ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুয়াডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ॥ দুই চরমপন্থী নেতার ফাঁসি কার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

চুয়াডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ॥ দুই চরমপন্থী নেতার ফাঁসি কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যা মামলায় ২ আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত পৌনে ১২টায় তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড- কার্যকর করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার কামাল হোসেন, জেলার আবু তালেব, যশোর জেলা ও পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে সকালে আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর পরিবারে ৩৫ জন সদস্য তাদের সঙ্গে কারাগারে গিয়ে দেখা করে। ফাঁসি কার্যকর করার পর রাতেই লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রওনা হন। আদালত ও পুলিশ সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেঝো ছেলে মনোয়ার হোসেন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। কৃতি খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলেও তিনি হা-ডু-ডু খেলেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে তাকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থী তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১ যুগ পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে গোলাম রসুল ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডা দেশ দেয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ২ জন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দ-াদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হলো। এদিকে, নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২ আসামির ফাঁসির বিষয়টি কয়েক দিন পূর্বে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছিলেন। তবে কবে ও কখন ফাঁসি কার্যকর করা হবে তা জানানো হয়নি। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের বিশেষ শাখা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে অবগত করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঝড়ুর লাশ গ্রহণ করবেন তার ছেলে তরিকুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন। আর মোকিমের লাশ গ্রহণ করবেন তার ছেলে মখলেছ আলী। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করেন। অন্যদিকে, দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নিহতের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, এক সময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আল্লাহ’র কাছে হাজার শোকর। খুনী ২ জনের ফাঁসি হচ্ছে। এখন খুনীর আত্মীয়দের কান্নার পালা। নিহত মুক্তিযোদ্ধার মেঝো ছেলে ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার নিরাপরাধ পিতার হত্যার বিচার চেয়ে চারমপন্থীদের হুমকি সহ্য করেছি। পিতার হত্যার বিচার পেয়েছি। আমরা খুশি। হত্যা মামলার বাদি মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, এক সঙ্গে ২ ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভাইকে হারিয়ে নিরবে কেঁদেছি। দেরিতে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভাল লাগছে।
×