ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে যখন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছিল তখন স্থানীয়দের মধ্যে বর্মী সেনাদের প্রতি ক্ষোভ ও রোহিঙ্গাদের প্রতি এক ধরনের মায়াকান্না পরিলক্ষিত হয়েছিল। অনুপ্রবেশ ও বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে এখন আর সেই আফসোস নেই। দশ বছর বয়সে স্থানীয় যে শিশু বইখাতা নিয়ে লাইন ধরে পাঠশালায় যাচ্ছে, ওই বয়সের রোহিঙ্গা শিশু (মেয়ে) মাথায় এবং কোমরে ত্রাণের বস্তা ও বালতি নিয়ে ফিরছে আশ্রয় কেন্দ্রে। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা আপসোস করলেও কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য আর মায়াকান্না করছে না। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এদের আশ্রয় দেয়ার পর তাদের বিভিন্ন অপকর্ম ও বেআইনী কর্মকা-ে অতীষ্ঠ হয়ে উঠছে স্থানীয় অধিবাসী। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা স্বল্পদামে মজুরি কাজে শ্রম দেয়ায় স্থানীয় দিনমজুরদের বেকার হয়ে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। একশ্রেণীর এনজিও এবং ঠিকাদার রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি ও সেখানে বিভিন্ন কাজে স্বল্পদামে দিনমজুর হিসেবে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা যুবকদের। রোহিঙ্গাদের অনেকে তরিতরকারি, মাছ, সবজি, সওদাসহ দোকান খুলে বসেছে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ও আশপাশের বাজারে। রোহিঙ্গাদের বাড়তি উপার্জনের নিয়ম নেই। তারপরও প্রতিদিন রেশন ভোগ করে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে চলছে। চাল-ডালসহ সাংসারিক বহু পণ্য তাদের কিনতে হয় না। প্রত্যহ পাচ্ছে ফ্রি রেশন। কিন্তু স্থানীয় দোকানিরা সরকারী-বেসরকারী রেশন পাচ্ছে না। তাদের প্রতিটি পণ্য বিকিকিনি করে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের যেসব পণ্য ত্রাণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে, ফ্রি রেশন ভোগকারী ওই রোহিঙ্গা দোকানিরা স্বল্পদামে ওসব পণ্য বিক্রি করায় লোকাল দোকানিরা চরম বেকায়দায় পড়েছে। বিক্রি করতে না পেরে দোকানেই নষ্ট হতে চলছে তাদের বিভিন্ন পণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করতে পারছে না স্থানীয় দোকানিরা। গত দুই মাসে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার হাতে খুন হয়েছে স্থানীয় দুই যুবক। আহত হয়েছে পুলিশের এসআই এবং নির্মাণ শ্রমিকসহ ১০ গ্রামবাসী। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। প্রত্যেহ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে সামাজিক বনায়নসহ বন বিভাগের কচি চারাগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। যদিও তাদের তুষের লাকড়ি ত্রাণ হিসেবে দেয়া হলেও তা নগদে ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গারা অপরাধ করলেও চোখ বুঝে সব সহ্য করে চলছে স্থানীয়রা। এদিকে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ সব ধরনের সমস্যা সামাল দিতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। যানজটসহ স্থানীয়রা বিভিন্ন দুর্ভোগে পড়েছেন। তারপরও রোহিঙ্গাদের মুখে কৃতজ্ঞতার বুলি নেই। রোহিঙ্গারা বলে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ তাদের শুধু আশ্রয় দিয়েছে। খাবার ও লালনপালন করছে বিদেশীরা। সচেতন মহল বলেন, বর্মী বাহিনী রাখাইনে তাদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, তা স্মরণ করে রোহিঙ্গারা ধর্য ধরে স্থানীয়দের কোন ধরনের ক্ষতি না হয় সে মতে চলাচল করতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে স্থানীয়দের ওপর চড়াওসহ সবদিকে ক্ষতি করে চলছে।
×