ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার শঙ্কা- ‘আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব কিনা’

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

খালেদা জিয়ার শঙ্কা- ‘আদালতের কাছে  ন্যায়বিচার পাব কিনা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের পঞ্চম দিনে খালেদা জিয়া বলেছেন, শাসক মহলের বেপরোয়া কর্মকা-ে দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ। দেশে বিচার ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। পরে পঞ্চম দিনেও আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় তার আবেদনে বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান ২৩ নবেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাও ওই দিন একই আদালতে শুনানির জন্য উঠবে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর ১১টা ৪৫ মিনিটে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন খালেদা জিয়া। দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে তিনি বক্তব্য দেয়া শেষ করেন। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, আমার আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে- দেশে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ তারা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। কাজেই আদালতের কাছে আমি ন্যায়বিচার পাব কিনা সেই সংশয় নিয়েই এ মামলায় আমাকে জবানবন্দী দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি, প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় এসকে সিনহাকে অসুস্থ ঘোষণা করে ন্যক্কারজনকভাবে জোর করে ছুটিতে এবং দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে দেশে না ফিরে পদত্যাগ করতে তাকে বিশেষ পন্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পছন্দের রায় না দেয়ার কারণে প্রধান বিচারপতির এমন ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সেখানে অন্য বিচারকদের সামনে ন্যায়বিচারের সুযোগ ও পরিবেশ কি আর থাকতে পারে? এই পরিস্থিতিতে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের কতটা আস্থা থাকতে পারে? খালেদা আদালতে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই যে এসব মামলা করা হয়েছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট। তিনি বলেন, সব মামলাই অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে। আমি রাজনীতিতে সক্রিয়, ক্ষমতাসীনরা আমাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে বলেই মামলাগুলো করা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতির মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। বিএনপি নেত্রীর দাবি, ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়েও জনগণকে তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। এসব মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে হেনস্থা করা এবং জনগণের সামনে হেয় করা। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি, হবেও না। বরং এসব করে তারাই জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। খালেদা বলেন, অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মোকদ্দমায় আমি ভীত নই। তবে দেশবাসী এবং আমার আশঙ্কার কারণ অন্য জায়গায়: সেটা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ বিলুপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শাসকদল তাদের অপকর্ম ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সব রকমের কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। সে কারণে অনেকেই বলছেন দেশে সুবিচার ও ন্যায়বিচারের কোন সুযোগ ও পরিবেশ আজ আর নেই। মামলা প্রসঙ্গে খালেদা বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট বা অরফানেজ ট্রাস্টে কোনো পদে আমি ছিলাম না। অনুদানের অর্থ আনা বা বিতরণের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কোন রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ট্রাস্টের কেউ কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। ট্রাস্টের কেউ কোন অনিয়ম বা আইন অমান্য করলে তার ব্যাপারে ট্রাস্ট আইনে অভিযোগ বা মামলা হতে পারে। কিন্তু দুদক কীভাবে ট্রাস্টের কথিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে মামলা করে? এটা কী তাদের আওতা বা এখতিয়ারে পড়ে? তাছাড়া এখানে কোন রকম দুর্নীতিও হয়নি। এই মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তাও আমার বোধগম্য নয়। আদালতে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত জবানবন্দী শোনার আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। পরে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের বাকি বক্তব্য শোনার জন্য ২৩ নবেম্বর দিন ঠিক করে দেন বিচারক।
×