ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একেকটি খামার এখন গোটা পরিবারের স্বপ্ন;###;কারও খামারে গরু, কারও খামারে ছাগল আর কারও খামারে মুরগি পালন করা হচ্ছে;###;সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এই সেক্টরে

দশ বছরে দুধ ডিম মাংসের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি ॥ প্রাণিজ সম্পদে সমৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

দশ বছরে দুধ ডিম মাংসের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি ॥ প্রাণিজ সম্পদে সমৃদ্ধি

ওয়াজেদ হীরা ॥ প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণেও রাখছে অগ্রণী ভূমিকা। মাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন। গত ১০ বছরে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন হওয়া ডিম কিংবা দুধ ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের নানাপ্রান্তে। আর সাধারণ মানুষ মেটাচ্ছে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, ভিশন ২০২১ এ দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে অধিদফতর। কৃষিপ্রধান দেশে শিল্পকারখানা বাড়ছে আর ক্রমেই কমছে কৃষিজমি। প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষই এখন প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে ঝুঁকছে। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবানসহ নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও চাহিদা মেটাতে এই উৎপাদন বাড়ছে দেশে। আর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে। আর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ব্যাপকহারে খামার ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে সাফল্য আসছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের ক্ষুদ্র ও বৃহত খামারিদের অবদান সবচেয়ে বেশি। মানুষ বহুমুখী কর্মে নিজেদের নিয়োজিত করছে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ একটি বড় প্লাটফর্মও বটে। ‘সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ’ সেøাগানে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ভিশন ২০২১ লক্ষ্যমাত্রায় দৈনিক ২৫০ মিলি. দুধ ১২০ গ্রাম মাংস এবং সপ্তাহে ২টি ডিম হিসেবে বার্ষিক চাহিদা মেটাতে কাজ করছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি। মাছে-ভাতে বাঙালীর আমিষের চাহিদা পূরণের এক সময় প্রধান উৎস ছিল মাছ। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে দেশের মানুষের খাদ্যাভাসও। মাছের পাশাপাশি আমিষের আরেক উৎস মাংসের ওপরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। দুধ ও ডিমের প্রতিও রয়েছে আকর্ষণ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটাতে পরিকল্পনামাফিক প্রতিনিয়ত কাজ করছে মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাড়ছে উৎপাদনও। উৎপাদন নিয়ে অধিদফতরের চলতি বছরের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, মাংস ডিম ও দুধের উৎপাদন হয়েছে গত দশ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি। যা এক বিরাট সাফল্যও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাংস উৎপাদন হয়েছে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন আর দুধ উৎপাদন হয়েছে ৯২ লাখ ৮৩ হাজার টন। একই সঙ্গে ডিম উৎপাদন হয়েছে ১৪৯৩ কোটি ৩১ লাখ। অথচ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার টন আর দুধ উৎপাদন ছিল ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ডিম ৫৬৫ কোটি ৩২ লাখ পিস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৬০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩.৩২ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপির আকার ছিল ৩৫ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বেশি। যদিও প্রতিবছর জিডিপি কমছে আর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। জিডিপি কমলেও তাতে আশঙ্কার কোন কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এক-একটি খামার একটি গোটা পরিবারের স্বপ্ন এখন। কারও খামারে গরু কারও খামারে ছাগল কারও খামারে মুরগি পালন করা হচ্ছে। এজন্য সর্বদাই ব্যস্ত খামারিরাও। ময়মনসিংহে মুরগির খামার করেছেন আলমগীর কবির রুকন। জনকণ্ঠকে বলেন, এখন শীতকাল। ডিম আসলেও বাজার একটু কম। ভারত থেকে ডিম আসলে বাজারের দাম কমতে থাকে। তবে খামার মানেই শ্রমের মধ্যেই থাকতে হয়। সবর্দাই খেয়াল রাখতে হয়। তবে নিজের শ্রমে আর আয়ে বেশ খুশি তিনি। এছাড়াও দেশে যে পরিমাণ গরু-ছাগল লালন পালন হয় কোরবানির সময় বড় যোগান দেয় দেশীয় উৎপাদনই। জানা গেছে, দেশে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত মোট গবাদি পশুর খামার