ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে গ্রামে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

যে গ্রামে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ মাত্র ৩৩ শতক জমির অভাবে লোহাগড়া উপজেলার বাড়িভাঙ্গা গ্রামে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও গড়ে ওঠেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাড়িভাঙ্গা গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই গ্রামের হতদরিদ্র শতাধিক কোমলমতি শিশুর এখন সময় কাটে মার্বেল ও গ্রামীণ খেলাধুলা করে। শিক্ষার সুযোগ না থাকায় অল্প বয়সে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে কিশোরী মেয়েদের। একটু বয়স্কদের সময় কাটে তাস ও কেরামবোর্ড খেলে এবং চায়ের দোকানে টেলিভিশনে সিনেমা ও খবর দেখে। গ্রামটিতে রয়েছে সামাজিক দলাদলির চর্চা। শিক্ষার আলো বঞ্চিত হওয়ায় গ্রামের আর্থসামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মাদকের ছোবল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে দলিল করে দিলে সরকারীভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। জমি কেনার ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে এলাকাবাসী। সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে বাড়িভাঙ্গা গ্রামটি লোহাগড়া উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নবগঙ্গা নদীর উত্তর পাশে অবস্থান। এ ছাড়া জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই গ্রামটি। বাড়িভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন (৭০) জানান, এই গ্রামে স্থাপনা বলতে দুটি মসজিদ এবং ছোট ছোট ২-৩টি খুপরি ঘরের দোকান রয়েছে। নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং খেলার মাঠ। যার কারণে এই গ্রামে শিক্ষার হার সর্বোচ্চ ২০%। যারা লেখাপড়া শিখেছে তারাও চাকরি এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে শহরে চলে গিয়েছে। তরুণ ছেলেরা মাঝে মধ্যে তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ক্রিকেট খেলে শখ পূরণ করে। গ্রামে খেলার মাঠ না থাকায় ছেলেদের জন্য এ ব্যবস্থা। সাবেক ইউপি সদস্য কায়কোবাদ লস্কার জানান, এই গ্রামে কয়েক বছর আগে ব্র্যাকের শিশু শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। ৪-৫ বছর ধরে পড়াশোনা করানোর কারণে কিছু ছেলে-মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। পরে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবারও ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার গতি থেমে গেছে। এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে ছেলে-মেয়েরা অন্তত ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারত। এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, দেড় হাজার জনসংখ্যা আছে এমন এলাকা বা গ্রামে এবং দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল না থাকলে সে এলাকায় ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে দলিল করে দিলে সরকারীভাবেই স্কুল প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে।
×