ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হঠকারিতার পথে সৌদি যুবরাজ!

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

হঠকারিতার পথে সৌদি যুবরাজ!

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকান্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘বিন সালমানের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপে মার্কিন স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ বাবা সালমানের নীরব সমর্থনে প্রিন্স মোহাম্মদ এখন আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আলজাজিরা। পেন্টগন, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমান যথেষ্ট বিবেচনা না করেই হঠকারী আচরণ করছেন। তারা যুবরাজের কর্মকান্ডের ভবিষ্যত পরিণতি নিয়েও উদ্বিগ্ন। বত্রিশ বছর বয়সী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সংক্ষেপে এমবিএস নামে পরিচিত। গত জুনে তার বাদশাহ সালমান নিজের উত্তরসূরি হিসেবে তার নাম ঘোষণা করলে ত্বরিতগতিতে তিনি নিজের ক্ষমতা সুসংহত করেন। ৪ নবেম্বর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে সৌদি আরবের কয়েক ডজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান। মন্ত্রিসভার এগারো সদস্য ও রাজ্যের ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ীরাও তার হাতে ধরাশায়ী। একই দিনে রাজধানী রিয়াদে এক সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার অভিযোগ, ইরান ও হিজবুল্লাহ আন্দোলন তার দেশে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। এরপর থেকে হারিরি এখন পর্যন্ত দেশে ফিরে আসেনি। তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সৌদি আরব আটক রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লেবানন সরকার। হিজবুল্লাহ আন্দোলনের নেতা হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, সাদ হারিরিকে সৌদি আরব পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের মন্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনে ঐক্যের অভাবই প্রতিফলিত হয়। কারণ সৌদি আরবে গণ গ্রেফতারের পর টুইটারে ট্রাম্প বলেন, বাদশাহ সালমানের ওপর আমার অগাধ আস্থা আছে। তারা কি করছে, তা তারা জানে। যাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে দোহা উগ্রপন্থাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, এমন অভিযোগে গত ৫ জুন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট প্রতিবেশী কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কাতার জোরালোভাবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। উপসাগরীয় সঙ্কটের অবসানে কাতারের সঙ্গে সংলাপে বসতে মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি গত মাসে আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তবে তিনি এও বলেন, এমবিএসের মধ্যে আলোচনায় বসার কোন জোরালো তৎপরতা নেই। ২০১৫ সালের জুনে এমবিএসকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন বাদশাহ সালমান। এরপরই ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ডিসাইসিভ স্টোর্ম নামের অভিযান শুরু হয়। ইয়েমেনের বড় একটা অংশ হুতি সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের চালিত পথে যায়নি। হুতিরা এখনও ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। সৌদি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত সেখানে দশ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন অসংখ্য। দরিদ্র দেশটির কাঁধে এখন দুর্ভিক্ষ ভর করছে। ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী কলেরা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ব্যবহার করে ইরান সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সৌদি আরব। এদিকে এমবিএস প্রতিশ্রুতি দেন, তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌদি অর্থনীতিকে তিনি টেনে তুলবেন, পরিকল্পিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন ও উগ্রধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করে দেশটিকে উদারপন্থার দিকে নিয়ে যাবেন।
×