ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুগাবের ওপর চাপ ॥ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক

অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়ুন

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২০ নভেম্বর ২০১৭

অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়ুন

জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে এ দাবি জানিয়েছে ওয়ার ভেটেরান এ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ক্রিস মুস্তাভাঙওয়া। এদিকে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দলের প্রভাবশালী যুবশাখা রবিবারের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। খবর এএফপি, বিবিসি ও আইওএল অনলাইনের। ওয়ার ভেটেরান এ্যাসোসিয়েশন প্রধান জানান, রবিবারের (গতকাল) মধ্যেই সেনাবাহিনীকে মুগাবের সঙ্গে সবকিছুর ফয়সালা করতে হবে। এখনই উপযুক্ত সময়। পাশাপাশি জানু-পিএফের যুবশাখা জানায়, মুগাবেকে অবশ্যই রবিবারের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরতে হবে। মুগাবের স্ত্রী গ্রেসকে দল থেকে বহিষ্কারেরও দাবি জানানো হয়। যুবশাখা বলে, মুগাবের উচিত এখন বয়োজ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অবসর নেয়া। পদত্যাগের প্রচন্ড- চাপের মুখে থাকা জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সঙ্গে রবিবার সকালে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। এক ক্যাথলিক যাজকের মধ্যস্থতায় বৈঠকটি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনী গ্রহণ করার পর থেকে মুগাবে গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘদিনের নেতাকে ক্ষমতা থেকে এবং দলের মহাসচিবের পদ থেকে অপসারণের আলোচনা করতে ক্ষমতাসীন দল জানু-এফপিও একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে। গত সপ্তাহে মুগাবে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন ন্যানগাওয়াকে বহিষ্কারের পর সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। ৩৭ বছরের শাসনের সরাসরি অবসান উদযাপনে রাজধানী হারারেতে কয়েক হাজার লোক রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস প্রকাশের পর পদত্যাগের দাবিতে রবিবার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মুগাবের ওপর নতুন করে চাপ বাড়ায়। মুগাবের উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে সঙ্কটের জেরে সেনাবাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে এখনো প্রেসিডেন্ট পদ দখল করে আছেন। কিন্তু তাকে সেনাবাহিনীর ও তার নিজের প্রতিষ্ঠিত দল জানু-পিএফের ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার দলই তাকে সরে যেতে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, মুগাবে জিম্বাবুইয়ের প্রতিরক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রথম দুই পক্ষ সরাসরি বৈঠকে করেন। মুগাবের পদত্যাগের আলোচনায় উত্তেজনাকর প্রক্রিয়ায় মধ্যেও সেখানে একটা সম্মানজনক প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল। শনিবারের সমাবেশে যে আনন্দোৎসব দেখা গেছে, ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এমন উৎসব আর কখনও দেখা যায়নি। এদিন হারারের রাস্তায় লাখো মানুষের ঢল নামে। তারা মুগাবের পদত্যাগ দাবিতে গান গাইতে গাইতে এবং সেøাগান দিয়ে সমাবেশে যোগদেন। তারা প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান দাবি করেন। জিম্বাবুইয়ের নাগরিকদের জন্য গত সপ্তাহটি একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হতে ৫২ বছর বয়সী গ্রেস মুগাবের পথ আরও মসৃণ করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন নানগাওয়াকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট। এরপরই দেখা যায়, দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সঙ্কট। শনিবার মুগাবেবিরোধী সমাবেশ ছিল পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা মুগাবের সরকারী বাসভবন স্টেট হাউসে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনা সদস্যরা তাতে বাধা দেয়। এতে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। হারারের উপশহর হাইফিল্ডের যুবক স্যাম সিচেট (৩৮) বলেন, এটা আমার জীবনের সেরা দিন। আমরা মুগাবের পরবর্তী নতুন জীবনের প্রত্যাশায় রয়েছি। হাইফিল্ড জিম্বাবুইয়ের লোকদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা যুদ্ধ সামনে রেখে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে মুগাবে ১৯৮০ সালে এখানেই প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুগাবের বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা না গেলেও পদচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাওয়াকে স্বপদে বহাল করা এবং জানু-পিএফ উইমেন্স লীগের প্রধানের পদ থেকে গ্রেসকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইওএল পত্রিকা জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে মুগাবে তার সম্পদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতা ছাড়ার পর বিচারের হাত থেকে দায়মুক্তি চাইতে পারেন।
×