ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্য দায়ীদের শাস্তিসহ ৪ দফা দাবি নির্মূল কমিটির

উত্তম, রসরাজ, রাকেশ আর টিটুরা কী কারণে আসামি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২০ নভেম্বর ২০১৭

উত্তম, রসরাজ, রাকেশ আর টিটুরা কী কারণে আসামি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত পাঁচ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ নবেম্বর রংপুরের ঠাকুরবাড়ি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার শিকার সংখ্যালঘুদেরই আসামি বানানো হচ্ছে। পেছনের কাহিনী কী বা আসল অপরাধী কে তা তদন্ত না করেই প্রশাসন অভিযুক্তদের রিমান্ডে নিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। রবিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘রংপুরের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও চলমান সাম্প্রদায়িক নির্যাতন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেন। মূলত কী কারণে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বারবার ঘটছে এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তির পাশাপাশি আক্রান্ত ও বিপন্ন সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এ সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ নবেম্বর রংপুরের ঠাকুরবাড়ি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলা, গৃহে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত টিটু রায় আদৌ ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর কিছু পোস্ট করেছে কি-না এ অভিযোগের তদন্ত হওয়ার আগেই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারে বৌদ্ধদের ওপর এবং ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য যেভাবে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর মিথ্যা অজুহাত তৈরি করা হয়েছিল, একই পদ্ধতিতে রংপুরের ঠাকুরবাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কী কারণে উত্তম, রসরাজ ও রাকেশ আর টিটুরা আসামি? উত্তম ও রসরাজের ক্ষেত্রে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে তাদের ফেসবুকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা জালিয়াতির মাধ্যমে ইসলাম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে। যারা এ অপরাধ করেছে তাদের সঙ্গ দিচ্ছে প্রশাসনও। কারণ ২০১২ সালে রামুর ঘটনা থেকে শুরু করে নাসিরনগর পর্যন্ত কোন সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তের শাস্তি হয়েছে এমন তথ্য কারও জানা নেই। এ বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘সমাজ ও রাজনীতির মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িককরণ ছাড়াও একটি বড় বাধা হচ্ছে আমাদের দেড় শ’ বছরের পুরনো ফৌজদারি দ-বিধি। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় মূলত সাক্ষীর অভাবে। আমাদের আইনে যে কোন অপরাধ প্রমাণ করতে হলে সাক্ষ্য প্রয়োজন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের যত ঘটনা ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করে না, মামলা করে না অধিকতর নির্যাতনের আশঙ্কায়। তারপরও সাহস করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে কেউ সাক্ষী হতে চায় না। জোর করে সাক্ষী বানালেও মামলার তারিখে সাক্ষী আদালতে হাজির হয় না। ফলে এসব মামলা বছরের পর বছর গড়াতে থাকে। এজন্য ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ ও ‘সাক্ষী নিরাপত্তা আইন’ খুবই জরুরী। আইনমন্ত্রী এ দুই আইন বাস্তবায়নের কথা বললেও সময়ের বিবর্তনে এখনও এ আইন তৈরি হয়নি।’ সামাজিক প্রযুক্তির অপব্যবহার ছাড়াও বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতন, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ক পূর্বের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। গত বছর গোবিন্দপুরে সাঁওতালপল্লীতে ভয়াবহ হামলার কারণ ছিল জমিজমাসংক্রান্ত। বাঁশখালীর হত্যাকা-ও জমিসংক্রান্ত। আবার যাদের জমি নেই তারাও বিশেষভাবে আক্রান্ত হয় নির্বাচনের সময়। যেমন ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু সম্প্রদায় নজিরবিহীন হামলার শিকার হয়েছিল, যাতে তারা কেউ ভোট দিতে না পারে।
×