ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় স্ত্রীর ভাড়াটে কিলারদের হাতে সৌদি প্রবাসী খুন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২০ নভেম্বর ২০১৭

কুমিল্লায় স্ত্রীর ভাড়াটে কিলারদের হাতে সৌদি প্রবাসী খুন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৯ নবেম্বর ॥ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জের ধরে সৌদি প্রবাসী খোরশেদ আলমকে তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের ভাড়াটিয়া খুনীরা বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেয় বলে আদালতে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে ঘাতক ফারুক ও তার বন্ধু শাহীন। রবিবার বিকেলে ঘাতকরা কুমিল্লার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আফসারের আদালতে এ জবানবন্দী দেয়। এর আগে গ্রেফতার হওয়া খোরশেদের স্ত্রী সাজেদা বেগমও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার এসআই খাদেমুল বাহার। জানা যায়, জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার ছুপুয়া গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের ছেলে খোরশেদ আলম (৫৫) দীর্ঘ ২৭-২৮ বছর যাবত সৌদি আরবে চাকরি করে আসছিলেন। এ সময় তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের কাছে তার প্রবাস জীবনের উপার্জিত অর্থ প্রেরণ করেন। সম্প্রতি খোরশেদ আলম সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফেরার পর স্ত্রী সাজেদা বেগমের কাছে টাকার হিসাব চাইলে সে টাকার হিসাব দেয়া নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। এছাড়া খোরশেদ আলম পার্শ্ববর্তী মালিপাড়া গ্রামে শ্বশুরের কাছ থেকে সম্পত্তি ক্রয় করেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের জমি ফেরত দেয়ার জন্য খোরশেদ আলমকে চাপ দিয়ে আসছিল। খোরশেদ আলম তার টাকা ফেরত দিলে সম্পত্তির দলিল ফেরত দেবে বলে জানায়। এ নিয়ে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে খোরশেদ আলমের পারিবারিক কলহ লেগেছিল। এরই মধ্যে গত ৩ নবেম্বর রাতে বাড়ি থেকে প্রবাসী খোরশেদ আলম নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গত ৭ নবেম্বর সকালে বাড়ির অদূরে ছুপুয়া বাজারসংলগ্ন আমেরিকা প্রবাসী রকিব উদ্দিনের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে এলাকাবাসী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে পুকুরপাড়ে মাটিচাপা দেয়া গর্তে ফুলে-ফেঁপে ওঠা অবস্থায় এক ব্যক্তির হাতের কনুই দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। এতে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করে তা নিখোঁজ প্রবাসী খোরশেদ আলমের বলে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে মুর্শিদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোরশেদ আলমের স্ত্রী সাজেদা বেগমকে আটক করে থানায় নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জের ধরে সাজেদা বেগম ভাড়াটিয়া খুনীদের মাধ্যমে তার স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘাতকদের নাম প্রকাশ করে এবং আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এদিকে সাজেদার দেয়া তথ্যানুযায়ী পুলিশ ছুপুয়া গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে ফারুক (২২) ও তার বন্ধু পার্শ্ববর্তী সামেরখিল গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে শাহীনকে (২২) শনিবার রাতে কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। সন্ধ্যায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খাদেমুল বাহার জানান, সাজেদা তার স্বামী খোরশেদ আলমকে হত্যার জন্য ফারুক ও শাহীনের সঙ্গে এক লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিন হাজার টাকা পরিশোধ করে। ৩ নবেম্বর গভীর রাতে ঘরে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রী সাজেদা, ফারুক ও শাহীনসহ চার ঘাতক বালিশচাপা দিয়ে খোরশেদ আলমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুম করে।
×