ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

তারই জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

তারই জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে - “আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও ।” অর্থাৎ অপরকে এটা কর ওটা কর না উপদেশ দেয়ার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখা উচিত। যে কাজ আমি করি না তা অপরকে করার পরামর্শ দেয়া বা যে কাজ আমি করি তা অপরকে না করার জন্যে বলাটা এক ধরনের হিপোক্রাসি বৈ কিছু নয়। ছেলেবেলায় গুরুজনদের কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম, গল্প না সত্যি জানি না, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে দেখা করে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমি খুব বিপদে পড়েছি, আমার এই ছেলে কেবল মিষ্টি খেতে চায়, আপনি ওকে একটু বলে দিন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) সে সময় নিজেই মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন। তিনি ভদ্রলোককে কয়েকদিন পর আসার পরামর্শ দিলেন। আর এর মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিলেন বা কমিয়ে দিলেন। তারপরই কেবল ওই ছেলেকে মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা যা না তাই প্রচার করতে বেশি ভালবাসি। নিজে গণতন্ত্রের ‘গ’ও বিশ্বাস করেন না, অথচ প্রেসক্লাবের সামনে তোপখানায় কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলেন; নিজের স্বৈরাচারী চেহারাটার দিকে মোটেও তাকান না; নিজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, অথচ সম্পদের দিকে তাকান না, তা কি সৎ পথে উপার্জিত, নাকি অসৎ পথে; নিজে অপরের দুর্নীতি-লুটপাটের কথা বলে পত্রিকার পাতায় কলাম-কমেন্টারি লিখেন, অথচ নিজের কর্মকা-ের কথা স্মরণ করেন না- এসব অন্য সমাজে কতখানি আছে জানি না, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপকভাবে আছে। যে কারণে আমাদের সমাজেই আরেকটি বহুল প্রচারিত প্রবাদ আছে - “উট-উট মায়ের বড় গলা।” প্রথম শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছিলাম না বলে ‘উট-উট’ দিয়ে কাভার করলাম। তবে এটা ঠিক আমি উচ্চারণ না করলেও সমাজে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে অহরহ উচ্চারণ হয়। ভূমিকাটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল বলে মার্জনা কাম্য। বস্তুত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সম্প্রতি দুইটি অকেশনে দেয়া বক্তব্য দেখে দৈনিক জনকণ্ঠে আমার নিয়মিত কলামটি এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছে হলো। না লিখলে বরং সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যাব, যা আমি চাই না। প্রথমেই দেখব তিনি কি কি বলেছেন - ১. গত ০৯-১১-২০১৭ বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ‘জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার’ জবানবন্দীতে এবং দ্বিতীয়ত গত ১২ নবেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দলীয় প্রধান হিসেবে যা যা বলেছেন তার কিছু নমুনা : আদালতের কাঠগড়ায় ক) “প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও তাকে (শেখ হাসিনাকে) ক্ষমা করে দিয়েছি।” পরদিন (১০ নবেঃ ২০১৭) দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার রিপোর্ট হলো : “ ... ও যধাব ঢ়বৎংড়হধষষু ভড়ৎমরাবহ যবৎ (ঝযবরশয ঐধংরহধ) ফরংঢ়রষব ঝযবরশয ঐধংরহধ’ং (যদি খালেদা জিয়া কখনও ‘শেখ’ শব্দটি উচ্চারণ করেন না) ধনঁংরাব ৎবসধৎশং ধনড়ঁঃ তরধঁৎ জধযসধহ’ং ভধসরষু.” অর্থাৎ খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। খ) (আওয়ামী লীগের প্রতি) “আসুন, প্রতিহিংসার বিপরীতে রাজনীতিতে সংযম ও সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে তুলি।” (প্রথম আলো, ১০/১১/১৭) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক) (নির্বাচনে) “সেনাবাহিনী