ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে উদ্যোক্তাদের হতাশা

রংপুরে কোন শিল্পায়ন হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

রংপুরে কোন শিল্পায়ন হচ্ছে না

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ বক্তারা রংপুর বিভাগকে দেশের সবচেয়ে পশ্চাদপদ এলাকা বলে চিহ্নিত করে বলেন, রংপুর জেলায় সারাদেশের মধ্যে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। জাতীয়ভাবে অন্যান্য জেলায় দারিদ্র্যের হার ৫ হলেও এখানে দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৯, রেমিটেন্সের দিক থেকেও সবচেয়ে পিছিয়ে। এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে শনিবার রংপুর চেম্বার অব কর্মাস এ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘রংপুর বিভাগে শিল্পায়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক প্রাতিষ্ঠানিক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। তারা বলেন, রংপুরে রেমিটেন্স আসে মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এর কারণ এ অঞ্চলে জনশক্তি রফতানির হার কম, এখন পর্যন্ত তেমন কোন শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। রংপুরে গ্যাস সরবরাহ না করা হলে কোনভাবেই এখানে শিল্পায়ন সম্ভব নয় বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, গ্যাসের দাবিতে আমাদের আন্দোলন করতে হবে। তারা বলেন, রংপুরে অন্যান্য জেলার মতো ব্যাংক সুদের হার রাখা হলে কোন অবস্থাতেই ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে না। সে কারণে এফবিসিসিআইকে এগিয়ে এসে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলকে শিল্পায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করার দাবি জানানো হয়। এফবিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এফবিসিসিআই থেকে ঊ.জ.চ-এর আওতায় সারাদেশের উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করার লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিভাগেও পরবর্তী অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এফবিসিসিআই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় চেম্বার এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা ও সুপারিশ গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি ভ্যাট, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি সম্পর্কিত সমস্যাবলীর সমাধানে ‘ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম’ গঠনের আশ্বাস দেন। এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকাশে শেখ ফজলে ফাহিম এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ তার বক্তব্যে দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতে রংপুর অঞ্চলকে নিয়ে আসার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) সফলভাবে অর্জনের ক্ষেত্রে যেহেতু বাংলাদেশ প্রসংশিত হয়েছে, তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং মাথাপিছু আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর ওপর কাজী হাসান আহমেদ গুরুত্ব দেন। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শীর্ষস্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। উদ্যোক্তারা জানান, এ অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক এবং তৈরি পোশাকশিল্প স্থাপনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও প্রতি জেলায় স্ব স্ব পণ্যের ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে তোলার ওপরও তারা গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা এসএমই প্রতিষ্ঠায় সরকার প্রদত্ত ঋণ প্রদান নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালন এবং হয়রানি ও জামানত-গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ প্রদান নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ দাবি জানান। তরুণ উদ্যোক্তারাও পুঁজির যোগানে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের জোর দাবি জানান। শিল্পোদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে ৪ লেনে উন্নীতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তারা কর্মসংস্থান এবং শিল্পের বিকাশে রাজধানীর বাইরে রংপুর ও অন্যান্য জেলায় শিল্প বিকেন্দ্রীকরণেরও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। শিল্পের বিকাশে স্থানীয় উদ্যোক্তাগণ স্বল্পমূল্যে বিদ্যুত প্রদানের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরাও এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিকাশে গ্যাস সংযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং আউটসোর্সিংসহ সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে এ অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহাম্মেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। আলোচনায় অংশ নেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, রংপুর চেম্বারের সভাপতি সোহরাব হোসেন টিটু, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, আনোয়ার সাদাত, আজিজুল হক, দিলীপ কুমার আগারওয়াল।
×