ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন ॥ ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন ॥ ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ জীবনবাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেও বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই শাজাহানপুর উপজেলায় চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। ঘটনার ৩ দিন পরেও তার পরিবার জানতে পারেনি কেন এই মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্র থেকে পাওনা শেষ সম্মান থেকে বঞ্চিত হলেন। পুলিশের অবসরপ্রপ্ত এসআই মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবীকে বুধবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই শাজাহানপুরের ডোমনপুকুর এলাকার জায়দারপাড়ায় দাফন করা হয়। এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আশা ছিল শেষ সম্মান তাকে জানানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় শোকাহত পরিবারটি ক্ষুব্ধ। অথচ তারা শাজাহানপুর থানা পুলিশকে মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আর উপজেলা প্রশাসন ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার জানায়, এস আই নুরুন্নবী বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশার ইউনিয়নের শাকদহ গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ঠাকুরগাঁও। নদী ভাঙ্গনে বাড়ি বিলীন হওয়ায় তারা শাজাহানপুর উপজেলায় বাড়ি করেছিলেন। দু’ হাজার সালে এস আই নুরুন্নবী অবসরে যান। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৬ নং সেক্টরে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন (তার বডি নাম্বার ১১১/১, বহি নং ৫, খ- ১৮১ এবং ক্রমিক নং ৩৩৩১২)। বুধবার সকালে তিনি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ও ছেলে সামছুল আরেফিন তুহিন জানান, রংপুর থেকে মরদেহ এ্যাম্বুলেন্সে করে দুপুরে বগুড়ায় এনে সরাসরি শাজাহানপুর থানায় যান। সেখানে গিয়ে ওসি জিয়া লতিফুলকে মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়টি জানানো হয়। এ সময় ওসি তাদের জানান, ‘তিনি কি করবেন’। পরে লাশ উপজেলার ডোমনপুকুর জায়দারপাড়ার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। বিকেল পর্যন্ত তারা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে প্রশাসনের কোন লোকজন তাদের বাড়িতে না যাওয়ায় অবশেষে সন্ধ্যায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করতে হয় বলে মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবীর স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবীর সহযোদ্ধা সারিয়াকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস জানান, নুরুন্নবী যে একজন মুক্তিযোদ্ধা তা তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) মাধ্যমে শাজাহানপুরে জানিয়েছিলেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সহকারী কমিশনার আব্দুল কাদের বিষয়টি স্বীকার করেন। অপর দিকে শাজাহানপুর উপজেলার ওসি জিয়া লতিফুল জানান, শাজাহানপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আব্দুল মান্নান তাকে জানিয়েছিলেন, ওই নামে কোন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তাদের হাতে নেই। এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, তিনি বিষয়টি শেষ পর্যায়ে এসে জেনেছিলেন। তখন তিনি জানতে পারেন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবীর লাশ দাফন হয়ে গেছে।
×