ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও মাশরাফির সঙ্গী গেইল-ম্যাককালাম

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

আবারও মাশরাফির সঙ্গী গেইল-ম্যাককালাম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দীর্ঘদিন পর ভিন্ন পরিবেশ আর ভিন্ন আসরে আবার দু’জন সহযোদ্ধা। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবার রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে খেলবেন। আজই মাঠে নামছেন তারা। গেইল সবগুলো বিপিএলে খেললেও ম্যাককালামের আজ অভিষেক এ আসরে। আন্তর্জাতিক টি২০তে সর্বাধিক ছক্কা, বিপিএলে সর্বাধিক ছক্কাÑ এমনকি যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে সর্বাধিক ছক্কা ও রানের মালিক গেইল অবশ্য দাবি করেছেন ছক্কা হাঁকানোর পরিমাণ নিয়ে তিনি চিন্তা করেন না কোন সময়। তার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মাঠে নেমে দর্শকদের বিনোদন দেয়া। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন, আবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে মুখিয়ে আছেন গেইল। সেবার কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আবারও এ ত্রয়ীকে একই দলে দেখা যাবে আজ। ২০০৯ সালের আইপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেবারই প্রথম আইপিএলে খেলার সুযোগ করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের মেধাবী পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) জার্সি গায়ে ছিল মাশরাফি, গেইল ও ম্যাককালামের। সেবার অবশ্য এ ত্রয়ীর অভিজ্ঞতাটা ভাল হয়নি। শেষ চারেই উঠতে পারেনি কেকেআর। ম্যাককালামের নেতৃত্বে কেকেআরের শেষদিকের একটিমাত্র ম্যাচ খেলেছিলেন মাশরাফি। তবে সেই ম্যাচের অনেক আগেই গেইল জাতীয় দলের হয়ে যোগ দেয়াতে আইপিএল থেকে চলে গিয়েছিলেন। তাই একসঙ্গে এ ত্রয়ীর নামা হয়নি। তবে মাশরাফির সঙ্গে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের পক্ষে খেলেছেন গেইল। ম্যাককালামের ৮ বছর আগের সেই ম্যাচটি খেলার পর আর খেলা হয়নি মাশরাফির সঙ্গে। এবার তিনজনের সম্মিলন ঘটছে একই দলে এবং একই ম্যাচে। এবার টি২০ ক্রিকেটের দুই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানের অধিনায়ক হিসেবে রংপুর রাইডার্সের হয়ে নামবেন এ ত্রয়ী। মাশরাফিকে নিয়ে গেইল বলেন, ‘মর্তুজার নেতৃত্বে দলে অনেক অভিজ্ঞতার সমন্বয় আছে। বোলিং আক্রমণেও প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের বোপারাও আছে। এমন কোন পরিস্থিতি নেই যে আমাদের নির্দিষ্ট এক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। দলে অনেক ম্যাচজয়ী পারফর্মার আছে। সুতরাং বিষয়টি এমন নয় যে আমরা শুধু গেইল এবং ম্যাককালাম কিছু করে দেবে সেটার ওপর নির্ভর করব।’ ৮ বছর পর আবার ম্যাককালামের সঙ্গে জুটি বেঁধে নামবেন গেইল। বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশ রোমাঞ্চিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইপিএলে আমরা আগে একসঙ্গে উদ্বোধন করেছি। আবার আমরা সহযোদ্ধা হয়েছি। এটা আমাদের জন্য নতুন এবং বিস্ফোরক কিছু করার জন্য নামব। