ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান নবান্ন উৎসবের কথাই আগে বলতে হবে। অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে যথারীতি মেতেছিল শহর ঢাকা। শহর ঢাকা বলতে, গোটা শহর নয়। শেকড়ের সংস্কৃতির প্রতি টান আছে এমন মানুষেরা প্রাণের টানে ছুটে এসেছিলেন চারুকলার বকুলতলায়। চমৎকার খোলা পরিবেশে এখানে আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসবের। বুধবার সকালে শুরু হয়ে উৎসব চলে রাত পর্যন্ত। গান কবিতা নাচসহ লোক আঙ্গিকের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পীরা। ঢাকার বিভিন্ন দল ও খ্যাতিমান শিল্পীরা তাদের পরিবেশনায় নবান্ন উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেন। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন চালের রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব নবান্ন নামে পরিচিত। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এ উৎসব শুরু হয়। ইতিহাস বলে, হাজার হাজার বছর আগে কৃষি প্রথা চালু হওয়ার পর থেকেই নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। তখন থেকেই ঘরে ফসল তোলার আনন্দে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন সেগুলোর অন্যতম। বহু বছর ধরে শহর ঢাকায় উৎসবটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন। বাংলার ঢোলে স্বাগত জানানো হয় আগতদের। পরে লোক ঐতিহ্যের নানা আয়োজন নিয়ে মঞ্চে ছিলেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শিল্পীরা। মানিকগঞ্জের চানমিয়া ও তার দলের লাঠিখেলা ঢাকার দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে। দারুণ উপভোগ্য ছিল নড়াইলের পটগান। নেত্রকোনা থেকে এসেছিলেন দিলু বয়াতি ও তার দল। তাদের ‘মহুয়ার পালা’ ছিল উৎসবের বড় আকর্ষণ। মুড়ি-মোয়া-বাতাসা-পিঠাপুলিও বাদ যায়নি। মঞ্চের পেছনের অংশে রীতিমতো চুলো বসানো হয়েছিল। মাটির চুলোয় খড়ি ঠেলে দিয়ে সুন্দর আগুন। তাতেই তৈরি হচ্ছিল পিঠা। গরমাগরম খাচ্ছিলেন সবাই। মায়ের হাতের বানানো নয় বটে। সেই স্মৃতি ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছে! বার্গার পিৎজা সেন্ডউইচ হটডগের বিপরীতে নানাবাড়ির উঠোনে বসে পিঠে খাওয়ার ফেলে আসা দিন। যারা কল্পনায় এত দূর যেতে পেরেছেন, তাদের মন খারাপ হবে। কেউ কেউ নিশ্চয়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। তবে তার চেয়েও জরুরী, নিজের সন্তানদের নিজস্ব সংস্কৃতির ধারণাটুকু দেয়া। আমার কী, কেন আমার, কীভাবে আমার, আগামী প্রজন্মকে জানতে হবে। বিশ্ব নাগরিক তারা হবে। তার আগে নিজের কৃষ্টি জানা চাই। পিতা মাতা অভিভাবকদের উচিত এ কাজে তাদের সাহায়তা করা। আমরা কি তা করেছি? করছি? অগ্রহায়ণ শুরু হলো বটে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। মাসের একেবারে প্রথম দিনেই ভেসে গেছে রাজধানী শহরের পথ ঘাট। বুধবারের বৃষ্টিতে ছন্দ ছিল না। রোম্যান্টিকতা ছিল না কোন। কিংবা রোম্যান্টিকতা খোঁজার চেষ্টা কেউ করেননি। কারণ অসময়ের বৃষ্টি দুর্ভোগ বাড়িয়েছিল শুধু। ঢাকার রাস্তাঘাটে গত কয়েকদিনে যে ধুলোবালির স্তর পড়েছিল, বৃষ্টির জলে সেখানে কাঁদা হয়েছে। হাঁটতে হয়েছে খুব সতর্ক পায়ে। ফুটপাথে আবার চলছে টাইলস বসানোর কাজ। অনেকদিন ধরেই কেটে চিরে ফেলে রাখা হয়েছে হাঁটার পথ। বৃষ্টি নামায় সেখানেও জল জমে খাল বিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সোনারগাঁও হোটেলের পাশের ফুটপাথ ধরে হেঁটে আসতে কয়েক দফা মূল সড়কে নামতে হলো। ফুটপাথ নাইলনের রশি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। শহরের অন্য অনেক ফুটপাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে টাইলস। এ অবস্থায় বৃষ্টির নাম আতঙ্ক বৈকি! অবশ্য শীতের যে অনুভূতিটা পাওয়া যাচ্ছে, মন্দ নয়। বেশ লাগছে। রোবট রেস্টুরেন্টের কথায় আসা যাক। ঢাকায় চালু হয়েছে অভিনব এই রেস্টুরেন্ট। আসাদ গেটের কাছে ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টার। সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় চালু হয়েছে বিশেষ রেস্তরাঁটি। দেশে যে প্রথম, বলার অপেক্ষা রাখে না। রেস্তরাঁয় বসে যা খেতে চান অর্ডার করুন। দুটি রোবট প্রস্তুত। খাবার বহন করে নিয়ে আসবে আপনার টেবিলে। রোবট দুটির নির্মাতা প্রকৌশলী ম্যাঙ সোয়াজ ও স্টিভেন শেনের কথা থেকে জানা যায়, প্রতিটি রোবটের ওজন ৩০ কিলোগ্রাম। উচ্চতা ১ দশমিক ৬ মিটার। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, ৮ লাখ টাকা দামের একটি রোবট একনাগাড়ে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। তারা নির্দিষ্ট ট্র্যাক ধরে চলাচল করবে। সামনে বাধা পড়লে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যাবে। অনুরোধ জানাবে তার পথ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। চীনে তৈরি যুগল রোবটের একটি নারী। অন্যটি পুরুষ! বিপরীত লিঙ্গের হলেও অভিন্ন নাম ইয়োইদং। অর্থ করলে দাঁড়ায় চলমান সুখ বা মুভিং হ্যাপিনেস। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রাহিন রাইয়ান নবী জানিয়েছেন, শিশু-কিশোরদের আনন্দ দান তাদের মূল বিবেচনা। তাদের বিনোদনের বিষয়টি মাথায় রেখে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সব বয়সী মানুষ রোবটের সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারবেন। রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপক তানভীরুল হক জানিয়েছেন, শিশুদের জন্য বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এখন। সঙ্গে থাকছে দেশী খাবার। আরও ভাল খবর এই যে, কোন খাবারের দাম পাঁচশ টাকার বেশি নয়।
×