ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যারা ইতিহাস-ঐতিহ্য জানে না, তারা অর্থহীন জাতি

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

যারা ইতিহাস-ঐতিহ্য জানে না, তারা অর্থহীন জাতি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, নাটেশ্বর থেকে ফিরে ॥ বিক্রমপুর একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদ। এটি ছিল বঙ্গ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসছে একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যিক নিদর্শন : বৌদ্ধ মন্দিরের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, ৪টি অনন্য স্তূপ হলঘর, ইটেনির্মিত রাস্তা, কক্ষ, দেয়াল, মেঝে, ইটনির্মিত নালা। সর্বোপরি বৌদ্ধনগরীর খনন কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নাটেশ্বর বৌদ্ধ মন্দির প্রত্নস্থানে খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। প্রধান অতিথি থেকে খনন কাজ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ জামাতা দেশবরণ্যে শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সফিক আহম্মেদ সিদ্দিক। বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির ভাষণ দেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্তি সচিব) আলতাফ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাঃ হারুন-অর-রশিদ, চীন থেকে আগত প্রতœতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক চাই হুয়ান হো, খনন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মত হাসিনা আক্তার, অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হাসান, এ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা, আমিরুল ইসলাম ও সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জামাতা দেশবরণ্যে শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সফিক আহম্মেদ সিদ্দিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। এই বাংলায় রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস আর ঐতিহ্য। যে জাতি ইতিহাস-ঐতিহ্য জানে না তারা অর্থহীন জাতি। আমাদের এই বাংলায় অনেক ঐতিহ্য এবং প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে গর্ব করার মতো। বিক্রমপুরের পাশাপাশি মহাস্থানগড়সহ দেশের নানাস্থানের ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ঐতিহ্যসহ ক্রমেই বাংলার সমৃদ্ধি বাড়ছে। জ্ঞানতাপস অতীশ দীপঙ্কর এই বিক্রমপুরে জন্মলাভ করেছেন। কিন্তু তিনি কিভাবে এত পা-িত্য লাভ করলেন, কোথায় পড়াশোনা করলেন? এই প্রশ্ন সবার মাঝেই ছিল। মাটি খননের মধ্য দিয়ে এর সঠিক উত্তর বের করে দিল অগ্রসর বিক্রমপুর তথা নূহ-উল-আলম লেনিন। তিনি বলেন, বিক্রমপুরে বহু গুণী মানুষের জন্ম হয়েছে। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীও এই বিক্রমপুরেরই সন্তান। এই জনপদে সাধারণের জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র ছিল। ক্রমে ক্রমে এসবই বেরিয়ে আসছে। এখানে রয়েছে বহু সম্পদ; যা খননে বেরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে যখন পড়াশোনা করেছি, সেই ছোটবেলা থেকেই তখন বিক্রমপুরের গুণীজনের সুনাম শুনেছি। এই বিক্রমপুরের নামটি দেশের বাইরেও শোনা যায়। ভারতে গিয়েও বিক্রমপুরের নাম শোনা যায়। সেখানে বিক্রমপুর সমিতি সরব রয়েছে। লন্ডনে গিয়েও এই বিক্রমপুর সমিতি দেখেছি। বিশ্বের নানা জায়গায় এখনও বিক্রমপুরের নাম রয়েছে। বিশেষ অতিথির ভাষণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ভূগোলে বিক্রমপুরের নাম না থাকলে ছিল ইতিহাসে। আর এখন স্বচক্ষে বিক্রমপুরের প্রাচীন কীর্তি দেখে অভিভূত। তিনি বিক্রমপুরের পুত্রবধূ হিসেবে গর্ববোধ করেন। চীন থেকে আগত প্রতœতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক চাই হুয়ান হো বলেন, এই খনন কাজে সহযোগিতা করতে পেরে চীন গর্ববোধ করছে। তিনি মনে করেন, নাটেশ্বরের এই পুরাকীর্তি বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যের নিদর্শন হবে।
×