ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারাডাইস পেপার্সে ১০ বাংলাদেশী

তদন্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও এনবিআর

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

তদন্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও এনবিআর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্যারাডাইস পেপার্সে কেলেঙ্কারিতে এবার ১০ বাংলাদেশীর নাম এসেছে। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালের নাম পাওয়া গেছে। এই পরিবারের বাইরে তালিকায় রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের নামও। প্রভাবশালী এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন সব জায়গায়, যেখানে কর নিয়ে কড়াকড়ি নেই; সম্পদের উৎস নিয়েও কেউ মাথা ঘামায় না। কিন্তু এই কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে যৌথভাবে তদন্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুদক। গত বছর পানামা পেপারস নিয়ে বিশ্বজুড়ে ঝড় ওঠার পর এই মাসের শুরুতে প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়। প্যারাডাইস পেপারস হচ্ছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, সেলিব্রিটি ও বিত্তশালী মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের এক বিশাল ডাটাবেজ। এই ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না বা সামান্য হারে কর দেয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সম্প্রতি তাদের কর ফাঁকি দেয়া বিষয়ের এক কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ নথিই প্রকাশ হয়েছে বারমুডার আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ্যাপালবি থেকে। এসব নথি তদন্ত করে দেখছেন বিশ্বের ৬৭টি দেশের ৩৮১ জন সাংবাদিক। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) নামক সাংবাদিকদের একটি সংগঠন এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফাঁস হওয়া এই নথিতে বাংলাদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ক্রমানুযায়ী উল্লেখ করা রয়েছে আউয়াল-নাসরিন ফাতেমা, আউয়াল-তাবিথ, মোঃ আউয়াল-তাফসির মোহাম্মদ, চৌধুরী-ফয়সাল, মিন্টু-আবুদল আউয়াল, মোগল-ফরিদা ওয়াই, উল্লাহ-শহিদ, তাজওয়ার মোঃ আউয়ালের অভিভাবক হিসেবে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আহমাদ-সামির, আউয়াল-তাজওয়ার মোহাম্মদ। আইসিআইজে-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ তালিকায় আউয়াল-নাসরিন ফাতেমার বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হয়েছে গ্যাস অনুসন্ধান ও ড্রিলিং কোম্পানি এনএফএম এনার্জি লিমিটেডের নাম। ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাল্টিমোড লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সিআরদত্ত রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ। আউয়াল-তাবিথ মোঃ-এর বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হয়েছে এনএফএম এনার্জি লিমিটেডের নাম। ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাল্টিমোড লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সিআরদত্ত রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ। আউয়াল-তাফসির মোহাম্মদ-এর বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। এখানে দু’টি ঠিকানা দেখানো হয়েছে। এর একটি হচ্ছে মাল্টিমোড লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সিআরদত্ত রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ। অন্য ঠিকানাটি হচ্ছে ৭১ গুলশান এভিনিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ। চৌধুরী-ফয়সালের বিবরণে বাংলাদেশের নাম দেখানো হয়েছে। এখানে দু’টি ঠিকানা দেখানো হয়েছে। এর একটি হচ্ছে সি/ও মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড, বড়নগর, মেঘনাঘাট, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ ১৪৪১, বাংলাদেশ। অন্য ঠিকানাটি হচ্ছে রোড ২৩, হাউস ২৩, ব্লক বি, বনানী, ঢাকা, বাংলাদেশ। মিন্টু-আব্দুল আউয়ালের বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। এখানে দু’টি ঠিকানা দেখানো হয়েছে। এর একটি হচ্ছে মাল্টিমোড লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সিআরদত্ত রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ। অন্য ঠিকানাটি হচ্ছে ৭১ গুলশান এভিনিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল আওয়াল মিন্টু জনকণ্ঠকে বলেন, আমি তো এসবের কিছুই জানি না। যেখানে এই তথ্যটা এসেছে, কী তথ্য এসেছে, তা আমার দেখতে হবে। না দেখে এই মুহূর্তে মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। মোগল-ফরিদা ওয়াইয়ের বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে ৮০-৭২ তাইরন পিআই, জ্যামাইকা নিউইয়র্ক ১১৪৩২, যুক্তরাষ্ট্র। আর উল্লাহ-শহিদের বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে ২৩৫ স্যাডল রিজ প্লেস, দ্য উডল্যান্ডস, টেক্সাস ৭৭৩৮০, যুক্তরাষ্ট্র। তাজওয়ার মোঃ আউয়ালের অভিভাবক হিসেবে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বিবরণে বাংলাদেশের নাম দেখানো হয়েছে। ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে মাল্টিমোড ট্রান্সপোর্ট কনসালটেন্টস লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১১ তলা, ১/১ (বি) সোনারওগাঁও রোড, ঢাকা ১২০৫, বাংলাদেশ। আহমাদ-সামিরের বিবরণে বাংলাদেশের নাম দেখানো হয়েছে। ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে এ্যাপার্টমেন্ট ৪বি, ১৫ ইউনাইটেড নেশনস রোড, বারিধারা, ঢাকা ১২১২, বাংলাদেশ। আউয়াল-তাজওয়ার মোহাম্মদের বিবরণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম দেখানো হয়েছে। এখানে দু’টি ঠিকানা দেখানো হয়েছে। এর একটি হচ্ছে মাল্টিমোড লিমিটেড, এ্যাঙ্কর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সিআরদত্ত রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ। অন্য ঠিকানাটি হচ্ছে ৭১ গুলশান এভিনিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ। আব্দুল আওয়াল মিন্টুর পরিবার ছাড়া তালিকায় রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের নামও। প্রতিষ্ঠানটি হলো ব্রামার এ্যান্ড পার্টনার্স এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তাদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১২১২। এর আগে গত বছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহসহ বাংলাদেশের অন্তত দেড় ডজন ব্যক্তির নাম আসে, যারা বিদেশী ঠিকানা ব্যবহার করে শেল কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার। যাদের নাম এসেছে, তারা আইন ভেঙ্গে সম্পদ গড়েছেন- এমনটা বলছে না আইসিআইজে। তবে অর্থ পাচার করতে কিংবা কর ফাঁকি দিতে আইনের ফাঁকফোকর খুঁজেছেন অনেকেই। অফশোর লিকসে বাংলাদেশীদের নাম প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছিল, কিন্তু এরপর তদন্তের অগ্রগতির কোন খবর মেলেনি। জানতে চাইলে পানামা পেপারস তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুদকের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা মনে করি, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ যদি সরকারী খাতের হয়, তাহলে তারা এর অনুসন্ধান করতে পারেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে যৌথভাবে তদন্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুদক।
×