যদি মোতায়েন করা না হয় তাহলে হাছিনার গু-াবাহিনী কেন্দ্র দখল করে মানুষের ওপর অত্যাচার চালাবে।” খ) “আমাদের (খালেদার) রাজনীতি হলো জাতীয় ঐক্যের সে ঐক্যের ডাক আমি দিয়েছি।” (প্রথম আলো, ১৩/১১/১৭) গ) “(আওয়ামী লীগের উদ্দেশে) আমরা সহিংসতার রাজনীতি করি না”- (প্রথম আলো, ১৩/১১/১৭) ঘ) “(আওয়ামী লীগের উদ্দেশে) আমরা আপনাদের শুদ্ধ করব” (প্রথম আলো, ১৩/১১/১৭) ঙ) “(আওয়ামী লীগের উদ্দেশে) আপনাদের সত্যিকার মানুষ বানাবার চেষ্টা আমরা করব” (প্রথম আলো, ১৩/১১/১৭) চ) (টিভি স্ক্রিনে শোনা গেছে) আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে ছ) আমরা ঐক্যের ডাক দিয়েছি এমনি অসত্য এবং আদব-কায়দাবিবর্জিত অনেক কথা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যা থেকে আমি কিছু শব্দ বেছে নিয়ে আলোচনা করব। আমি ‘আদব-কায়দাবিবর্জিত’ শব্দটি ব্যবহার করেছি এ জন্যে যে, বেগম জিয়াই পার্লামেন্টে সম্মানিত সদস্যদের ‘চুপ বেআদব’ উচ্চারণ করেছিলেন। আমি সেটাকে বেআদব না বলে ‘আদব-কায়দাবিবর্জিত’ শব্দাবলী ব্যবহার করলাম কেবল শিষ্টাচার রক্ষার জন্যে। অবশ্য খালেদা জিয়া ‘শিষ্টাচার’ শব্দের অর্থ বুঝবেন কিনা সন্দেহ। আরও যে সব শব্দ আমার চোখে পড়েছে । ১. “ক্ষমা” ২. “হাছিনার গু-াবাহিনী” ৩. “প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম ও সহিষ্ণুতা” ৪. “আমরা সহিংসার রাজনীতি করি না” ৫. “আপনাদের শুদ্ধ করব” ৬. “মানুষ বানাবার চেষ্টা করব আপনাদের” ৭. “আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে” ৮. “আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি” ‘ক্ষমা’ : ক্ষমা মহত্ত্বে¡র লক্ষণ। এই মহাজনী বাক্যের অর্থ বেগম খালেদা জিয়া বোঝেন কিনা জানি না। বুঝলে অথবা সৎ হলে এ শব্দ ব্যবহার করতেন না। আমরা ভুলে যাইনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ একটি পরিবারকে যেভাবে হত্যা করা হলো, শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান, রক্ষা পান শেখ হাসিনার পুত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা জাতিসংঘের অটিজম উপদেষ্টা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত এ হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি, বরং বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম নেপথ্য নায়ক মিলিটারি স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়ার মতোই খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। জিয়ার নেপথ্য ভূমিকার কথা খুনী কর্নেল ফারুক, বিচারে যার ফাঁসি হয়েছে, ব্যাংককে এক টিভি সাক্ষাতকারে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া কেনা জানে জিয়া মোশতাকের সহযোগী ছিলেন এবং খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে বড় বড় চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াও তাদের তোষণ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বঙ্গবন্ধু পরিবারের নৃশংস হত্যা দিবস ১৫ আগস্ট নিজের ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে বৃহদাকার কেক কেটে যা যা করেছেন তাকে জন্মদিন পালনও বলে না, বলে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। আমরা জানি, এমনকি বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকগণ জানেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার ঋণও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে না গিয়ে মুক্ত অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করেছেন। জিয়াউর রহমান ভারত থেকে ফিরে এসে বেগম জিয়াকে ঘরে ঢুকতে দেননি। তিনি তখন সন্তানের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসভবনে (যা আজ জাদুঘর) আসেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে তাকে ঘরে নেন এবং শেখ হাসিনার শাড়ি হাতে দিয়ে ওয়াশ রুম দেখিয়ে দেন। সেখানে তিনি খেয়ে-দেয়ে বিশ্রাম নেন। