ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘষামাজা করে দায় এড়ানোর চেষ্টা

হস্তান্তরের আগেই তিন ভবনে ফাটল

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

হস্তান্তরের আগেই তিন ভবনে ফাটল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পুলিশের তিনটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে প্লাস্টারও। ভবন তিনটির অবস্থায় এমন পর্যায়ে গেছে যে দীর্ঘস্থায়ী বসবাস দায় হয়ে পড়বে। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে জানানোর পর তোলপাড়া শুরু হয়েছে। নিম্নমানের এই কাজ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে গণপূর্ত বিভাগ। এই বিভাগের কর্মকর্তারা নতুন তিনটি ভবনে ঘষামাজা করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, যশোরে নতুন করে নির্মিত ফাটল ধরা তিনটি ভবন পুলিশের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা করছে গণপূর্ত বিভাগ। যদিও পুলিশ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কেবল তাই না, যশোর পুলিশের পক্ষ থেকে নবনির্মিত এই তিনটি ভবনের কী কী সমস্যা ধরা পড়েছে তার বিস্তারিত উল্লেখ করে হেডকোয়ার্টারকে জানানো হয়েছে। গত ৯ নবেম্বর পৃথক তিনটি স্মারকে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান হেডকোয়ার্টারের ডিআইজিকে (এস্টেট) পত্র দিয়েছেন। যশোরের একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও দুটি তদন্তকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যে তিনটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেগুলো হচ্ছে, চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি এবং বাগআঁচড়া ও বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। জানা গেছে, তিনটি ভবনের দুটি নির্মাণ করেছে ঢাকার ৩৪, গ্রীন রোডের পদ্মা এ্যাসোসিয়েটস এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং একটির কাজ করেছে ঝিনাইদহের মেসার্স লিটন ট্রেডার্স। পদ্মা এ্যাসোসিয়েটস এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড বাগআঁচড়া ও বাঁকড়া তদন্ত কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজ করেছে। এ দুটি ভবন নির্মাণের জন্যে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া চাঁচড়া ফাঁড়ির ভবন নির্মাণে বরাদ্দ করা হয় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যশোরের পুলিশ বিভাগ বলছে, গণপূর্ত নির্মিত তিনটি ভবনই গ্রহণ করা যাচ্ছে না। নির্মাণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনটি ভবনেই বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। দেখা দিয়েছে ফাটল। কেবল তাই না, অন্যান্য সমস্যাও চিহ্নিত করা হয়েছে। চাঁচড়া ফাঁড়ি ভবনে যেসব ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নিচতলার রান্না ঘরের দেয়ালে ফাটল, ডাইনিং রুমের দরজার উপর ফাটল, নিচতলায় মহিলা হাজতখানার উপরের ছাদের কাছাকাছি ওয়ালে ফাটল, পুরুষ হাজতখানায় ছাদের নিচের প্লাস্টার খসে পড়েছে, দ্বিতীয় তলায় বড় কক্ষের দরজার উপর থেকে ছাদ পর্যন্ত ফাটল, টয়লেটের সামনে নিচে ড্যাটোর উপরের প্লাস্টার খসে পড়ে। শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের নব-নির্মিত ভবনে চিহ্নিত করা ত্রুটির মধ্যে নিচতলায় সিঁড়ির পশ্চিম পাশের দেয়ালে প্লাস্টার নষ্ট ও রং চটে যাওয়া, ডাইনিং রুমের দরজার উপর ফাটল, নিচতলার মহিলা হাজতখানার সামনে দরজা উপর দেয়ালে ফাটল, পশ্চিম পাশে ইনচার্জের কক্ষে ড্যাটোর উপরের প্লাস্টার নষ্ট ও রং উঠে যাওয়া, টয়লেটের সামনে নিচে ড্যাটোর উপরের প্লাস্টার খসে পড়া এবং রং উঠে যাওয়া, দোতলার সিঁড়ির পশ্চিম পাশে ওয়ালের প্লাস্টার খসে পড়া ও রং চটে যাওয়া, ডাইনিং রুমের বাইরে প্লাস্টার খসে পড়া ও পাম্পের পানিতে প্রচুর পরিমাণে বালি ওঠায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়া। এখানকার চিত্র একই তারিখে ৪৪১০/ই স্মারকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়েছে। ঝিকরগাছার বাঁকড়া তদন্ত কেন্দ্রের নতুন ভবনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে নিচতলার সিঁড়ির পশ্চিম পাশের দেয়ালে প্লাস্টার নষ্ট হয়ে রং চটে যাওয়া, ডাইনিং রুমের দরজার উপর ফাটল, নিচতলার মহিলা হাজতখানার সামনে দরজার উপরের প্লাস্টারে ফাটল, পশ্চিম পাশের ইনচার্জের কক্ষে ড্যাটোর উপরে প্লাস্টার নষ্ট হয়ে রং উঠে যাওয়া, টয়লেটের সামনে নিচে ড্যাটোর উপরের প্লাস্টার খসে পড়া এবং রং উঠে যাওয়া, দোতলার সিঁড়ির পশ্চিম পাশে ওয়ালের প্লাস্টার খসে পড়া ও রং চটে যাওয়া, ছাদের উপরের কলামের পাশে ফাটল, পেছন দিকে প্লাস্টার নষ্ট হয়ে রং ফুটে পড়ে যাওয়া ও নিচতলায় লিনটনের নিচে ফাটল দেখা যাওয়া। পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ ভবন তিনটি হস্তান্তরের জন্য গণপূর্ত বিভাগ এক প্রকার পীড়াপীড়ি করছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, যেনতেনভাবে হস্তান্তর করতে পারলেই বাঁচে গণপূর্ত। কিন্তু তা হতে দেবে না পুলিশ বিভাগ। যশোর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফারুকুজ্জামান বলেন, কিছু সমস্যা ধরা পড়ায় তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানিকের মধ্যে তিনটি ভবনই হস্তান্তর করা হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী ফ্রান্সিস আশীষ ডি-কস্তা বলেন, যেসব সমস্যা ধরা পড়ে তা মাইনর। এগুলো বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এসব কিছু ঠিক করে দেয়ার পরও পুলিশ এগুলো গ্রহণ করছে না। আসলে তারা কী চায় তা বুঝতে পারছি না।
×