আছে ৬৬ হাজার ২টি। এর মধ্যে গাভীর খামারই ৫৮ হাজার ৪৪৯টি। বাকি ৩৯২১টি ছাগল আর ৩৬৩২টি ভেড়ার খামার। এছাড়াও দেশে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত মোট হাঁস-মুরগির খামারের সংখ্যা চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ হাজার ৬২৭টি। এর মধ্যে মাংস উৎপাদনকারী (ব্রয়লার খামার) সংখ্যা ৫৩ হাজার ৯৮৮ এবং ডিম উৎপাদনকারী (লেয়ার খামার) সংখ্যা ১৮ হাজার ৭১০টি। দেশে হাঁসের খামারের সংখ্যা ৭ হাজার ৭০৬টি, প্যারেট স্টক ২০৭টি, গ্রান্ড প্যারেট স্টক ১৬টি। দেশে হাঁস-মুরগি ও পশুসহ রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সর্বমোট খামারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬টি। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন রেজিস্ট্রেশনের বাইরে থেকে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার খামারি নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক খামারিই রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে ভাল জানেন না। তাই রেজিস্ট্রেশনের প্রতি তাদের আগ্রহ নেই বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামারের রেজিস্ট্রেশন করতে হলে ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ তিন ক্যাটাগরির যেটিতে পরবে সে অনুযায়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। পরে উপজেলা কর্মকর্তা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেন জেলা অফিসে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস যাচাই বাছাই করে নিবন্ধন দেবে। খামারের রেজিস্ট্রেশন করতে হলে ॥ খামারের রেজিস্ট্রেশন থাকলে অনেক সময় স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা থেকে মিলবে পরিচর্যা বা প্রাণির রোগ হলে সব ধরনের তথ্য ও সেবা। এজন্য রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে গাভীর খামার ‘এ’ শ্রেণী হলে পশুর সংখ্যা থাকতে হবে কমপক্ষে ৫১টি, নিবন্ধন ফি দশ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে কমপক্ষে ২১টি গরু আর নিবন্ধন ফি পাঁচ হাজার টাকা। আর ‘সি’ ক্যাটাগরিতে কমপক্ষে ১০টি গরুর ফি এক হাজার টাকা। মুরগি লেয়ারের ক্ষেত্রে ‘এ’ শ্রেণীতে বিশ হাজারের উপর মুরগি থাকতে হবে নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা, ‘বি’ শ্রেণীতে দশ হাজারের উপর মুরগী থাকতে হবে নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা আর ‘সি’ শ্রেণীতে ১ হাজারের উপর মুরগিতে ফি পাঁচ হাজার টাকা। ব্রয়লার মুরগির খামার মুরগির সংখ্যা একই থাকলেও ফি একটু কম। এ শ্রেণীর জন্য দশ হাজার, ‘বি’ শ্রেণীতে পাঁচ হাজার আর ‘সি’ শ্রেণীতে পঁচিশ শ’ টাকা। অন্যান্য খামারের নিবন্ধন তথ্যও পাওয়া যায় সব প্রাণিসম্পদ অফিসে। উৎপাদনে সাফল্য ॥ গাজীপুরের আব্দুল আওয়াল হাসান বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন সফল খামারি। প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে তৈরি করেন ৮-১০টি ষাঁড়। এছাড়াও তার খামারে রয়েছে ১৬টি দুধের গাভী। নিয়মিত পরিচর্যা আর দেখাশুনার জন্য শ্রমিক রেখে নিজেও কাজ করেন। আওয়ালের মতো অসংখ্য খামারি দেশে ছড়িয়ে আছে। কেউ হয়ত বড় করে খামার করতে পারেনি তবে সারাবছরই দু’চারটে গরু লালন পালন করছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর তথ্য মতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে দুধের উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন সেখানে চলতি অর্থবছরে ৯২ লাখ ৮৩ টন। এর মধ্যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন কম ছিল। পরবর্তী সব বছরেই উৎপাদন শুধু বেড়েছে আর কমেনি। এদিকে, ডিমের প্রতিও রয়েছে মানুষের আকর্ষণ। এ বছর বিশ্ব ডিম দিবসে গত (১৩ অক্টোবর) একটু সস্তায় ডিম পেতে হুড়োহুড়ি ও মারামারিসহ লঙ্কাকা- হয়েছে খামার বাড়িতে। একই সঙ্গে নানা হট্টগোলের মধ্যে মানুষের দীর্ঘলাইন এটাও জানান দিয়েছে মানুষের এই ডিমের প্রতি চাহিদার কথা। যা একটু কমে পেলে মন্দ কি! চলতি বছর ডিমের উৎপাদন ছিল ১৪৯৩ কোটি ৩১ লাখ। যা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল ৫৬৫ কোটি ৩২ লাখ পিস। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদন কিছুটা কমলেও পরবর্তী সব বছরেই ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। এদিকে, ডিম দুধের উৎপাদন গত দশ বছরে কোন বছরে একটু কমলেও মাংসের উৎপাদন শুধু বেড়েছেই। