ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ ফজলুল হক মাস্টার

গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এখনও বাধা অপশক্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২০ নভেম্বর ২০১৭

গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এখনও বাধা অপশক্তি

এই সত্যটি আজ প্রমাণিত যে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কাজে লাগায় ক্ষমতা প্রাপ্তির মোহে বিভোর যারা। এরাই হলো অশুভশক্তি। এদের প্রকৃত চালিকাশক্তি হলো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এদেশের রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে প্রতিক্রিয়াশীলরা অনেক এগিয়ে। তারা ক্ষমতা ভোগ করেছে এবং রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনায় বিভাজনের কাজে এরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। দানবের অশুভ কাজের যেমন পরিমাপ নেই তেমনি প্রতিক্রিয়াশীলদের মন্দ কাজেরও পরিমাপ নেই। এই যে বিগত সময়ে আগুন সন্ত্রাস হলো, আগুনে ঝলসে দেয়া হলো মানুষের দেহ। এমনকি আইনরক্ষাকারী বাহিনীর লোকদের দেহ থেঁতলিয়ে দেয়া হলো এসব কি পরিমাপ যোগ্য শয়তানি? অসম্ভব। বিচিত্র রঙ-ঢঙ্গে এদের আবির্ভাব হয়। জঙ্গিবাদ তার মধ্যে অন্যতম একটি রূপ। যার ভয়াবহতা ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একই সঙ্গে বোমা হামলায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গুলশানের রেস্তরাঁর প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার দৃশ্য আমরা দেখেছি। আমরা যদি মনে করি এরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিবে তা হবে মহাভুল। সাম্প্রদায়িকতার জয় কোন কালেই হয়নি। উগ্রবাদে বিশ্বাসী হিটলারের পরাজয় এক্ষেত্রে অনন্য নজির। যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমা পায়নি। দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান নির্বাসনে। প্রগতিশীলদের গতিশীলতা রুদ্ধ করার কাজ পরিকল্পনা মাফিক চলে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল খালেদা জিয়া। তিনি নারী। রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনায় তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবার পর দেশে ধোয়া তোলা হলো নারী শাসন চলবে না। তারা অযোগ্য। এর মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। কাজেই কাজেই প্রতিক্রিয়াশীলদের চালবাজি সীমাহীন এবং অনেকটাই নির্লজ্জতায় ভরা। মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসানকে মন্ত্রিত্ব দেয়াটা ছিল নির্লজ্জতা। কিন্তু তারা দিয়েছিল। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় নির্দেশে। জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং লোকদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে পঙ্গু করেছে সরকারের সহায়তায়। সুতরাং আমাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, প্রতিক্রিয়াশীলচক্র কারা? প্রতিক্রিয়াশীলরা বিভিন্ন কায়দায় শেকড় গেড়েছে রাষ্ট্রের পরতে পরতে। জিয়াউর রহমানের সময়ে রাজনীতিকরা দু’জন এক হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বলতে পারেনি কথা। তবুও তাকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হয়। বলা হয় তিনিই বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। রাতারাতি এসব করেছে প্রতিক্রিয়াশীলরা। তারা সমর্থন যুগিয়েছে সমস্বরে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাষ্ট্রে তখন ফলাও করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনার মতো মন্দ নেত্রীর দেশে আসার দরকার