ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি

জাপান জার্মানি সুইডেন ইইউ পাশে থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২০ নভেম্বর ২০১৭

জাপান জার্মানি সুইডেন ইইউ পাশে থাকবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে জাপান, জার্মান, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রবিবার জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোকোনো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোগেরিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজ নিজ দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার জন্য শনিবার মধ্যরাতে ঢাকায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোকানো। আর রবিবার ঢাকায় পৌঁছান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোগেরিনি। রবিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তারা কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। বিকেলে ঢাকায় ফিরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। রবিবার রাতেই চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে ঢাকায় এসে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে তারা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোকোনো বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তার দেশের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ প্রস্তাব দেন বলে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান। তারোকোনো বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি চায়। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের ¯্রােতের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেবল মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে তার ভিশন ২০২১ অর্জনে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অধিকতর জোরদারে বাংলাদেশের সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইসু ইজোমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রিন্সেস সোফি হেলেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর জোরালো আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে ঢাকার আহ্বানে সহমত পোষণ করে রবিবার বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে এক সৌজন্য সাক্ষাতকালে কাউন্টিস অব ওয়েসেক্স প্রিন্সেস সোফি হেলেন এই সংহতি প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সোফি হেলেনকে উদ্ধৃত করে বলেন, যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন চায়। প্রিন্সেস বলেন, মিয়ানমারের ওপর টেকসই আন্তর্জাতিক চাপ এবং সেই সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাজ্য একমত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্বাস্তুদের কষ্ট নিরসনে প্রশাসন, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। কাউন্টিস অব ওয়েসেক্স প্রিন্সেস সোফি একজন সমাজকর্মী হিসেবে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিরসনের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, এই সফরকালে তিনি ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রামে চক্ষু হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়কালে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা বিস্তার সম্পর্কে প্রিন্সেস সোফিকে অবহিত করে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা বিস্তারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তিতে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুনরায় প্রকল্পটি শুরু করে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে, যার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এ সময় প্রিন্সেস সোফি হেলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানতে চান বলে প্রেস সচিব জানান। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেইক উপস্থিত ছিলেন।
×