ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে না, নির্মিত হবে বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২০ নভেম্বর ২০১৭

ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে না, নির্মিত হবে বিদ্যুত কেন্দ্র

রশিদ মামুন ॥ ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে না। নতুন একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুত কেন্দ্রটি হবে ২২৫ মেগাওয়াটের। তবে খনির গ্যাসে ২৫ বছর পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করা যাবে কি না তা আগে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা যদিও বলছেন ভোলায় মজুদ বৃদ্ধির পুরো সুবিধা নিতে পারবে না পিডিবি। বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, ভোলার সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের সংযোগ না থাকায় ভোলার গ্যাস আনা সম্ভব নয়। প্রতিমন্ত্রী জানান, সেখানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নতুন কেন্দ্রের বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। সূত্র জানায়, বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে ভোলায় আর এক বা একাধিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু পিডিবির তরফ থেকে গত বছর মার্চে এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারের পরিবর্তে ভোলায় বেসরকারী খাতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আইপিপির আওতায় দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সচিব মিনা মাসুদউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিদ্যুত সচিবকে গত বছর মার্চে জানানো হয়, সরকারী খাতে ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় তা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও পিডিবির তরফ থেকে ওই সময় জানানো হয়েছিল মূলত জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় তারা আর ভোলায় গ্যাস চালিত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় না। পিডিবির পরামর্শেই সরকার বে সরকারী খাতে আরও একটি কেন্দ্র ভোলায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৮ আগস্ট পিডিবি’র সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি শাপুর্জি পালনজি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘নতুন বিদ্যুত (বাংলাদেশ) লিমিটেডের এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির গ্যাসে ২২০ মেগাওয়াট এবং ডিজেলে ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারবে। ২২ বছর মেয়াদী চুক্তির আওতায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে। গ্যাসে উৎপন্ন বিদ্যুতের মূল্য ৩ দশমিক ৯৮৩০ সেন্ট দেশীয় মুদ্রার ৩ দশমিক ১৯ টাকা এবং ডিজেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের মূল্য ১৬ দশমিক ৯৬২১ সেন্ট বা ১৩ দশমিক ৫৭ টাকা ইউনিট প্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারী যে কোন বিদ্যুত কেন্দ্রই এর থেকে কম দামে বিদ্যুত উৎপাদন করে। গ্যাস পাওয়ার ঠিক কিছু দিন আগেই চুক্তি করায় এখন ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী শাপুর্জি পালনজিকে ঠিকই প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ছেড়ে দিতে হবে ২২ বছরের জন্য। আর ডিজেলে উৎপাদন করতে গেলে আরও বেশি দামে বিদ্যুত কিনতে হবে। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন গ্যাস পাওয়ায় আমরা এখন ভোলায় একটি ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এখন দেখা হচ্ছে ২৫ বছর ধরে কেন্দ্রটির বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস দিতে পারবে কি না পেট্রোবাংলা। একই আয়তনের কেন্দ্র হলে লোকবল এবং খুচরা যন্ত্রাংশর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। গ্যাস পাওয়া যাবে জেনেও ভোলায় কেন আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি করা হলো জানতে চাইলে বলেন, পেট্রোবাংলার তরফ থেকে গ্যাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনার কথা আমাদের জানানো হয়নি। বলা হয়েছিল এখানে তৃতীয়মাত্রার জরিপের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে গ্যাস রয়েছে কি না। ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ মে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। সেখানে থাকা চারটি কূপ থেকে প্রতিদিন ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। এই খনিতে আগে থেকে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বাপেক্স এখানে তৃতীয়মাত্রার জরিপ করে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায়। শুরুতে গ্যাস আবিষ্কারের পর নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা দিলেও পরে সেখান থেকে সরে আসে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। এখন তারা বলছে, ক্ষেত্রটি শাহবাজপুর ক্ষেত্রটিরই সম্প্রসারণ এখানে মজুদের পরিমাণও এক টিসিএফ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ৬ আগস্ট নতুন গ্যাস কূপ খননের উদ্বোধন করেন। ভোলার দুই দিকে তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদী একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভোলা থেকে মূল ভূখন্ডে আসতে অন্তত ৫ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিতে হয়। আর ভোলা থেকে খুলনার গ্যাস গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। এখান থেকে বরিশাল পর্যন্ত গ্যাস আনতেও ৮০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। আর বরিশালে কোন বিতরণ লাইনও নেই। আর সাগর বা খরস্রোতা নদীতে পাইপ লাইন নির্মাণ করা খুব ব্যয়বহুল। এ ধরনের এক কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার। সঙ্গত কারণেই ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনকও নয়। জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ হচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি। এখানে কেউ কিছু জানে না বলে চুক্তি করে ফেলা যৌক্তিক নয়। সরকারী গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র ১ টাকা ৭২ পয়সায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন করে সেখানে বেসরকারী উৎপাদনকারীকে দেয়া হয় ৩ টাকার উপরে। তিনি দাবি করেন একটি গোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে সুবিধা দেয়ার জন্যই এসব চুক্তি করা হয়, না হলে গ্যাসের মজুদ বাড়বে জেনেও এ ধরনের চুক্তি করা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত সরকার ২০১২ সালের পর থেকেই দেশে গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে অনাগ্রহ দেখাতে শুরু করে। সারাদেশের বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও ভোলা এ ক্ষেত্রে এখনও ব্যতিক্রম। ভোলায় বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের সঙ্কট নেই।
×