ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল সশস্ত্র বাহিনী দিবস

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২০ নভেম্বর ২০১৭

কাল সশস্ত্র বাহিনী  দিবস

ফিরোজ মান্না ॥ সশস্ত্র বাহিনী দিবস আগামীকাল মঙ্গলবার। দিবসটিকে কেন্দ্র করে তিন বাহিনী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হবে। ১৯৭১ সালের ২১ নবেম্বর বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। সেই দিন থেকেই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। আগে তিন বাহিনী ভিন্ন ভিন্ন দিনে দিবসটি পালন করত। ’৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিন বাহিনী দিবসটিকে সম্মিলিতভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে ২১ নবেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। আগে সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ, নৌবাহিনী ১০ ডিসেম্বর ও বিমান বাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবসটি পালন করত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে নেয়াই এই দিবসের মূল তাৎপর্য। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের ৯ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপকভাবে আধুনিকায়ন হয়েছে। বিশেষ করে নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপ দেয়া হয়েছে। এই বাহিনীতে যোগ করা হয়েছে সাবমেরিন। আকাশে যুদ্ধ জাহাজ। আর জলে ছোট বড় শতাধিক জাহাজ সংযোজনের মাধ্যমে বাহিনীটি আক্ষরিক অর্থেই ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই বাহিনী ব্লু ইকোনমিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। একইভাবে উন্নয়ন ঘটেছে সেনা ও বিমান বাহিনীতেও। মূলত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এপিসি, মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান, অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে তিন বাহিনী আধুনিকায়নের বিষয়ে উদাসীনতা দেখায়। বস্তুত এই সময়ে তিন বাহিনীতে তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সস্ত্রশ বাহিনীকে সর্বাধুনিক বাহিনীতে পরিণত করা হবে। বর্তমান সময়ে দেশের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব দরবারে একটি উচ্চ মানে চলে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের বাহিনীরগুলো সমকক্ষ স্থানে চলে যাবে। যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আগামীকাল ২১ নবেম্বর মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হবে। এ জন্য দেশের সব সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা হবে। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেবেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনী প্রধানগণ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ১০ জন সেনা, ১ জন নৌ ও ১ জন বিমান বাহিনী সদস্যকে ২০১৬-২০১৭ সালের শান্তিকালীন পদক দেবেন। ২০১৬-২০১৭ অসামান্য সেবা পদক দেবেন ১০ জন সেনা, ২ জন নৌ ও ২ জন বিমান বাহিনী সদস্যকে। এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিশেষ সহকারী, সামরিক সচিব, প্রেস সচিব ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এ সংবর্ধনায় উল্লেখযোগ্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিত্বগণের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের ¯পীকার, প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, ডেপুটি স্পীকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, সংসদ সদস্য (ঢাকা এলাকার), প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ, বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীগণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-তাদের উত্তরাধিকারীগণ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধানগণ নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-তাদের উত্তরাধিকারীদের অনুরূপ সংবর্ধনা প্রদান করবেন। ঢাকা ছাড়াও সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা এবং রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসসমূহেও সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। এদিকে, দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা, বরিশাল ও চাঁদপুরে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ ২১ নবেম্বর বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা ৩০ পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ২০ নবেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন রাত ৯টায় সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ বেতার ২১ নবেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘দুর্বার’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। ‘অনির্বাণ’ অনুষ্ঠানটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলসমূহে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সম্প্রচারিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকালের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
×