ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী

খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত আড়তদার ফড়িয়া ॥ সিন্ডিকেট দমন করা হয়েছে, গঠন হচ্ছে প্রতিযোগিতা কমিশন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২০ নভেম্বর ২০১৭

 খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত আড়তদার ফড়িয়া ॥ সিন্ডিকেট দমন করা হয়েছে, গঠন হচ্ছে প্রতিযোগিতা কমিশন

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনজীবনে হয়রানি সৃষ্টিকারক অসাধু আড়তদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করতে সরকার সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের সিন্ডিকেট না থাকার ফলে ভোক্তাসাধারণ সহনীয় মূল্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছে। এছাড়া বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করার জন্য সরকার প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করেছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, সরকারের নির্দেশে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আড়তদার ও ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ জানান, চাল আমদানির ওপর কোন সময়ই শুল্ক ছিল না। কৃষকরা চালের ন্যায্যমূল্য পায় না এটা বলে যখন সরকারের কাছে শুল্কারোপের দাবি এলো, তখন আমরা শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ২৮ ভাগ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছিলাম। এতে কৃষক খুশি হয়েছিল, তারা ন্যায্যমূল্য পেয়েছে। এবার হাওড়ে ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় যে টার্গেট ছিল তার থেকে ২০ লাখ টন চাল ঘাটতি দেখা যায়। তিনি বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে এটা বিদেশীরা জানতে পেরে তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর আমরা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেই। প্রথমে ১০ ভাগ হ্রাসের পরও না হওয়ায় আরও ১৬ ভাগ কমিয়ে এখন মাত্র ২ ভাগ শুল্ক রাখা হয়েছে। এখন চালের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, শুল্ক হ্রাসের পর তা কার্যকর করতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। ওই সময় আমদানি করা চালের ট্রাক অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্ডারে অপেক্ষায় রাখে শুল্ক হ্রাস হলেই আমদানি করে লাভবান হবে এ আশায়। এরপর মিডিয়াতে আকস্মিক খবর এলো ভারত চাল রফতানি করবে না বাংলাদেশে। এই একটি মিথ্যা সংবাদে চালের দাম বেড়ে গেল। কিন্তু যারা সুযোগ নিয়ে মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বাস্তবতার নিরিখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। আমরা ৭শ’ মিলিয়ন ডলারের মতো ভারতে রফতানি করি। আর ভারত আমাদের দেশে রফতানি করে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ভারত আমাদের তামাক ও মদ ছাড়া সব পণ্যের ডিউটি ফ্রি কোটা দিয়েছে। তৈরি পোশাকে ভারত আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপরও তারা আমাদের ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে। ভারত আমাদের থেকে তৈরি পোশাকে পিছিয়ে। আমরা তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। একটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলে সেটা কখনও ক্ষতি করে না। চীন আমাদের দেশে ১১ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। আমরা চীনে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার রফতানি করি। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সমান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে জায়গায় আমরা এখনও উন্নীত হইনি। সরকারদলীয় অপর সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানি দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮২ ভাগ। তৈরি পোশাক রফতানির এ ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে নতুন বাজার অনুসন্ধান অন্যতম। তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অনুসন্ধানে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতে মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে জটিলতা নিরসন করা হবে ॥ মেডিক্যাল ছাড়া ভারতের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বাংলাদেশী রোগী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। সেখানে এমপিদের কূটনৈতিক ভিসা নিয়ে গেলে চিকিৎসাসেবা পেতে কোন বাধা থাকার কথা নয়। আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে মেডিক্যাল ভিসা পেতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, ভারতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। সংসদ সদস্য যেহেতু বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, সেহেতু বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। কোন সমস্যা থাকলে তা ভারতীয় হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
×