ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা লিট ফেস্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২০ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকা লিট ফেস্ট

সারাদেশ যখন নবান্নের ঘ্রাণে মাতোয়ারা, তখনই জমে উঠেছিল ঢাকা লিট ফেস্ট। তিন দিনের উৎসবটি শেষ হয়েছে শনিবার। সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি এ্যাডোনিস, কয়েকবার যার নাম উঠেছে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের তালিকায়। ঢাকা লিট ফেস্টের এটি ৭ম আসর। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলা একাডেমির সৌজন্যে জনপ্রিয় এই উৎসবের পরিচালনায় সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় একটি গণমাধ্যম ও বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর প্রিমিয়ার পার্টনার ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ও স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ব্রিটিশ কাউন্সিল। এ থেকে খুব সহজেই ঢাকা লিট ফেস্টের আন্তর্জাতিক চরিত্রটি হৃদয়ঙ্গম করা চলে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, মূলত বিশ্বসাহিত্যের প্রতি আগ্রহী প্রজন্মের জন্য একটি প্লাটফর্ম সৃষ্টি করাই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সে বিবেচনায় এর সাফল্য সম্পর্কে বেশ নিঃসংশয় হওয়া চলে বৈকি। কেননা, এবারের উৎসবটি ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী লেখক-পাঠক, প্রকাশক ও শিল্পীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, চলচ্চিত্র সঙ্গীত তথা সাহিত্যের নানা মাধ্যম নিয়ে চলা অধিবেশনের পাশাপাশি নাচ, লোকগান, লোকসঙ্গীত, বাদ্যযন্ত্রসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাও উপভোগের অবারিত সুযোগ ছিল দেশী-বিদেশী শিল্পী-সাহিত্যিক, অনুরাগী ও দর্শকশ্রোতার। এবারের আসরে অংশ নিয়েছেন ২৪টি দেশের দুই শতাধিক শিল্পী-সাহিত্যক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এতে করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যের আদান-প্রদান-ভাব বিনিময় যেমন হয়েছে, তেমনি গড়ে উঠেছে মৈত্রী ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধ। যে কোন দেশের শিল্প-সাহিত্য-চারুকলা ও সংস্কৃতি পারস্পরিক ভাব বিনিময় ও আদান-প্রদানের মাধ্যমেই সমৃদ্ধ ও আধুনিক হয়ে ওঠে। উপমহাদেশীয় শিল্প-সাহিত্যের কথা বাদ দিলেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রেও কথাটি সমভাবে প্রযোজ্য। অবশ্য কারও কারও মতে, এটি শুধুই এলিটদের উৎসব। এখানে একটি প্রশ্ন অনিবার্যভাবে না উঠে পারে না সাহিত্য কি আমজনতার জন্য, নাকি শুধু এলিট তথা সমাজের প্রাগ্রসর শ্রেণীর জন্য? এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। লিট ফেস্টে উচ্চারিত একটি মন্তব্যও এ ক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে একজন লেখককে অবশ্যই সমাজসচেতন হতে হবে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে ভাল লেখক হওয়া যায় না। লিট ফেস্টের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের লেখকদের সঙ্গে বিদেশের লেখকদের জানাশোনার সুযোগ করে দেয়া এবং বিশ্ব অঙ্গনে বালাদেশের সাহিত্যকে তুলে ধরা। এই উদ্দেশ্যই বা কতটা সফল হচ্ছে? মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রসারতা আন্তর্জাতিক পরিসরে তেমন বেড়েছে কি? আয়োজকদের তথ্যানুযায়ী ৭ম লিট ফেস্টের কয়েকদিনে প্রায় ৩০ হাজার দর্শক-শ্রোতার আনাগোনা ঘটেছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে এও কি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক? তবু বলতে হয়, বিশ্বায়নের যুগে কূপম‍ুলূক হয়ে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বরং ‘দিবে আর নিবে মেলাবে মিলিবে’র সুরে ‘বিশ্বভরা প্রাণে’র সঙ্গে একাত্ম হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
×