ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩১ ডিসেম্বর কর্মসূচী শেষ

রিহায়ারিংয়ের সুযোগ দিয়েও গ্রেফতার চলছে মালয়েশিয়ায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

রিহায়ারিংয়ের সুযোগ দিয়েও গ্রেফতার চলছে মালয়েশিয়ায়

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কর্মীদের ‘রি-হায়ারিং’ কর্মসূচীর আওতায় আসার সুযোগ দিলেও ইমিগ্রেশন বিভাগ গ্রেফতার বন্ধ করছে না। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের শতাধিক কর্মীকে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের আশপশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ কর্মীদের হাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনুমতিপত্র থাকার পরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। যদিও বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব কর্মী রি-হায়ারিং করতে হাইকমিশনে আসবেন তাদের পুলিশ হয়রানি করবে না। হাইকমিশনের সঙ্গে ইমিগ্রেশন বিভাগের বৈঠকের পর হাইকমিশন বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে যোগ দিতে এমন প্রচারও করেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর রি-হায়ারিং কর্মসূচীর শেষদিন। এ কর্মসূচীর আওতায় যারা আসতে পারবেন না তাদের ৩১ ডিসেম্বরের পর দেশে ফেরত আসতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সময় আছে মাত্র এক মাস ১৪ দিন। এ সময়ের মধ্যে হাইকমিশন মনে করে, দুই লাখের বেশি কর্মী রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় আসতে সুযোগ পাবেন। যদি এভাবে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে এ সংখ্যা অনেক কম হবে। মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেফতার অভিযান যাতে কোন কর্মী হাইকমিশনে না আসতে পারে তার কৌশল হতে পারে। মঙ্গলবার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশীসহ ৪শ’ ৪০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। প্রথমে অভিযান চালানো হয় বিনতাং জালান আলো এলাকায়। পরে অভিযানের সীমা বাড়িয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন পর্যন্ত নিয়ে যায়। মালয়েশিয়ার জাতীয় নিবন্ধন বিভাগ ডিবিকেএল বলেছে, জেনারেল অপারেশন সোর্স ও মালয়েশিয়ার কোম্পানি কমিশনের সমন্বয়ে বিভিন্ন সংস্থার মোট ২শ’ ৬৭ জন কর্মকর্তা অংশ নেন এ অভিযানে। দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তফা আলী জানান, ৯শ’ ১৫ জন অভিবাসীকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হয়। আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যৌথ এ অভিযানে ৪শ’ ৪০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩শ’ ৮৯ পুরুষ, ৪৭ নারী ও চার শিশু রয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশের ১শ’ কর্মী রয়েছেন। এদিকে বিএমইটি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার জন্য এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) দেয়ার সময় শেষ হলেও রি-হায়ারিং কর্মসূচী চলমান রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ বছরের গোড়ার দিক থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশের ৩ লাখ ২০ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২ লাখের মতো কর্মী নিবন্ধিত হতে পারবেন। ই-কার্ডের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দু’দফা বৈঠকের পরও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ কর্মসূচীর আর সময় বাড়ানো হবে না। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনার সুযোগ তারা দেয়নি। এখন আমরা জোর দিয়েছি রি-হায়ারিং কর্মসূচীর ওপর। ফলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। এতে কর্মীরা সাড়া দিয়ে নিবন্ধন করছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২ লাখের বেশি কর্মী নিবন্ধনের আওতায় আসতে পারবেন। মালয়েশিয়ার মালিকপক্ষ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা দিচ্ছে। তারাও কোন অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করাতে চান না। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ই-কার্ড কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। অন্য সোর্স কান্ট্রি থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশিসংখ্যক কর্মী ই-কার্ডের আওতায় এসেছেন। কিছু কর্মী দালাল ও মালিকদের কারণে ই-কার্ড পাননি। তাদেরই পুলিশ আটক করছে। রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। যেহেতু বাংলাদেশীরা নিবন্ধনের সুযোগ নিচ্ছেন, তাই তারা যেন ভয়ভীতি ছাড়াই এ কর্মসূচীর সুযোগ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর পর মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মালিকদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ নিতে চান তাদের যেন অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এ অনুমতিপত্র হাতে থাকলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। অন্যদিকে রি-হায়ারিংয়ের পাশাপাশি প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে।
×