ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

মার্কিন অর্থনীতি আবার অতি মন্দার দিকে!

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

মার্কিন অর্থনীতি আবার অতি মন্দার দিকে!

বেন বারনানকে উদ্বিগ্ন। কেন উদ্বিগ্ন? কে এই বেন বারনানকে? ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভে চেয়ারম্যান থাকাকালে এই বেন বারনানকে ও তাঁর সহকর্মীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহতম মন্দাকে আরেক গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দায় পরিণত হতে দেননি। এখন তাঁর আশঙ্কা হচ্ছে আরেক বড় ধরনের মন্দা যদি শুরু হয় তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ সেটির রাশ টেনে ধরতে পারবে না। প্রথাগতভাবে ফেডারেল রিজার্ভ স্বল্পামেয়াদী সুদের হার পরিবর্তন করে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। মন্দা উঁকি দিলে ফেডারেল রিজার্ভ চাহিদা বাড়ানোর জন্য ফেডারেল তহবিলের সুদের হার কমিয়ে দেয়। যদি মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা থাকে সেক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ মজুরি ও দ্রব্যমূল্যের চাপ কমাতে সুদের হার বাড়ায়। একই সঙ্গে মর্টগেজ, কর্পোরেট বন্ড ও ট্রেজারি সিকিউরিটির সুদের হারেরও হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু এই কৌশলের একটা বাস্তব সীমাবদ্ধতা আছে। একবার ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনলে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। মন্দা সুগভীর হলে ফেডারেল থেরাপিতে কাজ নাও দিতে পারে। অনেক অর্থনীতিবিদের মতে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। ডিফ্লেশন বা মুদ্রাসংকোচন দেখা দেবে। তাতে পণ্যের দাম পড়ে যাবে। পণ্যের সরবরাহ থাকবে অনেক বেশি অথচ চাহিদা থাকবে অনেক কম। ত্রিশের দশকের মহামন্দার সময় মুদ্রাসংকোচন ছিল লাগামহীন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত পণ্য সামগ্রীর খুচরো মূল্য ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। প্রথম দর্শনে পণ্যের দরপতনকে অর্থনীতির তেজীভাব বলে মনে হয়েছিল। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছিল। কিন্তু এসব সামান্য সুফলের বাইরে অদম্য ও বেয়ারা মুদ্রাসংকোচন অর্থনৈতিক ধসের এক হিংস্র চক্র সৃষ্টির হুমকি হয়ে দেখা দেয়। ক্রেতারা পণ্যের দাম কমবে এই আশায় বড় ধরনের কেনাকাটা বিলম্বিত রাখে। ঋণগ্রহীতাদের অধিক ব্যয়বহুল ডলারে ঋণ পরিশোধ করতে হয় বলে ঋণের বোঝা অনেক বেশি হয়ে চেপে বসে। এই পরিস্থিতি এড়াতে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান থাকাকালে বারনানকে প্রচলিত ধারার বাইরে এক ভিন্ন ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। প্রথমত কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের বন্ড ও মার্কিন ট্রেজারি সিকিউরিটি কিনে নিয়ে অর্থনীতিতে টাকা পয়সা ঢেলে সয়লাব করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদী সুদের হার আরও কমানো। দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে স্বল্পমেয়াদী সুদের হার দীর্ঘদিন ধরে কম থাকবে। কার্যত এটা ছিল এক বিধি বহির্ভূত অঙ্গীকার। বারনানকের বিচার এই নীতিগুলো মহামন্দার অবসান ঘটাতে ও মন্দা মোকাবেলায় কিছু সাহায্য করেছে। কিন্তু এখন তিনি এই সম্ভাবনার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন যে একই নীতি ভবিষ্যতে কঠিন মন্দা বা আর্থিক সঙ্কটে আর কাজ করবে না। বারনানকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি ও কম সুদের হারের পরিবেশে বাস করছি। ভোগ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি নয় বছরের বেশির ভাগ সময় ফেডারেল ব্যাংকের নির্ধারিত টার্গেট বার্ষিক ২ শতাংশের নিচেই নেমেছে। ফেডারেল ফান্ডের সুদের হার এখন সর্বোচ্চ ১.২৫ শতাংশ। দশ বছর মেয়াদী ট্রেজারি সিকিউরিটির সুদের হার ২.৩ শতাংশ। ৮ বছরের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ৪.২ শতাংশ বেকারত্বের হার সত্ত্বেও সুদের হার কমই থাকছে। মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার এত কম কেন এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে মহামন্দার মনস্তাত্ত্বিক ছায়া মজুরি ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর রাশ টেনে ধরেছে। তাছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও নতুন নতুন প্রযুক্তির কারণে মজুরি এবং পণ্যমূল্যের উর্ধমুখী চাপও হ্রাস পেয়েছে। তবে কারণ যাই থাক না কেন, ইতোমধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রুগ্ন অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা ফেডারেল ব্যাংকের পক্ষে কঠিনতর হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি শুধু রুগ্নই নয় সহসা তা অতি মন্দার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এর সঙ্গে আছে মুদ্রাসঙ্কোচন। কঠিন মন্দার কারণে দ্রব্যমূল্য কমে যেতে পারে। এতে ব্যয় ও ব্যবসায় বিনিয়োগও হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা আছে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×