নেই। দেশ শাসন করল খালেদা নিজামী। দেশ শাসনে ব্যর্থতা তাদের। অথচ শ্রেণী বিশেষ উঠে পড়ে লাগল শেখ হাসিনা যাতে দেশে ফিরতে না পারে। কিন্তু শেষ রক্ষা তাদের হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায়। বিশ্ব পরিম-লের মানবিকতা যতটা ধ্বংস হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবতার, মানবসেবার এক বরেণ্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলতে চাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। মানলাম। কিন্তু মানবিকতার বিপর্যয় আর মানুষের দুর্দশার চেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যের মূল্য বেশি নয়। উগ্রবাদী জঙ্গিরা নারীদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করে আবার ক্রীতদাসীরূপে বিক্রি করে দিচ্ছে। এরপরেও যদি কেউ জঙ্গিতে পা রাখে আইএসকে অনুসরণ করে তবে বলা যায় মানবিকতা আর বিবেক তাদের অনেক ভোঁতা। জঙ্গিদের লাশ কেউ গ্রহণ করেনি, এমনকি যারা জঙ্গি সৃষ্টি করেছে তারাও টুঁ-শব্দটি করেনি। অতঃপর সাম্প্রদায়িকতার পরাজয় অনিবার্য এবং শয়তানির এবং মতলববাজদের বিবেক সবসময় দংশিত হয়। অসত্য আর অমানবিকতাকে বর্জন করাই প্রকৃত শিক্ষা। যারা শয়তান আর অপদেবতাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, যোগান দেয় অর্থ তারা অবশ্যই স্বার্থের জগতে অন্ধ। সরল হৃদয় আর আন্তরিকতাপূর্ণ মানবপ্রেম নিরন্তর সৃজনশীল কাজের দিকে ধাবিত করে। তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতা ন্যায় বিচারে টইটুম্বুর। তাই যদি না হতো তবে ভারতের মতো বাংলাদেশেও সীমান্তপথে বারুদ আর মরিচের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারত। দারুণ আচানক বিষয় হলো বিশ্ব সভ্যতা এখনও মিয়ানমারকে শক্তভাবে কিছু বলেনি। বলা যায় আমাদের সভ্যতা ব্যাধিতে আক্রান্ত। অনেকেই বলে থাকে সাগর-রুনি দম্পতি হত্যার হদিস কেন মিলে না। আমি বলতে চাই জামায়াত যেখানে গোপন হত্যায় জড়িত সেখানে অনেক হত্যারই ক্লো পাওয়া দুষ্কর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তাহের শিবিরের সুপারিশে চাকরি দেয়নি বলে তাকে হত্যা করেছে। মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি মানবিকতা। নিরন্তরই যিনি দেশের মঙ্গল কামনা করেন এবং দেশকে এগিয়ে নিতে শ্রম দেন তাকে তো মূল্যায়ন করতে হবে। ভিত্তিহীন আদর্শহীন আর মিথ্যাচার করবেন খালেদা জিয়া। পুত্র পরিজনদের দুর্নীতি করার সুযোগ দিবেন আমরা যদি তারই স্তুতি গাই তবে কি সুশাসন আর গণতন্ত্রের পথে পা আমরা রাখতে পারব? আনন্দের অফুরন্ত বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে। আমরা সমৃদ্ধির পথে পা রাখছি। তারপরও অনেকে বলতে চাইছে ৫ জানুয়ারিতে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্য যে, বিএনপি ইচ্ছা করেই নির্বাচনে আসেনি। আসলে সামরিক শাসন আর প্রতিক্রিয়াশীলদের রেখে যাওয়া জঞ্জাল দূর করতে সময় লাগবে। কেননা আজও এদেশের অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় না। গাওয়া হয় না জাতীয় সঙ্গীত। ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে মতলববাজদের মুখোস খোলার দায়িত্বে সকলকে এক হতে হবে। তবেই অপদেবতার সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর হবে। জয় হবে বাংলার এবং টেকসই উন্নয়নের পথে দ্রুত আরও এগিয়ে যাব যদি আমরা অভিজ্ঞতায় এবং পর্যবেক্ষণে সত্যটা উপলব্ধি করে গণতন্ত্র কর্ষণে শেখ হাসিনাকে এগিয়ে যেতে সুযোগ করে দেই। ভাবতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল আর সাম্প্রদায়িকরা গণতন্ত্র কর্ষণের জন্য কখনোই শেখ হাসিনার বিকল্প হতে পারে না। [email protected]
×