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। ভাল কিছু করার ক্ষেত্রে আমাদের ওপর প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা চালাতে চাই এবং আগামীকালের (আজ) ম্যাচ জিততে চাই। বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারা এবং বিপিএলে আবার একটা অংশ হতে পারাটা দারুণ। আমরা জানি ব্রেন্ডন কতটা ধ্বংসাত্মক। তার সঙ্গে আবার ব্যাটিং উদ্বোধন করতে পারা বিশেষ একটা ব্যাপার।’ তবে ২০০৯ সালের আইপিএলে ম্যাককালাম ১৩ ম্যাচ খেলেছিলেন আর গেইল খেলেছিলেন ৭ ম্যাচ। দু’জন কেকেআরের হয়ে উদ্বোধন করেছিলেন ৬ ম্যাচে। কিন্তু তেমন জমেনি এই মারদাঙ্গা ও ভয়ঙ্কর জুটিটি। জুটির সর্বাধিক রান ছিল ৫.৩ ওভারে ৫৭ রান। সেটা ২১ এপ্রিল ডারবানে তারা কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে করেছিলেন। বাকি ৫ ম্যাচে একসঙ্গে নেমে একজন ভাল করলেও অন্যজন দ্রুতই সাজঘরে ফিরেছেন। এবার বিপিএলে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে গেইল বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই আমি যখন ব্যাট করতে নামি মূল উদ্দেশ্য থাকে ভক্তদের উপভোগ্য কিছু দিতে। তারা অনেক অর্থ খরচা করে বিনোদনের জন্য। আমি অনেক বেশি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়ি। আর যখন এটা হয়ে যায় ব্যাপারটা দারুণ হয় এবং সবাই সন্তুষ্ট হয়। সাধারণত আমি কোন প্রতিযোগিতায় ছক্কার পরিমাণ নিয়ে পরিকল্পনা করি নো। আশা করছি আমরা ভাল কোন শুরু করতে পারব আগামীকাল (আজ) এবং হয়তো পুরো টুর্নামেন্টের জন্য একটা ছন্দ তৈরি করতে পারব।’ দু’জনের চিন্তাধারাও এক। গেইল আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সর্বাধিক ১০৩ ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ম্যাককালাম সর্বাধিক ২১৪০ রান করার পাশাপাশি দ্বিতীয় সর্বাধিক ৯১ ছক্কার মালিক। তবে যে কোন ধরনের টি২০ ক্রিকেটে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে গেইলের ১০ হাজার রান (১০৫৭১) আছে। তিনি যে কোন পর্যায়ের টি২০তে সর্বাধিক ৭৭২ ছক্কার রেকর্ডও ধারণ করে যে কোন ব্যাটনসম্যানের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে। এবার বিপিএলকে ঘিরে তিনি নিজের পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমি আরেকটি নতুন দল নিয়ে এবং আগামীকালের (আজ) প্রথম খেলা নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করছি দলকে জয়ের পথে ফিরিয়ে নিয়েই ভাল শুরুর মাধ্যমে বের হয়ে আসতে পারব। বাংলাদেশের সবাই দু’জন সেরা বিনোদনকারী হিসেবে আমার এবং ম্যাককালামের মাধ্যমে উপভোগ করতে চায়। এ কারণে চাপটা আমাদের ওপরও থাকছে। কিন্তু আমরা এ সবই প্রত্যাশা করি। দর্শকদের অনেক শোরগোল থাকবে। এটা খুবই চমৎকার হবে যদি আমরা ভাল শুরু করতে পারি, অনেক বেশি বাউন্ডারি হাঁকাতে পারি এবং দর্শকদের উত্তেজনা দিতে পারি। হয়তো অন্য ছেলেরা এর ওপর ভিত্তি করেই দারুণ কিছু গড়ে তুলবে এবং দেখা যাক কি ধরনের সংগ্রহ আমরা পাই কিংবা দিতে পারি। আমরা দু’জনই একই চিন্তা করি। আমাদের গেম প্ল্যান নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার এবং ম্যাককালামের মধ্যে কোনকিছু প্রমাণ করার নেই। আমরা নেমে উপভোগ করতে চাই এবং কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি অনুসারে খেলতে চাই। যদি কোন নির্দিষ্ট বোলারকে বিধ্বস্ত করতে হয় আমরা যতখানি সম্ভব সেটা নিয়ে কাজ করব। আমি জানি না ১১০০০ রানে পৌঁছুতে আমার কত দরকার, কিন্তু ৯ খেলা আছে। শুধু ঠিকমতো জ্বলে ওঠাটাই ব্যাপার। আমি জানি এই কন্ডিশনে কি আশা করা যায় এবং আমি সেই চ্যালেঞ্জের দিকেই মনোযোগী।’
×