ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপে বক্তাদের অভিমত

নির্যাতিত নারীর সুরক্ষায় শক্তিশালী লিগ্যাল এইড কমিটি চাই

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

নির্যাতিত নারীর সুরক্ষায় শক্তিশালী লিগ্যাল এইড কমিটি চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের দুর্ভোগ কমাতে লিগ্যাল এইড (বিনা খরচে আইনী সেবা) কমিটিগুলোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, আদালতে মামলা করার আগে যদি কাউন্সেলিং, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হয় তাহলে মামলার হার যেমন কমবে তেমনি দুর্ভোগ কমে বিচার পাওয়া সুনিশ্চিত হবে। ভুক্তভোগীদের জন্য লিগ্যাল এইড নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রচারের ওপরও জোর দেন তারা। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্যাতনের শিকার নারীদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আইন সহায়তা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এই সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় লিগ্যাল এইডের সমস্যার সমাধান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। রাষ্ট্র আইন করেছে কাকে কাকে লিগ্যাল এইড দেবে। এ নিয়ে একটি বইও আছে। এ বইয়ের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। তবে এর বাইরে গিয়েও আমাদের আইনজীবী ও অন্যদের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এটি আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন এবং দ্রুত সব জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এখানে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আরও সাবঅর্ডিনেট জাজদের যুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত না গিয়ে এডিআর ও কাউন্সেলিং করতে হবে। এজন্য এনজিওগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সচেতন করে তোলা সম্ভব। ইনায়েতুর রহিম বলেন, লিগ্যাল এইড কমিটিকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে আইনের দুর্বল দিকগুলো কিভাবে সংশোধন করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি এখানে অনেক সমস্যার কথা শুনেছি। কিন্তু আমার মনে হয় সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসে যেখানে যেখানে সমস্যা হচ্ছে তা সমাধান করা দরকার। আমরাই পারি জোটের জাতীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা হকের সঞ্চালনা এবং জোটের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিচার প্রশাসন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোঃ গোলাম কিবরিয়া এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আমরাই পারি জোটের কো-চেয়ার এমবি আখতার। কর্মশালার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং আইনগত সহায়তার বিষয়ে উপস্থাপন করেন জোটের জাতীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক। নারী নির্যাতনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন আমরাই পারি জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় আইনগত সহায়তা ব্যবস্থা এবং আমাদের অভিজ্ঞতা বিষয়ক আলোচনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুমা সুলতানা। সুলতানা কামাল তার বক্তব্যে বলেন, নিঃশঙ্ক জীবন সব মানুষের অধিকার। নির্যাতনের শিকার মানুষের সংখ্যা কম নয় কিন্তু নারী নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। তাই নারী নির্যাতন সবার আগে কমাতে হবে। তা নাহলে নির্যাতনমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সংবিধানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার সমান।
×