ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে

রাজশাহী থেকে অপহৃত ছাত্রী ঢাকায় উদ্ধার, সাবেক স্বামী শ্বশুর আটক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

রাজশাহী থেকে অপহৃত ছাত্রী ঢাকায় উদ্ধার, সাবেক স্বামী শ্বশুর আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজশাহী থেকে ফিল্মিস্টাইলে দিন দুপুরে অপহরণের একদিন পরেই শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা তার সাবেক স্বামীকে এ সময় আটক করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া নামের ছাত্রী হলের সামনে থেকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করা হয়েছিল। এমন ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটার অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পিতভাবে অচল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছিল সরকার বিরোধীরা। অপহৃত ছাত্রী উদ্ধারের মধ্যদিয়ে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বস্তি ফিরেছে। ছাত্রী উদ্ধারের পর সন্তোষ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপহরণের ঘটনায় অপহৃতের সাবেক স্বামী ও স্বামীর পিতাকে আটক করেছে পুলিশ। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনাটি জানার পর থেকেই উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাদের সর্তক থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর রাখার নির্দেশ দেন। বিষয়টি সম্পর্কে রাতেই তাদের সঙ্গে রাজশাহী পুলিশের যোগাযোগ হয়। রাজশাহী থেকে পুলিশের একাধিক টিম ঢাকায় আসে। রাজশাহী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার দুপুর তিনটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কাজী অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সেই কাজী অফিসের ভেতর থেকেই ওই ছাত্রী ও তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাদের রাজশাহী পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবেই হস্তান্তর করা হয়। রাজশাহী পুলিশ ওই ছাত্রী ও তার সাবেক স্বামীকে নিয়ে রাজশাহী চলে যায়। অভিযানকালে কাজীকে পাওয়া যায়নি। আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার সকাল আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের সামনে থেকে ফিল্মিস্টাইলে মাইক্রোবাসযোগে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কতিপয় যুবক। ওই ছাত্রী ঘটনার সময় চতুর্থ বর্ষের সম্মান পরীক্ষা দেয়ার জন্য হল থেকে বের হয়। হলের ফটক থেকে ৫০ গজ দূরে যাওয়া মাত্রই তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর পিতা শুক্রবার বিকেলেই রাজশাহীর মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই ছাত্রীর সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ ছয় জনকে আসামি করেন তিনি। দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সামনে থেকে ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে বলে নানাভাবে বিক্ষোভকারীদের উস্কে দেয়া হয়। আন্দোলনে রীতিমত উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ওই ছাত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পুরো ক্যাম্পাস মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা ওই ছাত্রীকে উদ্ধারে ১৫ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করে। শনিবারও সেই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। সকাল দশটার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বিক্ষোভকারীরা বের হতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে। হল থেকে বের হওয়ার সময় বাধা দিয়েছে। ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে বেলা এগারোটার দিকে ছাত্রীদের গেট খুলে বের হতে দেয়া হয়েছে। তার আগে বের হতে দেয়া হয়নি। বেলা সোয়া এগারোটার দিকে বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে। পরে ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই ছাত্রীকে ফিরিয়ে আনতে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দেয় বিক্ষোভকারীরা। বেলা তিনটার দিকে ওই ছাত্রী উদ্ধারের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সবার মুখেই ছিল তৃপ্তির হাসি। বিক্ষোভকারীরা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানায়। তারা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে। সেই সঙ্গে তারা অপহৃত ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানায়। পাশাপাশি অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন দৃষ্টতা না দেখায়। বিক্ষোভকারীরা ছাত্রী হলের সামনে পুলিশ চেকপোস্ট, প্রত্যেক হলের গেটে এবং বিশ^বিদ্যালয়ের সমস্ত গেটে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, সান্ধ্য আইন বাতিল, সকল হলে অভিভাবক প্রবেশের অনুমতি এবং প্রত্যেক বিভাগকেই তাদের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করার দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা জানান, ওই ছাত্রীকে পুলিশ নিরাপদে উদ্ধার করেছে। তার সাবেক স্বামীকেও আটক করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। প্রক্টর লুৎফর রহমান জানান, অপহৃত ছাত্রী উদ্ধারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া ছাত্রীর সহপাঠীদের বরাত দিয়ে প্রক্টর আরও জানান, গতবছর ডিসেম্বরে নওগাঁ জেলার এক যুবকের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। ছেলেটি ঢাকার একটি ল’ কলেজে পড়ে। গত সেপ্টেম্বরে মেয়েটি তার স্বামীকে তালাক দিলেও ছেলেটি বিচ্ছেদে রাজি নয়। সকালে ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। ওই ছাত্রীর সঙ্গে ওই ছেলেটি কথা বলার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছেলেটি জোরপূর্বক মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়। রাজশাহীর মতিহার থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাতেই নওগাঁর পতœীতলা থানার সরদার পাড়ায় নিজের বাড়ি থেকে মেয়েটির সাবেক শ্বশুর জয়নাল আবেদীনকে আটক করা হয়। তিনি অপহৃত ছাত্রী ও তার ছেলে সম্পর্কে তথ্য দেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখার আলম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী ও তার সাবেক স্বামীর অবস্থান ঢাকায় বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। রাতেই ঢাকায় পুলিশের একাধিক টিম পাঠানো হয়। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের সহায়তায় অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ওই ছাত্রীকে কেন অপহরণ করা হয়েছিল, তার জানার চেষ্টা চলছে। সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। যে মাইক্রোবাসযোগে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছিল, সেই গাড়িটির সন্ধান চলছে।
×