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ১০ লাখ ৪০ হাজার টন থেকে প্রতিবছর বেড়ে চলতি অর্থবছরে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টনে পৌঁছেছে। প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে, উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রামের যুবকদের কথা বলতে হয়। তারা অনেকেই ট্রেনিং নিয়ে এই কাজ করছে। আর গ্রামের অনেকেই কৃষি কাজের পাশাপাশি গরু লালন পালন করছে। আর কৃষির চেয়ে এই খাতে জায়গা কম এবং মুনাফাটা বেশি পাওয়া যায় এটিও একটি কারণ। বর্তমান এই সাফল্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বাজার তৈরি করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি মাংস রফতানি করতে পারে আমরাও আমাদের ডিম দুধ মাংস রফতানি করব সে চিন্তা করতে হবে। এ জন্য অধিদফতরকে মার্কেট তৈরি করতে হবে সেই পলিসি নিয়ে এগুতে হবে। দেশে প্রাণিজ উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে পোলট্রি খাতে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমেছে, হয়েছে পদ্ধতি ও প্রযুুক্তিগত উন্নয়ন। এছাড়াও নতুন ভ্যাক্সিন ও প্রতিষেধকের ব্যবহার বেড়েছে। পশুর খামারে মানুষের আগ্রহ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে সচেতনতাও। এছাড়াও দেশে প্রাণিজ কৃত্রিম প্রজনন সক্ষমতায় এসেছে বড় সুফল। এখন কোন পশু দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন খামারিরা। প্রাণিজ উৎপাদন কতটুকু পুষ্টি চাহিদা মেটাচ্ছে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাণিজ উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি জনসংখ্যাও বেড়েছে। আমরা যদি দেহের কতখানি চাহিদা দেখি তবে ১৫-২০ শতাংশ প্রোটিন থাকতে হবে যার আবার ২০ শতাংশ প্রাণি প্রোটিন হতে হবে। তবে পূর্বের মতো পুষ্টির অভাবে দেশে শিশু ও মাতৃ মৃত্যু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন পুষ্টিহীন মানুষ, বৃদ্ধ, মা ও শিশু পর্যায়ে এ আমিষের সঠিক বণ্টন প্রয়োজন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ওয়ান হেলথ কোর্ডিনেটর অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, উৎপাদন বাড়ছে দেশের জন্য সুখবর। এর তিনটি কারণও আছে প্রথমত চাহিদা ও সরবরাহ, দ্বিতীয়ত সরকারের সেবার উন্নয়ন, তৃতীয়ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন। অর্থাৎ মানুষের হাতে অনেক অর্থ আছে। তারা খাদ্যভাস পরিবর্তন করলে এই দুধ ডিম খাদ্যের চাহিদা বাড়ে। মন্ত্রণালয় বিশেষ নজরদারি এবং অধিদফতরের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও খামারিদের আগ্রহ মিলেই এই ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আইনুল হক । তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের ভিশন তথা জনগণের আমিষ চাহিদা পূরণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিতভাবে মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় কাজ করছি। এখন কোরবানিতে দেশের উৎপাদনই যথেষ্ট। পোল্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কেউ গরু কেউ ছাগল বা মুরগির খামার করে আজ স্বাবলম্বী। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে কোন রোগের সেবা তথ্য পাচ্ছে মুহূর্তেই। আমরা বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রাখছি। কারণ অনেকে চাকরিতে না গিয়ে এটিকেই চাকরি মনে করছে। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে। এসব কারণে দ্রুতগতিতে উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও এই সব খামারি যাতে আরও কিছু করতে পারে কিংবা সেবা পেতে পারে সে জন্য আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করেন, নানা তথ্য আদান প্রদান করেন। বর্তমানে যে সংখ্যক মানুষ এই প্রাণিসম্পদে যুক্ত যত দিন যাবে এই খামারিদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও মনে করেন অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আইনুল হক। এছাড়া ভবিষ্যতে ডিম, দুধ ও মাংস দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজার ধরতেও পরিকল্পনা আছে এবং কাজ করছে অধিদফতর বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য নিজস্ব গবেষণাগারে বর্তমানে ১৬ প্রকারের টিকা তৈরি করছে যা মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অধীনে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বর্তমানে দেশের প্রতি উপজেলায় ভেটেরিনারি হাসপাতাল রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আওতাধীন একটি কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ১০টি মেট্রোপলিটন প্রাণিসম্পদ দফতর, ৬৪ জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ৪৯০ উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির ৮টি আঞ্চলিক রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার ও একটি কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু শস্য কিংবা মৎস্য উৎপাদনই নয় প্রাণিজ উৎপাদন বৃদ্ধি আভাস দিচ্ছে উন্নয়নের। এই উৎপাদন বার্তা দিচ্ছে স্বাবলম্বী এক বাংলাদেশেরও।
×