ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্ত দুই কোটি ॥ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল, দাতা সঙ্কটও প্রকট

প্রতিবছর কিডনি রোগে দেশে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

প্রতিবছর কিডনি রোগে দেশে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাবার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ অকেজো হয়ে যায়। প্রতিবছর কিডনিজনিত রোগে ৪০ হাজার লোক মারা যায়। দেশে কিডনি বিকল রোগীর জন্য কিডনিদাতার সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ মোট রোগীর ২ ভাগের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়। অন্যরা নিজেদের মতো চেষ্টা করে রোগী নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। বাকিরা ডায়ালাইসিস দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে কিডনি রোগীকে পূর্ণ আরোগ্য লাভ করানো সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। শনিবার রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কনভেনশন হলে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের তিন দিনব্যাপী ১৩ম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার(অব) ডাঃ আব্দুল মালিক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কে আজাদ খান ও যুক্তরাজ্যের রয়াল লন্ডন হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডাঃ স্ট্যানলি ফ্যান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মুহিবুর রহমান। তিনদিনের সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ২৫ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি রোগ প্রতিরোধ, হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন প্রভৃতি বিষয়ে সেমিনারে আলোচনা করবেন। এতে দেশের তিন শতাধিক চিকিৎসক অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) ডাঃ আব্দুল মালিক বলেন, দেশে কিডনি বিকল রোগীর জন্য কিডনিদাতার সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে। দেশে কিডনি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও খুব ব্যয়বহুল। সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন কারণে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে কারো কারো কিডনি হঠাৎ অকেজো হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বিভিন্ন রকম ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, প্রসবকালীন জটিলতা, সাংঘাতিক ধরনের নেফ্রাইটিস, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কিডনিতে পাথরের কারণে হঠাৎই কিডনি অকেজো হয়ে যায়। অবশ্য এ ধরনের কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার ভাল দিক আছে; এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করলে অনেকের কিডনি পুনরায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, সঠিক চিকিৎসা করলে ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হঠাৎ কিডনি অকেজো হওয়া প্রতিরোধ করতে হলে বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দিতে হবে। ইনফেকশন হলে সঠিক সময়ে তার চিকিৎসা করাতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন খুবই ব্যয়বহুল। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনির জটিলতায় ভুগছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় কিডনি রোগীর পরিবারের সদস্যরা ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই চিকিৎসার ব্যয় কমাতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষ যদি নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগে, তাহলে তার কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সময় নষ্ট না করে তাদের কিডনি পরীক্ষা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু দেশে কিডনিদাতার সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে। কিডনিদাতা ও গ্রহীতার ওষুধের মূল্যহ্রাস এবং মস্তিষ্কের মৃত্যুর (ব্রেন ডেথ) পর তার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসুস্থ ব্যক্তির দেহে সংযোজনের সুযোগ রেখে আইন তৈরি করা দরকার। টাকা দিয়েও কিডনি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×