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু ঘরে ফিরলে বেগম মুজিব তাকে অবহিত করেন। বঙ্গবন্ধু তখন জিয়াউর রহমানকে ডেকে পাঠান। জিয়াও সুযোগ নেন। বাংলাদেশ আর্মিতে ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ পদ সৃষ্টির কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু তাতেই রাজি হন এবং সে পদে জিয়াকে পোস্টিং দেন। এরপর এক পাশে বঙ্গবন্ধু অপর পাশে বঙ্গমাতা, মাঝখানে বেগম জিয়াকে নিজের ‘কন্যা’ বলে জিয়ার হাতে তুলে দেন। খালেদা জিয়ার ঘর টিকে যায়। তারপরও বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানীদের প্রতি এতই কৃতজ্ঞ যে, একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী জেনারেল জানজুয়া মারা গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সকল কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও প্রটোকল ভঙ্গ করে শোক জানিয়ে পাকিস্তানে বার্তা পাঠান। প্রশ্ন করতে হয়, এসব ‘ক্ষমা’ না প্রতিহিংসা? বরং এসবের জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। “হাছিনার গু-াবাহিনী” প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করবেন বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে ‘স’ স্থলে ‘ছ’ উচ্চারণ করেন। অর্থাৎ সম্মান দিয়ে কথা বলেন না। এটি সম্ভবত তার জন্মগত শিক্ষা। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর নামও সম্মান দিয়ে উচ্চারণ করেন না। জনগণের সামনে তিনি ডিগ্রীহীন স্বশিক্ষিত হয়েও নামের আগে ‘ম্যাডাম’ ‘চেয়ারপার্সন’ ইত্যাদি শিক্ষিত লোকের পদবী ব্যবহার করেন, যা তিনি নন। এই অসত্য পরিচয়ের জন্যে তার নিজেরই ক্ষমা চাওয়া উচিত। “সংযম ও সহিষ্ণুতা” বেগম খালেদা জিয়া ‘সংযম ও সহিষ্ণুতা’র কথা বলেছেন। বলেছেন ‘আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না।’ এটি সম্পূর্ণ অসত্য কথা। খুব আগের কথা নয়, ২০১৪-এর আগে পরে ৯+৩=১২ মাস পেট্রোলবোমা মেরে বাস, রিক্সা, অটোরিক্সা, ট্রেন, লঞ্চ, কারযাত্রী, পথচারী হত্যা, এমনকি গরুবাহী ট্রাকে পেট্রোলবোমা মেরে নিরীহ গরু পর্যন্ত মারা হয়েছে। ২০১৩-তে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে দলীয় কর্মী-ক্যাডার পাঠিয়ে এক সঙ্গে মহানগরের বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ ব্যস্ততম এলাকা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করা হয় এবং পবিত্র কোরান-হাদিসসহ বায়তুল মোকররমের বই মার্কেট পোড়ানো হয়। এসব কি সহিংসতার রাজনীতি না করা, এগুলো কি সংযম, সহিষ্ণুতা? এই মিথ্যা কথা বলার জন্যে তার নিজেরই ক্ষমা চাওয়া উচিত। “আপনাদের মানুষ বানাবার চেষ্টা করব” বেগম জিয়া বলেছেন, (ক্ষমতায় গেলে) আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করবেন, মানুষ বানাবার চেষ্টা করবেন। এ কথা একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে ‘ভূতের মুখে রাম নাম’! কে কাকে শুদ্ধ করে? হাসি পাচ্ছে শুনে। এসব কথা বলার আগে নিজের জীবনযাপন, পরিবারের জীবনযাপনের দিকে তাকানো উচিত ছিল। দলের ও দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল-যুবদলের উদারণ নাইবা দিলাম। তার সন্তানদের কথা এড়িয়ে যাব কি করে? তারেক রহমান ও তার পরিবার, অপর প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমানের পরিবার কোথায়, কেন, কীভাবে বিদেশে পশ-লাইফ লিড করছেন? কাজেই অপরকে মানুষ বানানোর কথা তার সত্যের অপলাপ। আবার সেই প্রবাদ- “আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও”। কাজেই তিনি যা বলেছেন সব অসত্য, ভিত্তিহীন। এজন্যে তার নিজেরই ক্ষমা চাওয়া উচিত। “আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে” বেগম জিয়ার রাজনীতিই হলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলতে হবে তাই বলা। এটি তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন না। করবেনইবা কীভাবে? ১৯৯৬ সালে যখন তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন তখন ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল, এমনকি ২০০৬ সালে যখন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তখনও একই পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি ছিল; বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২০০ মেগাওয়াট, জিডিপি ৫-+ আর আজ দেশ খাদ্য উদ্বৃত্ত, উৎপাদন ৪ কোটি টন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট, জিডিপি ৭+, এবার ৭.