ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করের পরিধি বাড়াতে

প্রকাশিত: ০২:৫৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

করের পরিধি বাড়াতে

আয়কর প্রদানের ভীতি যেমন কেটে যাচ্ছে, তেমনি কর আদায়ের পরিধিও বাড়ছে। মানুষের মধ্যে কর প্রদানের প্রবণতা ও উৎসাহ বাড়ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আহরণ পদ্ধতি সহজতর করার কারণে কর প্রদানে জটিলতামুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ‘করমেলা’ ব্যাপক প্রভাব রেখেছে এক্ষেত্রে। তবে কর ব্যবস্থা এখনও শহর কেন্দ্রিক রয়ে গেছে। গ্রাম পর্যায়ে এর বিস্তার ঘটেনি। যদিও গ্রামের অনেক মানুষ এখন আয়কর প্রদানের মতো আয় করেন। কিন্তু তারা করের আওতায় নেই। কারণ, গ্রাম পর্যায়ে আয়কর আদায়ের কোন কার্যকর ব্যবস্থা অদ্যাবধি নেয়া হয়নি। গ্রামাঞ্চলে প্রচার প্রসার চালানোর পদক্ষেপও নেয়া হয়নি এখনও। সুযোগ না থাকা, অজ্ঞতা এবং অন্যান্য করের কারণের গ্রামীণ জনগণ করের আওতায় আসছে না। কর প্রদান না করার একটা সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে চলে আসছে। কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। বিশেষ করে ধনী, বিত্তবানরা কর ফাঁকি প্রদানে দীর্ঘকাল নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আসছিল। দেশে যে পরিমাণ কোটিপতি রয়েছে, তুলনায় কর প্রদানের প্রবণতা কম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত আট বছর ধরে কর আদায় পদ্ধতিকে ক্রমশ সহজ করে এনেছে, একই সঙ্গে কর আদায়ও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি কর প্রদানের পরিধিও সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশেষ করে করমেলা আয়োজনের পর করদাতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। করদাতারাও মেলায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে কর প্রদানে। কর অফিসে যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, করমেলায় তা থাকে না। তাই সঙ্গতভাবে বলা যায়, করমেলার মতো প্রতিটি কর অফিসে স্বাচ্ছন্দ্যকর পরিবেশ তৈরি করা সময়ের চাহিদা এখন। তা হলে মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে কর প্রদানে আরও উৎসাহী হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দক্ষতার কারণে করমেলা এখন বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। করদাতারাও তাই অপেক্ষা করে মেলার জন্য, যেখানে অনায়াসে সে কর দিতে পারে। এই মেলার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, কর না দেয়ায় যে সংস্কৃতি চলছিল তা পরিবর্তিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আমরা কর দেব, স্বাবলম্বী হব। এটা তো বাস্তব, কর প্রদান না করলে উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাড়বে না। দেশের মানুষের করের টাকায় গড়ে উঠছে পদ্মা সেতু। এই অর্থেই সমাজ, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। করদাতাদের জন্য রাজস্ব বোর্ড উদ্ভাবিত কর কার্ড ও আয়কর কার্ড পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড এখন ‘মর্যাদার’ বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সর্বোচ্চ করদাতাদের মূল্যায়ন করার জন্য যে কর কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এই কার্ড করদাতাকে স্বীকৃতির একটি উদ্যোগ বৈকি। বর্তমানে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ই-টিআইএন সনদ দিতে হয়। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে কর প্রদানের প্রবণতা আরও বাড়ছে। বিদেশে কর প্রদানের জন্য করদাতাকে কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। এদেশেও যদি সে ধরনের কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রবর্তন করা হয়, সে যত ছোটই হোক দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে তা সম্মানের। দেখা গেছে, যাদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে এবং যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের কাছ থেকেও আয়কর আদায় করা হয়। কিন্তু তারা হিসেবে আসে না। এসব বিষয়ে বোর্ডের আরও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। রাজস্ব বোর্ড সবচেয়ে বড় যে কাজ করেছে, তা হলো করভীতি লাঘব। বরং বোর্ড এখন করবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শহরের পাশাপাশি এখন আয়কর আদায়ের আন্দোলনকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি খুব দুরূহ নয়। গ্রামের মানুষ কর সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হলে কর প্রদানে তারাও উৎসাহী হবে। গ্রাম পর্যায়ে করমেলাকে পালা পার্বণের মেলার মতো প্রাথমিকভাবে উদ্যাপন করা হলে তা জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
×