ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী, চাপ দিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়

অটোর ইকোনমিক লাইফ বৃদ্ধির দাবিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি মালিক-শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

অটোর ইকোনমিক লাইফ বৃদ্ধির দাবিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি মালিক-শ্রমিকরা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ইকোনমিক লাইফ বৃদ্ধির দাবিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে পরিবহনটির শ্রমিক ও মালিকরা। উভয় পক্ষ ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। অটোরিক্সা মালিকদের সংগঠনের নেতারা বলছেন, মেয়াদ শেষ হলেও ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিস্থাপন করে গাড়ি চালানো সম্ভব। আর শ্রমিক নেতাসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হলে চালকসহ যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন অটোরিক্সা নামানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসমূহের ইকোনমিক লাইফ বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতামত চাওয়া হয়েছে। এ মতামতের ভিত্তিতে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বুয়েটের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বেশিরভাগ অটোরিক্সা এখন চলাচলের অযোগ্য। সরকারীভাবে এসব গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দেয়া মোটেই সম্ভব হবে না। এদিকে গাড়ির ইকোনমিক লাইফ বাড়াতে সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিটি গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে গাড়ি চলাচলের বৈধতা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে জোর লবিং করার অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের কর্মসূচী ॥ চালকদের মধ্যে নতুন অটোরিক্সা বরাদ্দ এবং সম্প্রতি চালু হওয়া এ্যাপনির্ভর পরিবহনসেবা বন্ধ করাসহ আট দফা দাবিতে ধর্মঘটসহ এক মাসের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আগামী ২৭ নবেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবেন অটোরিক্সা চালকরা। তারপরও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে তাদের লাগাতার ধর্মঘট। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আট দফা দাবিতে আজ ১৯ নবেম্বর তারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। ২২ নবেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। ৩০ নবেম্বর চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ এবং ১০ ডিসেম্বর বিআরটিএ ঘেরাও করা হবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবেন। ঐক্য পরিষদের আট দফার মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচল করা মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিক্সা অপসারণ করে নতুন অটোরিক্সা প্রতিস্থাপন, ঢাকায় চালকদের নামে পাঁচ হাজার এবং চট্টগ্রামে চার হাজার অটোরিক্সা বিতরণ, উবার, পাঠাওয়ের মত এ্যাপনির্ভর পরিবহনসেবা বন্ধ করা, খসড়া সড়ক পরিবহন আইন থেকে ‘শ্রমিক স্বার্থবিরোধী’ ধারা বাতিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে ব্যবহারিক পরীক্ষা বন্ধ করা, অননুমোদিত পার্কিংয়ের জন্য মামলা না করা, চালকদের ‘হয়রানি’ বন্ধ করা, নিবন্ধিত অটোরিক্সা চালকদের ঢাকা জেলার সব জায়গায় চলাচলের অনুমতি দেয়া। সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে ১৫ বছর ধরে যেসব অটোরিক্সা চলছে, সেগুলোর ইঞ্জিন ও চেসিস পুরনো হয়ে কার্যকারিতা হারিয়েছে। চেসিস ও ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করা না হলে দুর্ঘটনায় যাত্রী ও চালকের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিক্সা সেবা চালু হয়। আগের দুই স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি/স্কুটারের স্থলে আসে চার স্ট্রোকের সিএনজিচালিত এই গাড়ি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত অটোরিক্সা আছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০টি। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৬ হাজার অটোরিক্সা নিবন্ধন দেয়ার পর মিশুকের পরিবর্তে আরও কিছু গাড়ি নামানো হয়। পরিবহন শ্রমিক নেতা সাখাওয়াত হোসেন দুলাল অভিযোগ করেন, মালিক সমিতির ‘অসাধু নেতারা’ বুয়েট, বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয় থেকে মেয়াদ বাড়ানোর নামে অটোরিক্সার মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিক্সার মেয়াদ শেষ হলেও নতুন ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এগুলোর ইকোনমিক লাইফ ছয় বছর বৃদ্ধি করার যে আবেদন মালিক সমিতি করেছে, আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করছি। মামা বাড়ির আবদার মালিকদের ॥ যাত্রা শুরুর পর অটোরিক্সা ইকোনমিক লাইফ নয় বছর শেষ হয়েছে ২০১০ সালে। এরপর কেটেছে আরও প্রায় সাত বছর। তবুও প্রত্যাশা পূরণ হয়না অটোরিক্সা মালিকদের। আবারও মামার বাড়ির আবদার নিয়ে হাজির হয়েছেন অটোরিক্সা মালিকরা। সিএনজি অটোরিক্সার ইকোনোমিক লাইফ ছয় বছর বৃদ্ধিসহ সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। অন্য ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের হুমকি দেয়া হয়েছিল সংগঠনের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে নানা সমালোচনা মুখে এ কর্মসূচী থেকে সরে আসেন নেতারা। সংগঠনের সদস্য সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রায় এক বছর আগে ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন ও গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তনের মাধ্যমে বুয়েট, চুয়েট ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) মতামত সাপেক্ষে সিএনজি অটোরিক্সার ইকোনোমিক লাইফ ছয় বছর বৃদ্ধির দাবি করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে কোন রকম সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। নানা রকম টালবাহানা ও সময় পার করে আমাদের শেষ পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।
×