ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের থায়রয়েডের সমস্যায় করণীয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২১ নভেম্বর ২০১৭

শিশুদের থায়রয়েডের সমস্যায় করণীয়

আদনান। ১ বছর ৩ মাস বয়সী রাজধানীর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাবা-মা দু’জনই শিক্ষিত এবং চাকজীবী। ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সে জন্ম গ্রহণ করেছে। জন্মের কিছু দিন পর থেকে তার বৃদ্ধির হার কম বলে বাবা-মার মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রথম সন্তান হবার কারণে তারা একটু অনিশ্চয়তায় ছিল যে, এটি আসলেই কোন সমস্যা কিনা? ৯ মাস বয়সে আদনানকে প্রথম একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তার হাইপোথায়রয়েডিজম বা থায়রয়েড হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা আছে। আর সেটি চিকিৎসা করার জন্য হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা হয়। এমন কিছু অসুখ আছে, যার লক্ষণ জন্মের পর পরই বোঝা যায়। তার মানে, সেই সব অসুখ যদি কোন শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে ডায়াগনসিস করা যায়, তা হলে সেসব অসুখের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। এমনই একটি অসুখ হলো হাইপোথায়রয়েডিজম। আমাদের শরীর থেকে অনেক রকম হরমোন সিক্রিশন হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো থায়রক্সিন হরমোন। এই হরমোনটি থায়রয়েড গ্যান্ড থেকে বেরোয়। থায়রয়েড হরমোন আমাদের শরীরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে। যেমনÑ বুদ্ধির কিবাশ, মস্তিস্কের বৃদ্ধি, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ইত্যাদি। কোন শিশুর জন্মের পরের ২ বছরের মধ্যে তার মস্তিস্কের বিকাশ মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই সময় থায়রয়েড হরমোনের তারতম্য থাকলে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা হতে পারে। হাইপোথায়রয়েডিজম থেকে একবার মস্তিষ্কে বৃদ্ধি ও বিকাশজনিত কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে পরবর্তীকালে এটা ঠিক হবার কোন সম্ভাবনা নেই, অর্থাৎ স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হয়ে যায়। শরীরে থায়রক্সিন হরমোনের ঘাটতি থাকলে বা হরমোনটির কার্যকারীতায় কা*িক্ষত মাত্রায় না হলে বা এন্টিথায়রয়েড এন্টিবডির কারণে হরমোনটির প্রভাব কমে গেলে অসুখটিকে বলা হয় হাইপোথায়রয়েডিজম। সুতরাং শিশু জন্মাবার পর দেরি না করে স্ক্রিনিং টেস্ট (থায়রয়েড ফাংশন টেস্ট) করা উচিত। সাধারণত জন্মের তিন দিন পর আর সাত দিনের মধ্যে নবজাতকের স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয়। টেস্টে থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীনও নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়মিত থায়রয়েড ও হরমোন পরিমাপের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে কোন এক সময় থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। তখন সাধারণত থায়রক্সিন ট্যাবলেট সেবন বন্ধ করে দেয়া হয়। আবার কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে আজীবনই হরমোন সেবন করে যেতে হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত শিশুদের উচ্চতা ও ওজন ঠিকমতো বাড়ে না, সাধারণত খুব দুর্বল প্রকৃতির থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের সমস্যা দেখা যায়, পেট ফুলে যায়, এমনকি চেহারায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। এই ধরনের লক্ষণ চেহারায় ফুটে ওঠা মানে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আর একটু বড় শিশুদের হাইপোথায়রয়েডিজমের সমস্যা হলে বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না, বয়ঃসন্ধি আসতে দেরি হয়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার পরে থায়রয়েড সমস্যা হলে চিকিৎসা করার পর সাধারণত দীর্ঘ স্থায়ী কোন ক্ষতি হয় না। হাইপারথায়রয়েডিজমের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটে। তখন থায়রয়েড গ্রন্থিটির কার্যকারিতা বা হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। হাইপারথায়রয়েডিজম অসুখটি সাধারণত বড়দের বেশি হয়। হাইপারথায়রয়েডিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা ভীষণ অস্থিরতায় ভোগে। অর্থাৎ সব সময় ছটফট করতে থাকে, ঘন ঘন জ্বরও আসতে পারে, কারও কারও ঘন ঘন পায়খানা হয়, অতিরিক্ত ঘাম হয়। একটু বেশি বয়সী শিশু হলে বুক ধড়ফড়ানির কথা বলবে এবং এরা গরম সহ্য করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে এন্টিথায়রয়েড ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। একটু বড় শিশুদের ক্রনিক হাইপোথায়রয়েডের সমস্যায় গলগ- হতে পারে (গলা ফুলে যায়)। হাইপো বা হাইপারথায়রয়েডিজমে আক্রান্ত শিশুদের সঠিক চিকিৎসা করা হলে অন্য সবার মতোই শারীরিক, মানসিক বৃদ্ধি অর্জন ও পরিপূর্ণ-সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। তবে সমস্যা শুরু হবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দেয়া জরুরী। স্থায়ী ক্ষতি হবার আগেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অন্যথাই বাড়ন্ত বয়সের এই সমস্যাটি শিশুটিকে জীবনের প্রতিটি স্তরে ভোগাবে। ডাঃ শাহজাদা সেলিম হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মোবাইল নং ০১৯১৯০০০০২২ Email: [email protected]
×