঁড়ছে বিদেশীরা। বাংলাদেশ তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন কোম্পানি (বাপেক্স) কার্যত বসেই রয়েছে। তাদের নিজস্ব গ্যাসকূপও খনন করছে বিদেশী প্রতিষ্ঠান। সঙ্গত কারণেই এ খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বিদ্যুত এবং জ¦ালানি খাতের নতুন উদ্যোগ এবং গবেষণাকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি গবেষণা লব্ধ ফলাফল প্রয়োগে সহায়তা করতে গত বছর থেকে ইপিআরসি যাত্রা শুরু করে। এখন এই প্রতিষ্ঠান গবেষণা উন্নয়নে কাজ করছে। ইপিআরসি সেমিনারে প্রবাসী প্রকৌশলী ড. আরশাদ মনসুর বলেন, এখন বাংলাদশকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বিদ্যুত এবং জ¦ালানি খাতের মানবসম্পদ উন্নয়নে। অন্তত গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাত যতটা সম্প্রসারিত হয়েছে, সেভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তি উন্নয়নে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ড. মনসুর বলছেন সারাবিশ্বে এক বিলিয়ন মানুষ বিদ্যুত ব্যবহারের সুযোগ থেকে এখনও বঞ্চিত। সেই দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা খুব ভাল। সরকার বিদ্যুত জ¦ালানি খাতের উন্নয়নের জন্য জ¦ালানি এবং বিদ্যুত গবেষণা কাউন্সিল, পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট গঠন করা ছাড়াও বাংলদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্য বিশ^বিদ্যালয়ে এসব বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, আমরা চিন্তার বিকাশ চাই। এ জন্য গবেষণার বিকল্প নেই, আর গবেষণায় দীর্ঘ মেয়াদী ভিশন থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কেন আইনাস্টাইন হবে না? অবশ্যই আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই মেধা রাখে। আমরা গবেষণা করে কৃষিতে অনেক মঙ্গল বয়ে এনেছি। বিদ্যুতেও একইভাবে সফলতা অর্জন করতে পারব। এ জন্য সবার মধ্যে তথ্য আর প্রযুক্তির আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। আমাদের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ যুবক। এত বিশাল সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী অনেক কম দেশের রয়েছে। আমাদের এই শক্তি কাজে লাগাতে হবে। ইপিআরসির চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
×