১০ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ছিল ২০০৬-এ সাড়ে ৫শ’ ডলার আর এখন ১৬০২ মার্কিন ডলার। নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামে ফ্ল্রাইওভারের জাল বিছানো, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ...এমনি শত শত উদাহরণ দিতে পারব। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারতের সঙ্গে স্থল চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি, ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জলসীমা আদালতে মামলা করে বিশাল সমুদ্র অঞ্চল অর্জন; রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ‘গড়ঃযবৎ ড়ভ যঁসধহরঃু’, দঝঃধৎ ড়ভ ঃযব বধংঃ’ অনেক সম্মানের অবিধার সঙ্গে এই সম্মান যোগ হওয়া, সর্বোপরি বহির্বিশ্বের ঈর্ষান্বিত চোখ তোয়াক্কা না করে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে করতে এগিয়ে যাওয়া, এসব কি দেশ ধ্বংস করা? বেগম জিয়াও তো তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কি করেছেন? তবে হ্যাঁ, ছেলেকে দিয়ে হাওয়া ভবন বানিয়েছেন এবং সেখানে বসে টাকা বানিয়েছেন, মুফতি হান্নান-বাবর-পিন্টুরা মিলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যে গ্রেনেড হামলা করেছে। এসব কি অস্বীকার করতে পারবেন? কাজেই আপনারই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। “জাতীয় ঐক্যের ডাক” আপনার জাতীয় ঐক্যের ডাক জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের মতোই। জিয়া ক্ষমতায় বসে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামকে রাজনীতিতে আনেন ও পুনর্বাসিত করেন। খালেদা জিয়া জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা ও মন্ত্রীর সিল মেরে দেন। এটা কি জাতীয় ঐক্য? এজন্যে বেগম জিয়ার নিজেরই ক্ষমা চাওয়া উচিত। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করবেন। তার এই বক্তব্যের জবাবে বলতে চাই- তাদের শুদ্ধি অভিযান আমরা দেখেছি ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। সেসময় তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধে কিভাবে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল, কিভাবে মানুষকে হত্যা করেছিল, কিভাবে মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ছিল, কিভাবে সংখ্যালঘু নারীদের ধর্ষণ করেছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টতো আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন ও জনবহুল দলকে নেতৃত্ব শূণ্য করতে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলায় কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪জন নিহত হয়, স্প্রিন্টারবিদ্ধ হয় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। আমরা ভুলে যাইনি, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর কিভাবে পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল, আন্দোলনের নামে দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছিল- সেই তাদের কাছেই আওয়ামীলীগকে ‘শুদ্ধ’ হওয়ার শিক্ষা নিতে হবে? আসলে বেগম জিয়ার নিজেরই শুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তেমনি তার দলের লোকদেরও মানুষ করার দায়িত্ব নেয়া দরকার। ঢাকা ॥ ১৬ নবেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×