ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক এলাকার ভূমি উন্নয়ন কর বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২০ নভেম্বর ২০১৭

বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক এলাকার ভূমি উন্নয়ন কর বাড়ছে

তপন বিশ্বাস ॥ দেশের বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক এলাকার ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির ওপর খাজনা মওকুফের পূর্বের বিধান বহাল থাকছে। নতুন করে চা, কফি, রাবার, ফুল ও ফলের বাগানের জন্য ব্যবহৃত ভূমির প্রতি শতাংশে ২ টাকা এবং মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামারের জন্য ব্যবহৃত ভূমির ওপর প্রতি শতাংশে বাৎসরিক ২ টাকা করে আরোপিত ভূমি উন্নয়ন করের হার আবারো বাড়ানো হচ্ছে। দু’বছর পর এই কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দু’বছর আগে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে প্রায় ২৫ বছর পর ভূমি উন্নয়ন কর নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ওই সময় নির্ধারণ করা ফি যথাপোযুক্ত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার সঙ্গেও আরোপিত করের মিল নেই। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমিতে শতাংশে বার্ষিক ১/২ টাকা করারোপ সময়োপযোগী হয়নি। ফলে দু’বছর না পেরুতেই পুনরায় ভূমি উন্নয়ন করে পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি সামনে আসে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ৪০ মন্ত্রণালয়ে সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন করে করারোপ করা হবে। ২০১৫ সালে প্রণীত আইনে দেশের সব অকৃষি ভূমি অগ্রসরতার মানদ-ে ৬ এলাকায় চিহ্নিত করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমি হিসেবে ধরা হয়। ‘ক’ শ্রেণীর বাণিজ্যিক ভূমির প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ছিল ১২৫ টাকা। ২০১৫ সালে তা ১৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই শ্রেণীর এলাকায় শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত ভূমির প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ছিল ১২৫ টাকা। ওই সময় শতাংশ প্রতি ২৫ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ১৫০ টাকা। একই শ্রেণীর এলকায় আবাসিক ভূমির বাৎসরিক খাজনা ২২ টাকা ছিল। সেই ক্ষেত্রে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডু, হাটহাজারি ও কক্সবাজার সদর পৌর এলাকা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌর এলাকা, সোনাগাঁও উপজেলার কাঁচপুর ও মেঘনাঘাট, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি, জামিরদিয়া, ধানসুর, ভা-াব ও মেহেরবাড়ি, নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী পৌর এলাকা এবং রাজউকের আওতাধীন পৌর এলাকাকে ‘খ’ শ্রেণীর ভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘খ’ শ্রেণীর বাণিজ্যিক ভূমির প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ছিল ১২৫ টাকা। ১শ’ টাকা বাড়িয়ে ২০১৫ সালে তা ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ‘খ’ শ্রেণীর এলাকার শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ১২৫ টাকা। ২৫ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ১৫০ টাকা। একই শ্রেণীর আবাসিক ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ২২ টাকা। প্রতি শতাংশে ২৮ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৫০ টাকা। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ও পটুয়াখালী জেলা সদরের পৌর এলাকা, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ও দামোদর ইউনিয়নের মশিয়ালী মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ, কুমিল্লা জেলার লাকসাম, চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা, মুক্তগাছা পৌর এলাকা, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর পৌর এলাকা, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার পৌর এলাকাকে ‘গ’ শ্রেণীর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ‘গ’ শ্রেণীর এলকার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ছিল ১২৫ টাকা। ৭৫ টাকা বাড়িয়ে ২০১৫ সালে তা নির্ধারণ করা হয় ২শ’ টাকা। ওই সব এলাকার শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত ভূমির ওপর নতুন করে কোন করারোপ করা হয়নি। বরং পূর্বে নির্ধারণ করা ১২৫ টাকা বহাল রাখা হয়েছিল। ‘গ’ শ্রেণীর এলাকার আবাসিক এলাকার ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ২২ টাকা। নতুন করে ১৮ টাকা বাড়িয়ে তা ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যান্য জেলার সদর পৌর এলাকা, প্রথম শ্রেণীর পৌর এলাকা, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি, চাটখিল পৌর এলাকা, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর পৌর এলাকা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, বগুড়া জেলার শান্তাহার ও শেরপুর পৌর এলাকা, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি, পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকা, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপুর ও আড়ংঘাটা ইউনিয়ন, বটিয়াঘাটা উপজেলার জমলা ইউনিয়ন, ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন, যশোরের অভয়নগর পৌরসভা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভা এবং নোয়াখালী জেলার বশুরহাট পৌর এলাকাকে ‘ঘ’ শ্রেণীর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘ঘ’ শ্রেণীর এলাকার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির ওপর প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ২২ টাকা। নতুন করে ৮৮ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ১শ’ টাকা। ওই সব এলাকায় শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত ভূমির ওপর প্রতি শতাংশে বাৎসরিক খাজনা ২২ টাকা। নতুন করে ৫৩ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৭৫ টাকা। ‘ঘ’ শ্রেণীর এলাকায় আবাসিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ৭ টাকা। নতুন করে ১৩ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা। দেশের অন্যসব পৌর এলাকাকে ‘ঙ’ শ্রেণীর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘ঙ’ শ্রেণীর এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির ওপর বাৎসরিক খাজনা প্রতি শতাংশে ছিল ১৭ টাকা। ৪৩ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা। ‘ঙ’ শ্রেণীর এলাকায় শিল্প কারখায় ব্যবহৃত ভূমির বাৎসরিক খাজনা ১৭ টাকা। ২৩ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। এই ‘ঙ’ শ্রেণীর আবাসিক এলাকার বাৎসরিক খাজনা ৬ টাকা। ৯ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ১৫ টাকা। পৌর এলাকা ঘোষিত হয়নি দেশের এমন সব এলাকাকে ‘চ’ শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘চ’ শ্রেণীর এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ১৫ টাকা। নতুন করে ২৫ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। ‘চ’ শ্রেণীর এলাকায় শিল্প কারখানার কাজে ব্যবহৃত ভূমির খাজনা ১৫ টাকা। ১৩ টাকা বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ৩০ টাকা এবং ‘চ’ শ্রেণীর এলাকার আবাসিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির বাৎসরিক খাজনা ছিল ৫ টাকা। ২০১৫ সালে ৫ টাকা বাড়িয়ে তা ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নতুন করে প্রতি এলাকার ভূমি উন্নয়ন কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ভূমির যেসব খাত এখনও করের আওতায় আসেনি সেই সব ক্ষেত্রে করারোপ করা হবে। কোন খাতে কর বাড়িয়ে ধরা হলে তা কমানোও হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
×